চুল খুবই রুক্ষ? কোনও কিছু করেই নরম সিল্কি চুল পাচ্ছেন না? রুক্ষ চুল শুধু নিজেই একটি সমস্যা নয়, আরও অনেক সমস্যা ডেকে আনে চুলের জন্য। তাই চুলের সার্বিক ভাল স্বাস্থ্যের জন্য চুলের রুক্ষতা দূর করা খুব দরকার। অনেক সময়ে কোনও প্রোডাক্ট আমাদের এই রুক্ষতা কমাতে সাহায্য করে না। তাই আমাদের দরকার ঘরোয়া টোটকা। হাতের কাছে থাকা খুব ভাল কিছু উপাদান আমাদের চুল সহজেই করে তুলতে পারে সিল্কি আর কোমল।
১. বেসন আর অলিভ অয়েলের প্যাক
বেসন ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা হলেও খুব একটা চুলের জন্য ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু চুল মজবুত করতে আর রুক্ষতা দূর করতে বেসন খুব ভাল সাহায্য করে। এর সঙ্গে যদি দই আর অলিভ অয়েল যোগ করা যায় তাহলে আরও ভাল ফল পাবেন।
উপকরণঃ
বেসন ৩ চামচ, ২ চামচ টক দই, ১ বড় চামচ অলিভ অয়েল।
পদ্ধতিঃ
একটি পাত্রে বেসন নিয়ে আগে জল দিয়ে ভাল করে গুলে নিন। যেন কোনও লাম্প না থাকে। এর সঙ্গে এবার দিয়ে দিন অলিভ অয়েল আর টক দই। খুব ভাল করে মিশিয়ে নিন আর চুলের মধ্যে ভাল করে মেখে নিন। স্ক্যাল্পে ব্যবহার করার দরকার নেই, শুধু চুলে লাগালেই হবে। ৩০ মিনিট রেখে দিন। সাধারণ জল দিয়ে ভাল করে ধুয়ে ভাল হার্বাল শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিন। এটি সপ্তাহে একদিন করতে পারেন।
২. কলার হেয়ার মাস্ক
কলার মধ্যে আছে প্রোটিন আর আমাদের চুল ভাল রাখতে প্রোটিনের গুরুত্ব অনেক। কলার পিচ্ছিল ভাব রুক্ষতা কমাতে খুব সাহায্য করে। সঙ্গে মধু দেবে শাইন আর নারকেল তেল দেবে সিল্কি ভাব।
উপকরণঃ
একটা পাকা কলা, ১ চামচ মধু, ২ চামচ নারকেল তেল, অল্প গ্লিসারিন।
পদ্ধতিঃ
একটি পাত্রে পাকা কলা নিয়ে আগে ভাল করে চটকে নিন। একদম মিহি করে চটকে নিন। তারপর এতে একে একে জদ করুন মধু, গ্লিসারিন আর নারকেল তেল। ভাল করে সব উপকরণ মিশিয়ে নিন। এই প্যাক চুলে ভাল করে লাগিয়ে ৪০ মিনিট মতো অপেক্ষা করুন। তারপর ভাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। ১৫ দিন পর পর করতে পারেন।
৩. ডিমের হেয়ার মাস্ক
ডিমের মধ্যেও আছে প্রোটিন। আমরা জানি ডিমের কুসুম আর চুল নরম রাখতে আর সুন্দর করে তুলতে কতটা সাহায্য করে। আর এসেনশিয়াল অয়েল আনবে চুলের জন্য দরকারি পুষ্টি, যা চুলকে ভিতর থেকে মজবুত করবে।
উপকরণঃ
একটি ডিম, যে কোনও এসেনশিয়াল অয়েল।
পদ্ধতিঃ
একটি পাত্রে আগে একটি ডিম নিয়ে ভাল করে ফেটিয়ে নিন। এর মধ্যে এবার এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। চুলের জন্য জোজোবা এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। সব উপকরণ নিয়ে খুব ভাল করে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ এবার চুলে ভাল করে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে দিন। দেখবেন খানিক সময়ের পর প্যাক শুকিয়ে আসছে। তখন ভাল কোনও হার্বাল শ্যাম্পু বা বেবি শ্যাম্পু দিয়ে চুল শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে দুই দিন করতেই পারেন ভাল ফল পাওয়ার জন্য।
৪. অ্যালোভেরা হেয়ার মাস্ক
আমাদের অন্য অনেক আর্টিকেল পড়ে আশা করি জেনে গেছেন যে ত্বকের পাশাপাশি চুলের জন্যেও অ্যালোভেরা কত ভাল। অ্যালোভেরার রস চুলের রুক্ষতা দূর করতে শুধু নয়, চুল ভিতর থেকে মজবুত করতেও খুব সাহায্য করে। আর সঙ্গে ভিটামিন ই সমৃদ্ধ আমলকি থাকলে তো কথাই নেই।
উপকরণঃ
একটা আমলকি, অ্যালোভেরার রস ৩ বড় চামচ।
পদ্ধতিঃ
বাড়িতে অ্যালোভেরার গাছ থাকলে খুবই ভাল। সেখান থেকে রস নিয়ে নিন। গাছ না থাকলে ভাল ব্র্যান্ডের অ্যালোভেরা জেল নিয়ে নিন। এর সঙ্গে আমলকির রস মিশিয়ে নিন। আমলকি অল্প থেঁতো করে রস বের করে নিলেই হবে। এই মিশ্রণ এবার চুলে লাগিয়ে নিন ভাল করে আর ২০ মিনিট রেখে দিন। তারপর ভাল শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুই বার করলেই হবে।
৫. মেথি আর লেবুর রসের হেয়ার প্যাক
লেবুর রস আর মেথি, দুইই আমাদের চুলের জন্য খুব ভাল। বিশেষ করে মেথি আমাদের চুলের রুক্ষতা খুব কম সময়ের মধ্যে দূর করে দেয়। নিয়ম করে মেথির ব্যবহার তাই চুল ঝলমলে করতে খুব কাজে দেয়।
উপকরণঃ
মেথি এক বড় চামচ, লেবুর রস ২ চামচ।
পদ্ধতিঃ
আগের দিন রাতে মেথি ভিজিয়ে নিন। পরের দিন মেথি বেটে একটি ঘন পেস্ট তৈরি করে নিন। এর সঙ্গে এবার দিয়ে দিন লেবুর রস। দুই উপকরণ খুব ভাল করে মিশিয়ে নিন। এই পেস্ট এবার চুলে ভাল করে লাগিয়ে রেখে দিন ৩০ মিনিট মতো। তারপর শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে তিন দিন করতে পারেন এই প্যাক ব্যবহার।
এই পাঁচটি হেয়ার প্যাক আপনাকে খুব কম দিনের মধ্যে সিল্কি নরম আর ঝলমলে চুল এনে দিতে পারে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সব প্যাকই ব্যবহার করতে পারেন। তবে একটা কথা অবশ্যই মনে রাখবেন। শ্যাম্পু ভাল ব্যবহার করা কিন্তু খুব দরকার। না হলে চুলের রুক্ষ ভাব একদম কমবে না। আমাদের চুল কিন্তু বেশি রুক্ষ হয় এই কেমিক্যাল ব্যবহার করা শ্যাম্পু বেশি ব্যবহার করে করে। তাই হার্বাল বা মাইল্ড বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার কড়াই খুব ভাল। তাহলেই সব দিক থেকে চুল ভাল থাকবে।
মন্তব্য করুন