ব্লু ক্রস ব্লু শিল্ড এসোসিয়েশন এর নতুন গবেষণা থেকে এক বিস্ময়কর তথ্য উঠে এসেছে যে মিলেনিয়ালদের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের স্বাস্থ্যহানি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। আরো বলা হচ্ছে যে যেসব মিলেনিয়ালদের বয়স ২০১৭ সালে ৩০-৩৪ এর মধ্যে ছিল তারা ২০১৪ সালের জেন এক্স এর ৩৪-৩৬ বছর বয়সীদের থেকে কম স্বাস্থ্যবান।
মিলেনিয়াল কারা?
কিন্তু দাঁড়ান এসব টার্ম শুনে মাথায় তালগোল পাকিয়ে গেল তো? তাহলে জানুন মিলেনিয়াল কারা? আমেরিকার জনগণনা অনুযায়ী বিভিন্ন প্রজন্মের মানুষকে নানাভাগে ভাগ করে এই রকম নিকনেম দেয়া হয়েছে। তাদের চারটি প্রধান ভাগ –
- সাইলেন্ট জেনারেশন(১৯২৮-১৯৪৫): বয়স ৭৩-৯০বছর,
- বেবি বুমার্স(১৯৪৬-১৯৬৪): বয়স ৫৪-৭২ বছর,
- জেনারেশন এক্স (১৯৬৫-১৯৮০): বয়স ৩৮-৫৩বছর,
- মিলেনিয়াল(১৯৮১-১৯৯৬): বয়স ২২-৩৭ বছর,
- পোস্ট মিলেনিয়াল যারা ১৯৯৭ এর পর জন্মেছে।
অর্থাৎ বর্তমান দিনের একবিংশ শতাব্দীর জেন ওয়াই হলো মিলেনিয়াল।

কি কি সমস্যায় জর্জরিত মিলেনিয়াল কুল?
মিলেনিয়ালরা মূলত আচরণগত সমস্যার মুখোমুখি যা তাদের ডিপ্রেশন এবং হাইপারেক্টিভিটি এর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রিপোর্টে তাদের দশরকম ক্ষতিকর প্রভাব এর কথা বলা হয়েছে। যেমন –
- মেজর ডিপ্রেশনের শিকার
- উপদানগত বিশৃঙ্খলা
- এলকোহল প্রবণতা
- হাইপারটেনশন
- হাইপারেক্টিভিটি
- সাইকোটিক অবস্থা
- ক্রোন রোগ
- উচ্চ কোলেস্টেরল
- তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার প্রবনতা
- টাইপ টু ডায়াবেটিস

সমস্যার কারণসমূহ:
ডেবোরা সেরানী এর কিছু উল্লেখ্য কারণ আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন যে ঠিক কি কারণে এরকম আশঙ্কাপূর্ণ বাতাবরণ এর করালগ্রাসে চলে যাচ্ছে আজকের প্রজন্ম।
- টেকস্যাভি হওয়ার কারণে মিলেনিয়ালস দের বেশিরভাগ সময় আধুনিক প্রযুক্তির গ্যাজেট বা ডিভাইস নিয়েই কাটে ফলে সামাজিকতা, মানুষের সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলার সৌজন্য শিষ্টাচার অথবা ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন রপ্ত করার দক্ষতা তারা অর্জন করতে পারেনা।
- বর্তমান সময়ে মিডিয়াতে চব্বিশ ঘন্টা ধরে ঘটে চলা সন্ত্রাসবাদ, বিপর্যয় এগুলি তাদের মধ্যে অসহায়তা, অকারণ ভয় ইত্যাদির জন্ম দিচ্ছে এবং নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে যা আগের প্রজন্ম অব্দি এত মারাত্মক আকার নেয়নি।
- বর্তমান যান্ত্রিক জীবনশৈলী, ইঁদুরদৌড় এর জীবন তাদের ব্যর্থতার সাথে মানিয়ে নেয়ার সমস্যা, অসহিষ্ণুতা এবং ফ্রাস্ট্রেশন ইত্যাদিকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলছে।
- কর্মজীবনে ওয়ার্ক শিডিউলের সঠিক বন্টন না হওয়ার কারণে তারা অবসর বিনোদন পায়না যা তাদের ইমোশনাল রিস্ক ফ্যাক্টরকে ঝুঁকিপূর্ণ করার অবস্থায় নিয়ে গেছে।
কিভাবে সম্ভব সমাধান:

- সার্ভেতে দেখা গেছে এক তৃতীয়াংশ মিলেনিয়ালদের কাছেই প্রাথমিক সেবপ্রদান এর কেউ থাকেনা। ফলে তারা নিজেকে বিচ্ছিন্ন মনে করে।
- নেলসন এর মতে এইরকম ক্ষেত্রে তাদের সেল্ফ কেয়ার ট্রেনিং বা স্বযত্ন কেন্দ্রিক হয়ে উঠতে হবে।
- এটা একপ্রকার অর্জিত শিক্ষা যা তাদের উন্নত খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, শরীরচর্চা সহ দীর্ঘস্থায়ী সমাধানমূলক জীবনযাপন মানের সুরক্ষা প্রদান করবে।
- তাদের রোগের উপসর্গ ও লক্ষণগুলি তাদের নিজেদেরকেই শনাক্ত করতে শিখতে হবে।
মিলেনিয়ালদের বর্তমান জীবনধারার সঠিক রূপরেখা:
- এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে তারা যেন হেলথ কেয়ার এর মাধ্যমে নিজেদের স্বাস্থসমীক্ষার রিপোর্ট এবং টেলিমেডিসিন ইত্যাদি সহজেই পেতে পারে।
- যেহেতু তারা আচরণ গত সমস্যার সন্মুখীন তাও তাদের বিবেচনাগত অধিগমন এর বিষয়টি শরীর ও মন উভয় দিক থেকে বিচার করলে তারা উপকৃত হবেন।
- মিলেনিয়ালসরা বন্ধুভাবাপন্ন পরিবেশে স্বচ্ছন্দ হয় যা তাদের সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক পরিস্থিতি এবং লিঙ্গগত পরিচয় এর সাথে সামঞ্জস্য পূর্ণ। তাদের এরকম পরিবেশে মেলামেশার কাজে উৎসাহিত করতে হবে।
- তাদের কাজের ক্ষেত্র প্রসারিত করতে হবে এবং সমস্যাগুলিকে সরাসরি তুলে ধরতে হবে।
মন্তব্য করুন