অনেককাল ধরেই চলে আসছে এই প্রথা বাঁকুড়া জগড়াই মাড়ো গ্রামে। গ্রামটি বাঁকুড়া জয়পুর ব্লকের অন্তর্ভুক্ত। আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে মল্লরাজা রঘুনাথ সিংহের আমল থেকে চলছে এই বিচিত্র প্রথা। বিসর্জনের দিন কাদা মাখামাখি করেই তা উদযাপন করেন গোটা গ্রামবাসী।
পুজোর ছুটিতে যদি কখন এরপর বাঁকুড়া যাওয়ার প্ল্যান হয়, তাহলে অবশ্যই দশমীর দিন জগড়াই মাড়ো গ্রামে যেতে ভুলবেন না। গেলে দেখতে পাবেন এই খেলা। গ্রামে ঢোকার সাথে সাথেই চোখে পরবে প্রাচীন মন্দির। যেখানে ভঞ্জনী রূপে মা দুর্গা পূজিত হন।

কিভাবে শুরু হল এই প্রথা?
প্রচলিত আছে প্রায় সাড়ে পাঁচশো বছর আগে মল্লরাজা রঘুনাথ সিংহ জঙ্গল থেকে উদ্ধার করেন মায়ের এই মূর্তি। তারপর তা প্রতিষ্ঠিত করেন মন্দিরে, চালু হয় ভঞ্জনী রূপে মা দুর্গার পূজা। সারা বছরই মায়ের নিত্যসেবা ও ভোগের আয়োজন চলে প্রতিদিন। হিজলডিহা গ্রামের রায়বক্সিদের দায়িত্ব মন্দিরের দেখাশোনা করার। বিষ্ণুপুরের রাজপরিবারের নিয়ম মেনে এখানে দুর্গা পূজা করা হয় প্রতিবছর।
খেলার প্রচলন
দশমীর দিন কাদা খেলার প্রচলনও মল্লরাজা রঘুনাথ সিংহের সময় থেকেই চলে আসছে। প্রচলিত আছে যে একদিন মল্লরাজা রঘুনাথ সিংহ জঙ্গলের পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন কোন এক মোকদ্দমা মেটাতে। যাওয়ার সময় তিনি মূর্তির দর্শন পান একটি বট গাছের নিচে। মোকদ্দমা জিতে ফেরার সময় তুমুল ঝড়সহ বৃষ্টির মুখে পড়েন রাজা ও তাঁর লোকজন জঙ্গলের মধ্যে। আশ্রয় নেন বট গাছের নিচে ও দেবীর আরাধনা শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। দেবীর দর্শন পান মল্লরাজা স্বয়ং। মন্দিরে দেবী মূর্তির প্রতিষ্ঠা করেন ও দশমীর দিন কাদা মেখে বিসর্জনের প্রথা চালু হয় সেই থেকে। বিচিত্র এই খেলার সঠিক কোন কারন না থাকলেও বছরের পর বছর মানুষ নিষ্ঠার সাথে মেনে আসছেন এই প্রথা।
খেলার নিয়ম
মন্দির সংলগ্ন এলাকার নবমীর দিন থেকে সাত পুকুরের জল এনে জমানো হয়। দশমীর সকাল থেকে শুরু হয়ে যায় কাদা ও জলের খেলা। চলে সারাদিন ধরে। গোটা গ্রামবাসী মেতে ওঠেন এই খেলায়। বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা বার্তা এভাবেই একে অপরকে জানান গ্রামের লোকজন।
https://dusbus.com/bn/pujor-por-mon-kharap-mon-valo-korar-5-ti-tips/ |
মন্তব্য করুন