সতীর ৫১ পীঠ হিন্দু ধর্মে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই জায়গাগুলি প্রত্যেক হিন্দুর কাছে পরম পবিত্রের জায়গা। এই ৫১ পীঠ কি? এ নিয়ে একটি গল্প আছে। দুর্গাদেবী ছিলেন দক্ষ রাজার কন্যা। দেবী সতী দক্ষ রাজার অমতে মহাদেব শিবকে বিবাহ করেছিলেন। সেই কারণে দক্ষ রাজা এর প্রতিশোধ নেবার উদ্দেশে একটি যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন।
কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে দেবী যথা সন্মান পাননি এবং দক্ষ রাজা মহাদেব শিবকেও অপমান করেছিলেন। কিন্তু দেবী সতী স্বামীর সেই অপমান সহ্য করতে পারেন নি। দেবী সেই যজ্ঞের আগুনে নিজেকেই আহুতি দেন। এর ফলে মহাদেব প্রচণ্ড রেগে গিয়ে সেই যজ্ঞ ভেঙ্গে দেন। এবং সতীর দেহ নিয়ে প্রচণ্ড প্রলয় নৃত্য করতে থাকেন।
এদিকে ভগবান বিষ্ণু পৃথিবী ধ্বংস হবার ভয়ে সেই প্রলয় থামাতে, সুদর্শন চক্র পাঠিয়ে দেন। দেবীর দেহ ৫১টি খণ্ডে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় পরে। এই সব কটি জায়গাকে ৫১ সতীপীঠ বলা হয়।
বিভিন্ন জায়গা জুড়ে রয়েছে এই ৫১ পীঠ। ভারতবর্ষ সহ বাংলাদেশ, পাকিস্থান, শ্রীলঙ্কা এর মধ্যেই ৫১টি পীঠ অবস্থিত। তার মধ্যে কয়েকটি পীঠ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আজ ৭টি সতী পীঠ নিয়ে লেখা হল।
১. তারাপীঠ মন্দির
সতীর ৫১ পিঠের একটি পীঠ। বীরভূম জেলার রামপুরহাটে এটি অবস্থিত। দেবীর দেহ ৫১টি খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যখন বিভিন্ন জায়গায় পরেছিল তখন, দেবীর দেহাংশের একটি অংশ এখানে পড়েছিল। সেটি হল নয়ন তারা। এখানকার বশিষ্ঠ নামে এক ঋষি সেটি দেখতে পেয়েছিলেন এবং তারপর থেকেই এখানে দেবীকে তারা নামে পূজা করা হয়। হিন্দুদের কাছে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পীঠ। এটি হল সিদ্ধপীঠ। অর্থাৎ এখানে অনেকে বিভিন্ন বিষয়ে সাধনা করেন।
২. ক্ষীরগ্রাম
৫১ সতীপীঠের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পীঠ হল বর্ধমানের এই ক্ষীরগ্রাম। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এখানে সতীর বিভিন্ন দেহখণ্ডের মধ্যে, দেবীর দক্ষিণ চরনের অঙ্গুলি পরে। তাই এটিও একটি অন্যতম পীঠস্থান। দেবীকে এখানে যোগ্যদা রুপে পূজা করা হয়।
৩. কামাখ্যা
৫১ সতীপীঠের মধ্যে কামাখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সতীপীঠ। আসামের রাজধানী গৌহাটির কাছে এই পীঠ। বিভিন্ন তন্ত্র শাস্ত্রগুলিতে এই পীঠের বর্ণনা পাওয়া যায়। এই স্থানে দেবীর যোনিদেশ পতিত হয়েছিল। এই স্থানে তাই দেবীর নাম কামাখ্যা। এটি নীল পর্বতে পতিত হয়। শোনা যায় দেবীর যোনিদেশ যখন এখানে পতিত হয়েছিল তখন এটি নীল বর্ণ ধারন করেছিল তাই ওই পর্বতের নাম নীল পর্বত।
৪. কালীঘাট
কালীঘাট ৫১ সতীপীঠের একটি অন্যতম একটি সতীপীঠ। এটি হিন্দুদের একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র। শোনা যায়, এখানে দেবীর ডান পায়ের আঙ্গুল পরেছিল। এখানে দেবী দক্ষিণাকালি নামে পরিচিত। এটি কলকাতার বহু প্রাচীন একটি মন্দির। প্রচুর মানুষ এখানে আসেন পূজো দিতে।
৫. হিংলাজ
হিংলাজ পাকিস্তানের বালুচিস্তানের মারকান নামক মরুভূমিতে অবস্থিত। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতীপীঠ। এখানে সতীর মস্তিষ্ক পতিত হয়েছিল। এখানে দেবীর নাম হিংলাজ। এটি মূলত একটি গুহার মধ্যে একটি মন্দির।
৬. ভৈরব পাহাড়
ভৈরব পাহাড় মধ্যপ্রদেশের অবন্তী নগরে অবস্থিত। এখানে দেবীর ওষ্ঠ পড়েছিল। এবং এখানে দেবী অবন্তি নামে পরিচিত।
৭. নলহাটি
নলহাটি বীরভূম জেলায় অবস্থিত। এটিও ৫১ সতীপীঠের একটি পীঠ। এখানে দেবীর কোন অংশটি পড়েছিল তা নিয়ে বেশ মত বিরোধ আছে। অনেকে বলেন এখানে দেবীর কণ্ঠনলা পড়েছিল। আবার অনেকে বলেন এখানে দেবীর বাম হাতের কনুইয়ের হাড় পড়েছিল। এখানে দেবী নলাটেশ্বরি নামে পরিচিত।
৫১টি সতীপীঠের মাত্র কয়েকটি সম্পর্কে আজ লিখলাম। আশাকরি আপনাদের না জানা অনেক কথা আপনারা জানতে পারলেন। বাকি আড্ডা নিয়ে নতুন স্বাদে অন্য একদিন আবার হাজির হব। ততক্ষণের জন্য বিদায়। জয় মা তারা।
মন্তব্য করুন