মুখের ত্বক ভালো রাখার জন্য ফেসিয়াল করা যতোটা জরুরি, তার চাইতেও বেশি জরুরি ফেসিয়ালের পরে ত্বকের ঠিকঠাক যত্ন নেয়া৷ বাড়িতে বা পার্লারে ফেসিয়াল করার পরেও অনেকে ত্বকের সমস্যায় ভোগেন শুধুমাত্র ফেসিয়ালের পরে করণীয় কাজগুলো না জানার কারণে।
মুখে ফেসিয়াল করার পর যে ৫টি জিনিস ভুলেও করবেন না সেসব নিয়ে থাকছে বিস্তারিত আজকের আর্টিকেলে। জেনে নিন ফেসিয়ালের পরে ত্বকের যত্ন কি করে করতে হয়।
১. সূর্যের আলোর নিচে যাওয়া
ফেসিয়ালের পরে সূর্যের আলোর নিচে যাওয়া – এই কাজটি আমরা কমবেশি সবাই করে থাকি। ফেসিয়াল ত্বককে সেনসিটিভ করে তোলে, এই অবস্থায় সূর্যের ক্ষতিকারক অতি বেগুনি রশ্মি ত্বককে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত করে। কারণ ফেসিয়ালের সময়ে মুখে এমন কিছু প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয় যা রোদের তাপে পুড়ে যায়। আর তা স্কিনকে গভীর থেকে ড্যামেজ করে ফেলে।
তাই ফেসিয়াল-পরবর্তী সময়টায় রোদে বের হওয়ার চেষ্টা যতো কম করবেন ততো স্কিনের মঙ্গল। সম্ভব হলে ফেসিয়ালের পরে তিন-চারদিন দিনের বেলা একদমই ঘর থেকে বের হবেন না। তিনদিনের পরে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন মেখে নিবেন, এসপিএফের মাত্রা থাকতে হবে সর্বনিম্ন ৩০ বা তার বেশি। সাথে আরো থাকতে হবে সানগ্লাস এবং ছাতা। ভালো হয় যদি সানস্ক্রিন মাখার ১০-১৫ মিনিট পরে ঘর থেকে বের হন।
২. মেকআপ করা
কোন উৎসব বা অনুষ্ঠান সামনে রেখে মুখে ফেসিয়াল করেছেন এরকম অনেক মহিলা খুঁজে পাওয়া যাবে। আর ফেসিয়ালের পরপরই অনুষ্ঠানের জন্য মেকআপ করাটা আরেকটি বড় ভুল। আগেই বলেছি ফেসিয়াল ত্বককে সেনসিটিভ বানায়।
আর সংবেদনশীল ত্বকে মেকআপ করলে কি অবস্থাটা হবে ভাবুন একবার। প্রসাধনী সামগ্রীতে কৃত্রিম রং ও সুগন্ধি দেয়া থাকে যা ত্বকে চুলকানি ও প্রদাহের সৃষ্টি করবে। অনেক সময় ফেসিয়ালের পরে ত্বকে লালচে ছোপ দেখা যায়। সেই দাগ ঢাকার জন্য কনসিলার বা ফাউন্ডেশনের ব্যবহারও সমান ক্ষতিকর।
তাই বলি কি, প্রোগ্রামের অন্তত দুই-তিনদিন আগে ফেসিয়াল করে ফেলবেন। তাহলে ত্বক বিশ্রামের সুযোগ পাবে, মেকআপটাও চেহারায় ভালো বসবে, আর ত্বকেরও ক্ষতি হবে না৷ আর হ্যাঁ, মেকআপ করার পূর্বে অবশ্যই ব্রাশ এবং স্পঞ্জ ভালো করে পরিষ্কার করে নিন। তাহলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের ঝুঁকি থাকবে না।
৩. মুখে ফেসিয়াল করার পর স্টিম করানো
আপনার পরিকল্পনায় যদি থাকে যে ফেসিয়ালের পরে স্টিম বাথ বা স্পা মাসাজে যাবেন, এখনই ঝেড়ে ফেলুন এই প্ল্যান। ফেসিয়ালের ঠিক পরে স্টিম বাথ নিলে ত্বকে র্যাশ উঠবে। কারণ ফেসিয়ালের সময়ে ত্বকে উজ্জ্বলতা আনার জন্য যথেষ্ট স্টিম প্রয়োগ করা হয়। এতে ত্বকের লোমকূপ খুলে যায়।
ঐ স্টিমের পরে আবার স্টিম বাথ করলে ত্বকের নাজুক রক্তনালি ভেঙে ত্বক আরও লালচে হয়ে যাবে৷ সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতাও কমে যাবে। স্টিম বাথ ছাড়াও গরম কোন জায়গা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই স্টিম বাথ ফেসিয়ালের অন্তত তিনদিন আগে এবং পরে করবেন, এক সপ্তাহ হলে আরও ভালো। আর ফেসিয়ালের পরে গরম কোন জায়গায় যাবেন না।
৪. ত্বকে মাসাজ বা স্ক্রাবিং করা
ফেসিয়ালের পরে ক্লিনজিং, স্ক্রাবিং, এক্সফোলিয়েটিং, মাসাজিং এসব কাজ থেকে বিরত থাকবেন। কারণ এসব কাজ ত্বকের টিস্যু ছিঁড়ে ফেলবে এবং ত্বকে লাল দাগ ফেলে দিবে। আবার ফেসিয়ালে ত্বকের লোমকূপ খুলে যায়, তখন প্রসাধনী লোমকূপে ঢুকে যেতে পারে। ফেসিয়ালের সময়ে ত্বকে যেটুকু এক্সফোলিয়েটিং ও স্ক্রাবিং করা হয়, তাতেই ত্বকের রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে এবং ত্বক পরিষ্কার হয়।
এরপরে খুব শীগগির ত্বককে এক্সফোলিয়েট করার দরকার নেই। আবার ফেসিয়ালের পরপরে সবজি বা ফলের খোসার মাস্কও ব্যবহার করা একদম উচিত না৷ ফলের খোসার ফেস মাস্কে থাকা আলফা হাইড্রক্সি অ্যাসিড ও ভিটামিন এ ত্বকের চামড়া লাল করে ফেলে।
তাই ফেসিয়ালের পরে তিন-চারদিন ত্বকে কোন তীব্র ক্লিনজার, টোনার, এবং এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করবেন না। আপনার মুখে ব্রণের সমস্যা থাকলে অন্তত পাঁচদিন পর্যন্ত রেটিনল ক্রিম, ফেস পিল, এবং স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ ক্লিনজার ও টোনার ব্যবহার থেকে বিরত থাকবেন।
৫. শরীরচর্চা করা
সুস্বাস্থ্যের জন্য শরীরচর্চা করা খুবই ভালো, তবে ফেসিয়ালের পরপরে শরীরচর্চা করা মানে সমূহ বিপদ ডেকে আনা। জিমে গিয়ে শরীরচর্চা করলে ত্বক গরম হয়ে যায় এবং ঘেমে যায়। যেহেতু গরম পরিবেশ ফেসিয়াল করা ত্বকের জন্য খারাপ, সেহেতু জিম করলে ত্বকে জ্বালাপোড়া অনুভূত হবে। সাঁতার শরীরচর্চা করার আরেকটি ভালো উপায় কিন্তু ত্বকের জন্য ক্ষতিকর।
কারণ সুইমিং পুলের ক্লোরিন পানি ফেসিয়াল করা ত্বকের ক্ষতি করে। সুতরাং ফেসিয়ালের পর এক সপ্তাহ পর্যন্ত সাঁতার নিষিদ্ধ। আর জিম বা ভারী ফিটনেস ওয়ার্কআউট করলে ফেসিয়ালের এক দিন আগে এবং দুই-তিনদিন পরে করবেন। হালকা জগিং বা কার্ডিয়ো চলতে পারে, তবুও সেটা বিউটি এক্সপার্টের পরামর্শ নিয়েই করবেন।
ফেসিয়াল-পরবর্তী বাড়তি সতর্কতা
- অন্তত বারো ঘন্টা পর্যন্ত মুখে পানি লাগাবেন না। বারো ঘন্টা পরে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি এবং মাইল্ড সোপ দিয়ে মুখ ধুতে পারেন। মুখ ধোয়ার সময়ে ত্বক জোরে ঘষবেন না। আর পানিটা যেন গরম না হয়।
- ফেসিয়ালের পর ত্বককে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দেয়ার জন্য কমপক্ষে দুই-তিন ঘন্টা ঘুমানো বাধ্যতামূলক।
- প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করবেন, এতে ফেসিয়ালের সুফল আরো ভালোভাবে পাবেন।
- ফেসিয়ালে যদি ব্লিচ ক্রিম ব্যবহার করা হয়, তাহলে বারো ঘন্টা পর্যন্ত মুখে সাবান বা ফেসওয়াশ ব্যবহার করবেন না। কারণ ব্লিচ ক্রিমের সাথে সাবানের রাসায়নিক সংঘর্ষ হয়ে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া ব্লিচ ক্রিম ত্বককে যেটুকু সাদা করেছে, সাবান ব্যবহারে সেই উজ্জ্বলতা মুখের লোমে ঠিকমতো বসতে পারবে না।
- বারবার মুখে হাত দিবেন না। মুখে হাত দেয়ার প্রয়োজন পড়লে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিবেন। ফেসিয়ালের পরে যদি মুখে ব্রণ উঠে যায়, ভুলেও খুঁটতে যাবেন না। এমনিতেই ব্রণ সেরে যাবে। ব্রণ খুঁটলে সতেজ ত্বকে দাগ গাঢ় হয়ে বসে যাবে।
- মুখের অবাঞ্ছিত লোম দূর করার জন্য যদি ওয়াক্সিং, থ্রেডিং, বা লেজার ট্রিটমেন্ট করাতে চান, হয় সেটা ফেসিয়ালের দুই-তিনদিন আগে করাবেন নয়তো ফেসিয়ালের এক সপ্তাহ পরে করাবেন।
- পার্ল ফেসিয়াল করানোর পরে মুখে ময়েশ্চারাইজারের পরিবর্তে ফেস মিস্ট ব্যবহার করবেন। গোল্ড ফেসিয়াল করালে মেকআপের সময়ে লিকুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন এবং পাউডার-বেইজড মেকআপ এড়িয়ে চলবেন। অ্যান্টি-এজিং ফেসিয়ালের ক্ষেত্রে ত্বকের ধরণ বুঝে নিয়মিত টোনার এবং সিরাম ব্যবহার করবেন।
মন্তব্য করুন