আজকাল খবরের কাগজ বা টিভি খুললেই শিশু নির্যাতনের খবর চোখে পড়ে। আমাদের নিজেদের সন্তানকে সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার সময় চলে এসেছে। বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপটে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার দায়ভার বাবা মায়ের উপরই। কারন তার বাইরে কোথায় যে বিকৃত মানসিকতার নানা ছক বুনন চলছে তা আমার আপনার সন্তানের বোঝা সম্ভব নয়।
তাই খেয়াল রাখতে হবে যে শৈশবে যাতে এমন কোনো অনভিপ্রেত নিগ্রহ বা নিপীড়নের ঘটনা না ঘটে যা তাদের ভবিষ্যত ও মানসিক স্বাস্থ্যে আঁচড় কাটতে পারে। এরজন্য তাদের ছোট থেকেই দিন গুড টাচ ও ব্যাড টাচ এর পাঠ।

যে সকল বিষয় নিয়ে সজাগ থাকা দরকার:
- আজকাল অভিভাবকদের গাফিলতি ও কিছু কুরুচিপূর্ণ পিডোফাইলদের জন্য ছোট ছোট শিশুরা প্রতিনিয়ত যৌনলালসার শিকার হচ্ছে।
- এইসব বিকৃতমনস্করা সবসময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে ও অভিসন্ধি আঁটে।
- এরা সবার আড়ালে নিয়ে গিয়ে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানোর চেষ্টা করে।
- উপহার এর লোভ দেখিয়ে সবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে।
খেলাচ্ছলে শিক্ষা দিন:
- গুড টাচ ব্যাড টাচ ব্যাপারটি এতটাই স্পর্শকাতর যেটা ছোট থেকে বোঝানো একটু জটিল। সেই জন্য আপনার শিশু যখন তার প্রিয় কাজ করছে তখন তাকে কাছে টেনে গল্প করার ছলে ওকে বোঝান।
- জড়িয়ে ধরে প্রশ্ন করতে পারেন তার কেমন লাগছে? এবার বলুন যে এটা হলো গুড টাচ। আর তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে অস্বস্তিকর ভাবে কেউ জড়িয়ে ধরলে সেটা ব্যাড টাচ।
- কেউ ঘাড়ে পিঠে বা মাথায় অথবা মুখের অংশে ছুঁলে তাও ব্যাড টাচ হিসেবে পরিগণিত হবে।
গোপনাঙ্গ সম্পর্কে সঠিক ধারণা নির্মাণ:
- শিশুকে পাঁচ বছর বয়স থেকেই তার গোপন অঙ্গ সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিন।
- যে অঙ্গগুলির দ্বারা তারা শৌচকর্ম করে এবং যা প্রকাশ্যে উন্মোচিত হয় না সেগুলোই প্রাইভেট পার্টস এভাবে বোঝান।
- তার অমতে বা জোর করে কেউ এগুলো স্পর্শ করতে পারেনা সেটাও বোঝান ভালো করে।
ইম স্যুট রুল মেনে চলুন:
- শিশুরা ছোটবেলায় সাঁতার শিখেই থাকে। তাদের বোঝান যে সুইমিং কস্টিউম শরীরের যে অংশ আবৃত রাখে সেটা উন্মুক্ত না করতে।
- এতে তারা সহজে বুঝবে ও কেউ যদি তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে নির্যাতন করে তখন আপনাদের এসে জানাবে।
শিশুর অভিযোগ শুনুন:
- হয়তো আপনার শিশু এসে আপনাকে জানালো যে ক্লাসে স্যার তাকে অবাঞ্ছিত ভাবে স্পর্শ করেছে। সেটা হাল্কা ভাবে নিয়ে উড়িয়ে দেবেন না।
- তার অভিযোগ মন দিয়ে শুনুন ও তার অনুভূতির কদর দিন। সব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিন।
চিৎকার করতে শেখান:
- শিশুকে অবহিত করুন যেকোন টাচ যখন তার মনে ভয়ের বা অস্বস্তির জন্ম দেবে সে যেন চিৎকার করে ওঠে।
- এর মাধ্যমে অপরিচিত ব্যক্তির আচরণ থেকে সে সুরক্ষিত থাকবে ও সেই মানুষ ও সাবধান হয়ে এরকম কুরুচিপূর্ণ কাজ করতে দুবার ভাববে।
গুড টাচের গুরুত্ব:
- বাচ্চাকে বোঝান যে সব টাচই খারাপ নয়। অনেকসময় বড়রা ভালোবেসে তাদের কোলে নেন বা ডাক্তারবাবু অসুস্থ হলে পরীক্ষা করেন শরীরে হাত দিয়ে এগুলো গুড টাচ।
- তাই এসব নিয়ে তার কনফিউশন দূর করুন সহজভাবে বোঝান। গম্ভীর হয়ে থাকবেন না ও বাচ্চাদের মারধর বা বকাঝকা একদম নয়।
বিবিধ:
- অপ্রীতিকর আচরণের ক্ষেত্রে যাতে সপাটে না বলতে পারে তার পাঠ দিন।
- সহজভাবে মিশে ওদের মনের গভীরে যাবার চেষ্টা করুন। তাদের উপর অত্যাচার হয়েছে কিনা সেটা জানার চেষ্টা করুন কারণ এসব হলে তাদের এগুলো গোপন রাখতে বলে দুষ্কৃতীরা।
- জীবনশৈলীর শিক্ষায় শিক্ষিত করুন। শারীরিক সচেতনতা গড়ে তুলুন ওদের মধ্যে।
- ওদের আত্মবিশ্বাসী করুন। লজ্জা ও ভয় কাটাতে উৎসাহ প্রদান করুন।
মন্তব্য করুন