অনেকদিন পর মন ছুঁয়ে গেল এই অসাধারণ বিজ্ঞাপনটি। যেখানে সবাই বাস্তবের গণ্ডি পেরিয়ে অবাস্তব বিজ্ঞাপনে মেতে উঠেছে। সেখানে মাত্র ১ মিনিটের একটি ভিডিও তুলে নিয়ে এল এক জ্যান্ত বাস্তবের ছবি।
দীপাবলির সাথে সাথে ধনতেরাস পালিত হয় মহাধুমধাম করে। একটুকরো হলেও সোনার জিনিস কেনার ধুম দেখা যায় সবার মধ্যে।
ধনতেরাসে কেন সোনা?
‘ধন’ শব্দের অর্থ ঐশ্বর্য এবং ‘তেরাস’ কথাটির অর্থ হলো ত্রয়োদশী বা হিন্দু পঞ্জিকার তেরতম দিন।দুয়ে মিলে ধনতেরাস। ভাগ্যদেবীকে স্বাগত জানিয়ে দীপ, রঙ্গোলি, উপহার মিলিয়ে খুশির রোশনাই এর দ্যোতক। তথাকথিত ভাবে অবাঙালিদের মধ্যে এইসময় সোনার গহনা বা মূল্যবান ধাতু ক্রয় করবার চল আছে। প্রথাগত বিশ্বাস অনুযায়ী এই সময় বাড়িতে লক্ষ্মীর অধিষ্ঠান হয় এবং তাঁর কৃপা ও আশীর্বাদ সংসারে পরে। বর্তমানে অবশ্য বাঙালিদের মধ্যেও এটি যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
যে বিজ্ঞাপনটি নিয়ে কথা শুরু হয়ে ছিল তা আগে দেখে নেওয়া যাক
সোনা না বরং লোহা দিন আপনার সোনার মেয়েকে
- তবে “প্রজেক্ট শ্রীধন” এখানেই আমাদের গতানুগতিক উৎসবকেন্দ্রিক ভাবনার দিগন্তটাকে আর একটু প্রসারিত করেছে। বাৎসরিক পরম্পরায় চলে আসা সোনা, রূপোতে বিনিয়োগের প্রাচীন ঐতিহ্যের সাথে মেলবন্ধন ঘটিয়েছে এক গূঢ় সামাজিক সত্যের।
- ডাচ স্টেট মাইন একটি বহুজাতিক ফার্ম যারা তাদের প্রজেক্ট শ্রীধন উদ্যোগের দ্বারা ভারতীয় মহিলাদের কাছে একটি সনির্বন্ধ অনুরোধ রেখেছে যে তারা যেন এই ধনতেরাস এর উৎসবে সোনার সাথে সাথে লোহাতেও বিনিয়োগ করেন অর্থাৎ রক্তে অবস্থানকারী লোহিত কণিকার দিকে দৃষ্টি দেন।
- কারণ, ভারতবর্ষে দুজন মহিলার মধ্যে একজন অ্যানিমিয়া আক্রান্ত হন। তাই বলাই যায় যে সিলভার স্ক্রিনে আয়রন ম্যান দেখা গেলেও বাস্তবে আয়রন ওম্যান এর কল্পনা নৈব নৈব চ।
সোশ্যাল মিডিয়াতে হ্যাশট্যাগ ইনভেস্টইনআয়রন
- প্রজেক্ট শ্রীধন সোশ্যাল মিডিয়াতে হ্যাশট্যাগ ইনভেস্টইনআয়রন ( #InvestInIron) নামে মহিলাদের সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করে চলেছে। ইউটিউবে ও একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে যার ভিউ সংখ্যা ইতিমধ্যে ১মিলিয়ন ছুঁই ছুঁই।
- মহিলাদের অ্যানিমিয়া সংক্রান্ত সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করতে বিদ্যা বালান ও তার ইন্সটাগ্রামে খেজুর খাবার ছবি পোস্ট করে রক্তাল্পতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বার্তা দিয়েছেন।
অ্যানিমিয়া সম্পর্কে কেন সচেতন হওয়া উচিত?
- সমগ্র বিশ্বে অ্যানিমিয়ার কোপে আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে ভারত রয়েছে শীর্ষ স্থানে।
- আরো আশ্চর্যের বিষয় যে শহরাঞ্চলে মহিলাদের ৫০% এর বেশি অ্যানিমিয়া প্রবন।
- এই তথ্য সবাইকেই হতবাক করছে বেশি করে, কারণ শহরাঞ্চলের মহিলারা বেশি করে প্রচারাভিযান, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সুযোগ সুবিধার সংস্পর্শে রয়েছেন। তাও কেন এত বড় পরিসংখ্যান।
- বিগত অর্ধেক শতাব্দী জুড়েই রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার সমস্যা মহিলাদের জেরবার করে আসছে।
- লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিক এর চাইতে কম উপস্থিতি রক্তে অক্সিজেন এর ঘাটতি তৈরি করছে।
- মহিলাদের ক্ষেত্রে WHO এর রিপোর্ট অনুযায়ী হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১২গ্রাম/ডেসিলিটার এর ও কম। মূলত শরীরে প্রয়োজনীয় আয়রনের অনুপস্থিতি ডেকে নিয়ে আসে এই অ্যানিমিয়া।
- অ্যানিমিয়া নানা প্রকার যেমন ব্লাডলস, পার্নিসিআস ইত্যাদি থাকলেও মেয়েদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঘাতক হিসেবে থাবা বসিয়েছে আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া।
- ন্যাশনাল নিউট্রিসনাল অ্যানিমিয়া কন্ট্রোল প্রোগ্রাম এর মত দেশে বড়ো উদ্যোগ নেয়া হলেও তা মহিলাদের মধ্যে বিশেষত যুবতীদের মধ্যে ফলিক অ্যাসিড ও আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণের সচেতনতাকে সেভাবে সাড়া জাগিয়ে প্রচার করতে পারেনি।
অ্যানিমিয়ার লক্ষণ কি কি?
- অ্যানিমিয়ার স্বাভাবিক কয়েকটি লক্ষণ হলো ক্লান্তি ভাব, মাথা যন্ত্রনা, দুর্বল ভাব ও হৃদস্পন্দন এর অনিয়মিত গতি ইত্যাদি। এইসব লক্ষণ যদি চোখ পড়ে তবে অবশ্য চিকিৎসক এর নির্দেশনা নিন।
- মহিলাদের পিরিয়ডের সময় রক্তপাত বেশি হলে, বা গর্ভাবস্থায়, ভিটামিন গত সমস্যা, বংশগত, অপুষ্টি, কিডনি সংক্রান্ত বা আলসার ইত্যাদি সমস্যার কারণে রক্তাল্পতার উপসর্গ ধরা পড়ে।
অ্যানিমিয়া রুখতে কি কি করনীয়?
- মেয়ে শিশুদের মধ্যে ৬-৫৯মাস বয়েস অব্দি ৯৫.৪% এর ক্ষেত্রে দেখা গেছে তারা ঠিক মতো আয়রন সাপ্লিমেন্ট নিচ্ছে না। তাই শুরুতেই ডাক্তারের পরামর্শ নিন সাথে সাথে মেনে চলুন প্রাত্যহিক জীবনে কয়েকটি জিনিস যা আপনাকে সাহায্য করবে।
- সকাল ও বিকাল এর পাওয়ার ডায়েটে ফল হিসেবে রাখুন- খেজুর, ডালিম, তরমুজ যা আপনাকে করে তুলবে চনমনে ও ভিটামিন সমৃদ্ধ।
- লাল বা সবুজ শাকসবজি যেমন – টমেটো, লাল শাক, পালং শাক, কুলেখাড়া এগুলো খেতে পারেন যা আপনাকে ফাইবার এর যোগান দেবে ও মজবুত করবে আপনার বোন ডেন্সিটি।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল – লেবু, মৌসম্বি, ইত্যাদি খান। বিট গাজর মাশরুম ইত্যাদির সুপ খেতে পারেন তাতে আয়রন, কোপার, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম খনিজের চাহিদা পূর্ণ হবে।
ভিডিও দেখে ও এতক্ষণের বিস্তারিত এই লেখায় নিশ্চয়ই এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে, সোনার চেয়েও বেশি মূল্যবান আয়রন বা লোহা। যা ঘরের মেয়েকে সোনার মেয়ে করে তুলতে সবচেয়ে আগে প্রয়োজন। আর যদি ধাতু সোনার কথা বলি তাহলে আমাদের সোনার মেয়ের চেয়ে মূল্যবান কোন সম্পদ নেই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে!
মন্তব্য করুন