আপনি কী এর আগে প্রোটিন ট্রিটমেন্ট সম্বন্ধে শুনেছেন? আপনার চুলের যত্নের জন্য কিন্তু এই প্রোটিন ট্রিটমেন্ট অনবদ্য কাজ করতে পারে। এই ট্রিটমেন্ট যেমন আপনার চুল মজবুত করবে, তেমনই চুলের বৃদ্ধি ঘটাবে। এই ট্রিটমেন্ট করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল অ্যামিনো অ্যাসিড যা চুল ভালো রাখে। আপনার নিশ্চয়ই এই ট্রিটমেন্ট সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করছে? তাহলে আজকের আর্টিকেল ভালো করে পড়ুন।
প্রোটিন ট্রিটমেন্ট কী
আপনার চুলের কী ডগা ফাটা? আপনার চুল কী রুক্ষ্ম হয়ে যাচ্ছে? এই ধরণের সমস্যার জন্য এই প্রোটিন ট্রিটমেন্ট খুবই কার্যকরী। আমাদের চুলের প্রধান উপাদান, কেরাটিন প্রোটিন, ধুলো, রোদ, দূষণ আর রাসায়নিক নানা জিনিসের সংস্পর্শে এসে নষ্ট হয়ে যায়। প্রোটিন ট্রিটমেন্ট আপনার চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখে আর এই সবের প্রভাব থেকে দূরে রাখে। এটা যেন চুলকে কন্ডিশনড করে।
কত ধরণের হয় এই ট্রিটমেন্ট?
এই প্রোটিন ট্রিটমেন্ট নানা রকমের হতে পারে। তবে আজ প্রধান চারটি ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে আপনাদের বলবো।
ক. প্রোটিন প্যাকঃ
খুব হাল্কা রকমের চুলের সমস্যার ক্ষেত্রে এই ট্রিটমেন্ট করা হয়। এটি নিয়মিত ট্রিটমেন্ট হিসেবে করা ভালো। ২ মাস অন্তর অন্তর তো করতেই পারেন।
খ. লাইট ট্রিটমেন্টঃ
এটিও খুব সাধারণ ড্যামেজ হলে করা হয়। এটি মূলত কন্ডিশনিং মাস্ক হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিনের যত্নের জন্য এটি খুবই কার্যকরী।
গ. ডিপ পেনিট্রেটিং ট্রিটমেন্টঃ
আপনার চুল যখন বেশ খানিকটা ক্ষতিগ্রস্থ তখন এই ট্রিটমেন্ট খুব কাজে লাগে। এটি চুলকে ভিতর থেকে ময়েশ্চারাইজড করে। এই ট্রিটমেন্ট প্রত্যেক ২ সপ্তাহে করা উচিৎ।
ঘ. রিকন্সট্রাকটরঃ
আপনার চুল যদি খুব ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে এই ট্রিটমেন্ট হয়। এটি প্রত্যেক ২ সপ্তাহে একবার করে করা উচিৎ।
প্রোটিন ট্রিটমেন্টের উপকারিতা কী কী
প্রোটিন ট্রিটমেন্ট বলতে গেলে আপনার চুলে নতুন প্রাণ আনে। আসুন দেখে নিই কোন কোন দিক থেকে এটি আপনার চুল ভালো রাখে।
ক. চুল নরম রাখে
প্রোটিন ট্রিটমেন্ট স্ক্যাল্প থেকে মরা চামড়া তুলে দেয়। চুলকে নরম করে তোলে এবং চুলে প্রোটিনের জোগান বজায় রাখে।
খ. চুল মজবুত করে
এই ট্রিটমেন্ট হেয়ার ফলিকলে হাইড্রোলাইজড প্রোটিনের জোগান দেয় সরাসরি। চুলের কিউটিকল শক্ত করে। এভাবেই আপনার চুল মজবুত হয়।
গ. চুলকে ময়েশ্চারাইজড করে
যেহেতু চুল থেকে মরা চামড়া চলে যায় এই ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে আর চুলে সরাসরি প্রোটিনের চাহিদা মেটে, তাই চুল ভিতর থেকে ময়েশ্চারাইজড হয়।
ঘ. চুল ঘন হয়
এই ট্রিটমেন্ট আপনার চুলের ঘনত্ব বাড়ায়। তাই চুল হয় লম্বা আর ভলিউম বাড়ে।
প্রাকৃতিক হেয়ার প্রোটিন
যদি আপনার বাইরে গিয়ে এই ট্রিটমেন্ট করার সময় না থাকে, আপনি বাড়িতে বসেও এই ট্রিটমেন্ট করতে পারেন। আসুন জেনে নিই কীভাবে।
অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডোর মধ্যে আছে ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি চুল মজবুত করে আর শুষ্ক চুল নরম, মোলায়েম করে তোলে। আপনি খুব সহজেই এই অ্যাভোকাডো ব্যবহার করতে পারেন।
উপকরণঃ ১টি অ্যাভোকাডো, ১ চামচ মেয়োনিজ
পদ্ধতিঃ অ্যাভোকাডো প্রথমে চটকে নিন ভালো করে। এরপর এর মধ্যে মেয়োনিজ নিন। ভালো করে দুটো মিশিয়ে নিন। এই মাস্ক এবার আপনার চুলে লাগিয়ে রেখে দিন ২ ঘণ্টা মতো। তারপর ধুয়ে নিন।
দই
দই এর মধ্যে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড যা আপনার চুল খুব ভালো ভাবে পরিষ্কার করতে পারে।
উপকরণঃ ৩ চামচ দই, ১টি ডিম
পদ্ধতিঃ দইয়ের সঙ্গে ডিম খুব ভালো করে মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণ চুলে ব্যবহার করুন। ২০ মিনিট মতো রেখে দিন। উষ্ণ গরম জল দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়ম করে করলে চুল খুবই ভালো থাকে।
আপনি এই দুটি উপকরণের সঙ্গে নারকেল তেল, কলা, মধু, ক্রিম এই সমস্ত উপকরণ মিশিয়েও সুন্দর প্রোটিন ট্রিটমেন্ট পেটে পারেন, আর তাও ঘরে বসেই।
কিন্তু আপনি যদি রেডিমেড প্রোটিন প্যাক ব্যবহার করতে চান! সেরকম বেস্ট ৫টি প্রোডাক্টের কথাই আপনাদের জানাতে চলেছি।
১. ApHogee Two-Step Protein Treatment
এতে আছে ম্যাগনেসিয়াম, মডিফায়েড প্রোটিন, এমালসিফায়ারস, ফ্যাটি অ্যালকোহল, হাইড্রোলাইজড প্রোটিন। এই সব উপাদান থাকার জন্য এই প্রোডাক্ট আপনার চুল নতুন করে তৈরি করে। এটি চুলের ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে আর চুলের ভেঙে যাওয়া আটকায়। এভাবেই এই প্রোডাক্ট চুল মজবুত করে। অনেক চিকিৎসক তাই এটি ব্যবহার করতে বলেন।
উপকারিতাঃ
ক. এটি ৬ সপ্তাহের মধ্যে চুলের গঠন ঠিক করে।
খ. চুলে রঙ করে চুল খারাপ হলে সেক্ষেত্রে খুব ভালো।
গ. চুল ভাঙা বন্ধ করে।
খারাপ দিকঃ
ক. এটি নর্মাল চুলের ক্ষেত্রে উপযুক্ত নয়।
রেটিংঃ ৪.৫/৫
২.Tropic Isle Living Jamaican Castor Oil Protein Conditioner Mayonnaise Treatment
যদি আপনি প্রথম বার প্রোটিন ট্রিটমেন্ট ব্যবহার করতে চান, তাহলে এটি ব্যবহার করুন। এতে আছে আঙুরের বীজ, অ্যাভোকাডো, ভিটামিন ই, ল্যাভেন্ডার, ক্যাকটাস অয়েল এবং আরও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান। তাই এটি সহজেই ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে আর চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে।
উপকারিতাঃ
ক. হেয়ার ফলিকলের গভীরে প্রবেশ করে।
খ. চুলের বৃদ্ধি ঘটায় তাড়াতাড়ি।
গ. চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখে।
ঘ. চুলের ঘনত্ব বাড়ায়।
ঙ. এটির মধ্যে রাসায়নিক উপাদান নেই।
খারাপ দিকঃ
ক. এটি একটু দামী।
খ. অয়েলি স্ক্যাল্পের জন্য ভালো নয়।
রেটিংঃ ৪.৫/৫
৩. SheaMoisture Jamaican Black Castor Oil Strengthen & Restore Treatment Masque
এটিও প্রাকৃতিক উপাদানে ভরপুর। এতে আছে শিয়া বাটার, পিপারমিন্ট, অ্যাপল সিডার ভিনিগার, জামাইকান ব্ল্যাক ক্যাস্টর অয়েল। এটি চুলের ড্যামেজ নিয়ন্ত্রণ করে। তার পাশাপাশি চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখে, চুল নরম রাখে। এটি স্ক্যাল্পের পি.এইচ ব্যাল্যান্স ধরে রাখে।
উপকারিতাঃ
ক. এতে আছে সব প্রাকৃতিক উপকরণ।
খ. চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
গ. এতে আছে অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান।
ঘ. রাসায়নিক উপাদান মুক্ত এটি।
খারাপ দিকঃ
ক. তৈলাক্ত স্ক্যাল্পের জন্য ভালো নয়।
রেটিংঃ ৪.৩/৫
৪. Briogeo Don’t Despair, Repair! Deep Conditioning Mask
এতে আছে ভিটামিন বি, অর্গান অয়েলের মতো উপাদান যা চুলের হারিয়ে যাওয়া স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনে। শুষ্ক চুলকে আবার নরম, মোলায়েম বানায়। বলতে পারেন এটি ৯৮% প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি। তাই চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারেন।
উপকারিতাঃ
ক. ৯৮% প্রাকৃতিক উপাদান।
খ. চুলকে ভিতর থেকে কন্ডিশন করে।
গ. চুল মোলায়েম করে।
খারাপ দিকঃ
ক. দামের দিক থেকে খানিক বেশি।
রেটিংঃ ৪.৭৫/৫
৫. Giovanni Nutrafix Hair Reconstructo
এটি একটি মাইল্ড প্রোটিন ট্রিটমেন্ট। হেয়ার কিউটিকলে প্রোটিনের জোগান দিয়ে এটি ড্যামেজ হওয়া চুল ভালো করে। চুল মজবুত আর সিল্কি করে। চুলের ন্যাচারাল ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে। রঙ থেকে চুল খারাপ হলে সেখানে এটি ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
উপকারিতাঃ
ক. চুলের স্বাস্থ্য ধরে রাখে।
খ. প্রতিটা চুল মজবুত করে।
গ. চুলের ডগা ফাটা আটকায়।
খারাপ দিকঃ
ক. এতে খানিক বেশি রাসায়নিক উপাদান আছে।
রেটিংঃ ৪.২/৫
তাহলে এখন আর কী জন্য ভাবছেন? এর মধ্যে যে কোনও একটি ব্যবহার শুরু করুন আর নিজেই নিজের চুলের প্রেমে পড়ুন।
মন্তব্য করুন