বাইরের রোমাঞ্চ, এডভেঞ্চার বাঙালীকে শীতকালে কাবু করে ফেলে। আর বেড়িয়ে আসার জন্য শীতের মনোরম আবহাওয়াটাও বেশ। একদিকে রয়েছে বিনোদন আর অন্য দিকে নিবিড় মানসিক প্রশান্তি। এই জোড়া টান উপেক্ষা করা বেশ শক্ত। তাছাড়া সারাবছর একঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তির স্বাদ পেতেও শীতে পিকনিক খুব কমন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই শীত এলেই শুরু হয়ে যায় সপরিবার বসে ঘুরতে যাবার গন্তব্যের হাল হদিশের আলোচনা।
সারাবছরই আমাদের মন ঘোরার জন্য ছটফট করলেও শীতকাল এক অদ্ভুত ভালোলাগা নিয়ে হাজির হয়। স্কুল কলেজের ছুটি, ক্রিসমাস, কেক, সান্তা সবকিছুর মিশেলে একটা দুরন্ত ছুটির আমেজ বিরাজ করে। এরকম সময়ে আর যাইহোক ঘরে কম্বলমুড়ি দিয়ে বসে থাকতে নিশ্চই মন চায়না।
ভ্রমণ নিয়ে প্রস্তুতি
- এবারের শীতেও নিশ্চই কোথায় ঘুরতে যাবেন তা নিয়ে অনেকের মনেই জল্পনা কল্পনা রয়েছে।
- অনেকে হয়তো স্থির করে ফেলেছেন ইতিমধ্যে, আবার অনেকে সন্দিহান।
- কিন্তু ভ্রমণ পরিকল্পনার জন্য শুধু জায়গা নির্বাচনই যথেষ্ট নয় বরং তার চেয়ে বেশি করে দরকার ভ্রমণ নিয়ে আগে থেকে প্রস্তুতি।
- তার উপরেই নির্ভর করে আপনার বেড়াতে যাবার অভিজ্ঞতা কতখানি সুখময় হবে।
- এই শীতের মরসুমে আপনার ট্রিপ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এবং সাধ্যের মধ্যে খরচে সম্পন্ন করার কয়েকটি মনোমুগ্ধকর ট্রাভেল ডেস্টিনেশন এর ঠিকানা।
- দীঘা, ডুয়ার্স কিংবা শান্তিনিকেতন ছেড়ে চলুনই না পশ্চিমবঙ্গের বাইরে এই জায়গা গুলোতে। আপনার সফরে এরা যোগ করবে অন্য মাত্রা।
১. গো গোয়া এবারের শীতে
- মূলত বিচ কেন্দ্রিক জনপ্রিয় টুরিস্ট শহর হিসেবেই পরিচিতি পেলেও, বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে গুচ্ছের টুরিস্ট এসে ভিড় করেন। পর্তুগিজ ইতিহাস, স্বচ্ছ নীল জলরাশিতে অবগাহন ও অপার সী ফুড এর প্রাচুর্যের জন্যই এর জনপ্রিয়তা।
- কলকাতা থেকে ফ্লাইটে বা ট্রেনে যেতে পারেন। তবে ট্রেনে যাওয়াই বাজেট ফ্রেন্ডইলি। বেস্ট চয়েস অমরাবতী এক্সপ্রেস তা বাদেও আরো স্লিপার ক্লাস পাবেন।
- মিরামার, বাগা, কোলভা, পানজিম, আঞ্জুনা প্রভৃতি বিচ এরিয়ায় থাকার জায়গার অভাব নেই। বেশ কিছু সরকারি হোটেল ও পাবেন। খরচ ১০০০-৫০০০ পর্যন্ত ভ্যারি করে।
- দ্রষ্টব্য স্থান বলতে নর্থ গোয়ার হ্যান্ডিক্রাফট এমপরিয়াম, কোকোবিচ, ক্যালাঙ্গতে বিচ, রিভার ত্রুজিং ও করতে পারেন চাইলে।
- সাউথ গোয়াতে লৌতেলিম গ্রাম প্রাচীন গোয়ার ঐতিহ্যবাহী। তারপর সান্তা দুর্গা মন্দির, ব্যাসিলিকা চার্চ, সেন্ট কেথেড্রাল চার্চ এর স্বর্ণ ঘন্টা ও দেখতে পারেন।
- খরচ ১৫০০০জনপ্রতি হবে কমপক্ষে।
২. ডেয়ারিং ডেস্টিনেশান দারিংবাড়ি
- যদি কাশ্মীরের জন্য মন হুহু করে তবে দেরি না করে আসুন দারিংবাড়ি।
- পশ্চিমবঙ্গ ওড়িশা সীমান্তেই অবস্থান করছে ওড়িশার কাশ্মীর।
- ওড়িশা গামী অনেক ট্রেনই পেয়ে যাবেন কলকাতা থেকে। তবে অমরাবতী এক্সপ্রেস বেস্ট। গোপালপুর স্টেশন এ নেমে সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে মেঘরাজির মধ্য দিয়ে যাত্রা আপনার নৈসর্গিক চাহিদাকে পূরণ করবে।
- পাইন বনের ভেতরে দুলুরি নদী, কফি বাগান, পার্বত্য ভুমিরূপ আপনাকে আপন করে নেবে।
- সাইট সিনের জন্য গাড়ি বুক করে মন্দসুরু পার্ক, ম্যাগনেটিক ভ্যালি, তপ্তপানি ডিয়ার পার্ক, হারভাঙ্গি জলাধার আপনাকে আহ্বান করবে পরম আতিথেয়তায়।
- এখানের চারিচক এলাকায় অনেক হোটেল রয়েছে থাকার জন্য।
- খরচ জনপ্রতি ১০০০০-১২০০০ টাকা মত।
৩. ভোপালের ভোলেপানে মাতুন এবারের শীতে
- বাঙালী কেবল ভ্রমণ পিপাসুই নয় সে ইতিহাস সন্ধানী ও বটে।
- ভারতীয় সংস্কৃতি স্থাপত্য এর অপরূপ মিল ঘটেছে ভোপাল থেকে মাত্র ৫০ কিমির মধ্যে অবস্থিত সাঁচিস্তূপে।
- সম্রাট অশোকের এ হেন মনোলিথিক রক কারভিং আপনার অজান্তেই আপনাকে ইতিহাসের গভীরে নিয়ে যাবে।
- কাছাকাছি পিপলস মল, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে পরিগণিত ভিমবেটকা গুহা যেখানে পৌরাণিক ভীম ও হিড়িম্বার প্রেমের ছোঁয়া রয়েছে ও গুহামানবদের আঁকা ছবি।
- এছাড়াও রয়েছে ভোজপুরের সোমনাথ মন্দির, ভোপাল লেক, বিদ্যাসাগর সেতু।
- হাওড়া থেকে মুম্বই এক্সপ্রেসে জব্বলপুর তারপর ইন্ডোর এক্সপ্রেসে ভোপাল।
- খরচ হবে জনপ্রতি আনুমানিক ৮০০০-১০০০০ টাকা।
৪. শীতের সিকিম সফর
- শীতের কম সময়ে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে যারা বরফে মোড়া উপত্যকায় গড়াগড়ি খেতে চান তাদের জন্যে আদর্শ জায়গা হলো সিকিম।
- শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার কারে আসতে পারেন গ্যাংটকে। পথে রাংপো চেকপোস্টে পারমিট বানানোর জন্য ভোটার কার্ড, নিজের গাড়ি থাকলে তার কাগজপত্র, ছবি ও ফর্ম সাবমিট করুন।
- হাতে ৮-১০ দিন থাকলে সুবিধে হবে। শীতের পোশাক ক্যারি করা মাস্ট।
- লাচেন, লাচুং,জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে কাঞ্চনজঙ্ঘার নয়নাভিরাম দৃশ্য ও ইউথ্যাং ভ্যালি, ছাঙ্গু লেক, গুরুদাংমার কিছু মিস করবেন না।
- তিস্তার গা ঘেঁষে পাহাড়ি শোভা উপভোগ করতে করতে বুদ্ধিস্ট মনেস্টারি গুলো ও ঘুরে দেখতে পারেন।
- খরচ ১২০০০-১৪০০০ মাথা পিছু।
৫. শীতের জন্নাত সিমলা
- হিমালয় কেন্দ্রিক শহর সিমলা লাহুল ও স্পিটি এই তিনটির কাছাকাছিই অবস্থান করছে।
- যতদূর চোখ যাবে সুউচ্চ গিরিশিখরেরা দাঁড়িয়ে আছেন ঘন সরলবর্গীয় গাছের লাইন ধরে। তার পাশেই ইতিউতি বাড়ির ক্লাস্টার, ওপরে নীল চিকন আকাশ, প্রাণখোলা বিশুদ্ধ বাতাস শরীর ও মনকে এক অন্য অনুভূতি দেবে।
- পরিছন্ন সাজানো গোছানো শহরে বেড়াতে বেড়াতে ম্যালেতে বা রেস্টুরেন্টে ঢুঁ মারতেই পারেন। এর মাঝে আছে চার্চ, ব্রিটিশ আমলে গড়ে ওঠা লাইব্রেরী এবং এর একটু এগোলেই সিমলার কালীবাড়ি। বাঙালীর বিভূঁইতে যেন আর একটি ঘর।
- তবে বাঁদরের প্রকোপ প্রচন্ড তাই বেড়াতে যাবার সামগ্রী সাবধানে রাখবেন। মোবাইল /ক্যামেরা ইত্যাদি।
- এখানেই রয়েছে গ্রীন ভ্যালি। পাহাড়ি পথে ঘোড়া চড়ার থ্রিলিং এক্সসাইটমেন্ট ও নিতে পারেন।
- হোটেল, থাকা, খাওয়া, বেড়ানো সবই সাধ্যের মধ্যে। দিন প্রতি খরচ হবে ১২০০-১৫০০ টাকার এর মধ্যে।
মন্তব্য করুন