আমাদের বাঙালি ঘরে যে কয়েকটা ব্রত নিয়ম করে পালন করা হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম হল সোমবারের শিবের ব্রত। এই ব্রতের আরেকটি বিশেষ তাৎপর্য আছে। ব্রত সাধারণত করেন হচ্ছে বাড়ির মহিলারা। কিন্তু এই শিবের ব্রত পুরুষরাও করে থাকেন। আর দেবতাদের মধ্যে শিবের জনপ্রিয়তা কিন্তু তুঙ্গে, কারণ তিনি ভোলানাথ। অল্পেই তিনি তুষ্ট হয়ে যান।
আজকে তাই আপনাদের জানাবো শিবের ব্রতের মধ্যেও অন্যতম ফলপ্রসূ একটি ব্রতের কথা, আর সেটি হল ষোলো সোমবারের ব্রত। আজকের আর্টিকেল থেকে বিস্তারিত জেনে নিন এই ব্রত শুরু হওয়ার কাহিনী আর এই ব্রত পালন করার নিয়ম।

ব্রতের নেপথ্য কাহিনী
ষোলো সোমবার ব্রত চালু হওয়ার মূলে একটি গল্প প্রচলিত আছে। আসলে সেটি একটি গল্প না বলে গল্পের সম্ভার বলা যায়। একবার নাকি শিব পার্বতীকে নিয়ে ঘুরতে গেছেন মৃত্যুলোকে। সেখানে মৃত্যুপুরীর রাজা তাঁর জন্য সুন্দর একটি প্রাসাদ বানিয়ে রেখেছিলেন এবং শিব-পার্বতী ওখানেই ছিলেন।
এক দিন পার্বতী বললেন, তাঁর পাশা খেলতে ইচ্ছে করছে। পাশা খেলার ব্যবস্থা করা হল। সেই সময়ে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন এক মন্দিরের পুরোহিত। পুরোহিতকে পার্বতী জিজ্ঞাসা করলেন কে জিতবে এই খেলায়। পুরোহিত কিছু না জিজ্ঞাসা করেই উত্তর দিলেন, মহাদের জিতবেন। কিন্তু খেলার শেষে জিতলেন পার্বতী। তখন পার্বতী রেগে গিয়ে মিথ্যা বলার অপরাধে পুরোহিতকে কুষ্ঠ রোগী হওয়ার অভিশাপ দিলেন।
ব্রতের বিস্তার
অনেক দিন পর সেই মন্দিরে কিছু অপ্সরা এলেন আর পুরোহিতের এই অবস্থা দেখে এর কারণ জানতে চাইলেন। পুরোহিত সব বলায় অপ্সরারা তাঁকে ষোলো সোমবারের ব্রত করতে বললেন।
এই প্রথম একজন ষোলো সোমবারের ব্রত শুরু করলেন। ভোলানাথের আশীর্বাদে পুরোহিত সুস্থ হয়ে গেলেন। এই ঘটনা জেনে পার্বতী তো অবাক হয়ে গেলেন। তাঁর দেওয়া অভিশাপ কীভাবে খণ্ডিত হল! তিনি পুরোহিতকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন আর জানলেন ষোলো সোমবারের কথা। সব জেনে পার্বতীও ঠিক করলেন ষোলো সোমবার করার কথা।
এরপর এই ব্রতের কথা পার্বতীর থেকে জানতে পারেন কার্তিক। কার্তিক সেই কথা তাঁর এক ব্রাক্ষ্মণ বন্ধুকে বলেন। ব্রাক্ষ্মণ বন্ধুও তখন এই ব্রত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং নিষ্ঠাভরে পালন করেন। এক সময়ে সেই বন্ধু এক দেশে যান, যেখানে সেই দেশের রাজার কন্যার স্বয়ম্বর হচ্ছিল। স্বয়ম্বরের নিয়ম ছিল, সভায় থাকা হাতি যার গলায় মালা দেবেন তিনিই হবেন রাজার জামাই। হাতি সেই ব্রাক্ষ্মণ সন্তানের গলায় মালা দিল। আর তিনি পেয়ে গেলেন রাজকন্যা আর রাজ্য। তিনি বুঝলেন এই ষোলো সোমবার করার ফল তিনি এভাবে পেলেন। এরপর ফুলশয্যায় তাঁর স্ত্রী তাঁকে যখন জিজ্ঞাসা করলেন যে কেন হাতি তাঁকেই মালা পরালো, তখন তিনি ওই ব্রতের কথা জানালেন। রাজকন্যাও তখন এই ব্রত করলেন আর তাঁর একটি পুত্র সন্তান হল।
এই ভাবেই এই ব্রত লোকের থেকে লোকের মুখে মুখে ঘুরে ঘুরে আজ সবার দ্বারা পালন হয়ে থাকে। সকলে বিশ্বাস নিয়ে, আর নিষ্ঠা ভরে এই ব্রত করেন।
নীচে লেখা রয়েছে কি ভাবে এই ব্রত পালন করবেন। আর এই ভিডিওতে দেখানো হয়েছে স্টেপ বাই স্টেপ
কীভাবে পালন করবেন এই ব্রত
- দেখুন, শিবের ব্রত করতে খুব বেশি উপকরণ লাগে না। অল্পেই তুষ্ট হন মহাদেব। সোমবার করে এটি পালন করতে হয়।
- প্রথমে শিবলিঙ্গ স্থাপন করুন বাড়ির বা ঠাকুর ঘরের উত্তর মুখে।
- একটি পাত্রে বেলপাতা, চাল, ফুল, ধূপ, চন্দন, কর্পূর সব রেখে দিন একসঙ্গে।
- স্নান করে সাদা পোশাক পরে বসতে হবে শিবের পুজোয়। আর সন্ধ্যেবেলা ফের একবার জল ঢেলে তারপর খেতে হবে।
- পারলে এই দিন শিবের অষ্টোত্তর শতনাম পাঠ করুন। দোকানে বই পেয়ে যাবেন।
- এই দিন নুন ছাড়া খাবার খাওয়া উচিৎ। সেক্ষেত্রে ফল বা দুধ জাতীয় খাবার খাওয়াই ভালো।
- আর এই ব্রত শুরু করা উচিৎ শ্রাবণ মাসে। তারপর তা না থামিয়ে ১৬টি সোমবার করা উচিৎ। এতে আপনার মনের ইচ্ছে অবশ্যই পূরণ হবে।
- আপনারা অনেকেই হয়তো ১৬ শুক্রবার পালন করে থাকেন সন্তোষী ব্রত করার জন্য। এবার এই ১৬ সোমবারের ব্রতও করুন। আপনার কষ্ট ভোলানাথের উপরেই ছেড়ে দিন না হয়।
মন্তব্য করুন