আমাদের বাঙালিদের বারো মাসে তেরো পার্বণ। আর এই সব অনুষ্ঠানের মধ্যে পুজো তো লেগেই আছে। বাঙালি বাড়িতে পুজো মানেই ঠাকুরের কাছে ভোগ দেওয়া। কিন্তু সব সময়ে এক রকমের ভোগ রান্না করতে করতে অনেক সময়েই আর ভাল লাগে না। কিন্তু ঠাকুরের রান্নায় যেহেতু উপকরণ কম তাই কি রান্না কড়া যায় আমরা আসলে বুঝতে পারি না। আজও চলুন এরকম কিছু রান্না শিখে নিই যেগুলো ঠাকুরের ভোগ হিসেবে যেমন নতুন আপনাদের কাছে, তেমনই খেতেও ভাল লাগবে এমনি সময়েও।
১. বেসর
এটি একটি পাঁচমিশালি সবজি। কিন্তু আমাদের সবসময়ের তৈরি করা তরকারি বা লাবড়ার মতো এটা নয়। আসলে জগন্নাথদেবের মন্দিরের ছাপ্পান্ন ভোগের মধ্যে এটি অন্যতম। খুব সুন্দর খেতে হয় এটি।
উপকরণঃ
১০০ গ্রাম বিনস, ১৫০ গ্রাম কুমড়ো, ২টি কাঁচকলা, ১টি রাঙা আলু, ২০০ গ্রাম পটল, সাদা সর্ষে, কালো সর্ষে, গোলমরিচ, পাঁচ ফোঁড়ন, নারকেল কোড়া, জিরে গুঁড়ো, ধনের গুঁড়ো, বিউলির ডালের বড়ি, আদা কুচি, অঙ্কুর তোলা ছোলা, ঘি, গুড়, নুন, হলুদ গুঁড়ো, কাসৌরি মেথি।
পদ্ধতিঃ
সবজিগুলো ভাল করে খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে নিন আর কেটে নিন ডুমো ডুমো করে। আলাদা করে সাদ আর কালো সর্ষে একসঙ্গে নিয়ে একটি পেস্ট করে নিন। কড়াইতে ঘি দিয়ে আগে বড়ি ভেজে নিন। এবার পাঁচফোঁড়ন আর অল্প কাসৌরি মেথি দিন আর পাঁচফোঁড়ন অল্প ভাজা হয়ে আসলে দিন ধনে, জিরে গুঁড়ো। এই সময়েই অল্প কালো সর্ষে দিয়ে দিন। এবার তেলের মধ্যে সর্ষে পেস্ট দিয়ে অল্প আঁচে ভেজে নিন। গোলমরিচ গুঁড়ো, নুন আর হলুদ দিয়ে মিশিয়ে নিন।
অল্প ভাজা হয়ে আসলে এতে দিয়ে দিন সমস্ত সবজি আর ছোলা। ভাল করে মিশিয়ে ঢাকা দিয়ে রেখে দিন ৫ মিনিট। এবার অল্প জল দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে ১০ মিনিটের জন্য রাখুন। ঢাকনা খুলে আবার একটু নেড়ে অল্প জল লাগলে দিয়ে আবার ১৫ মিনিটের জন্য ঢেকে দিন। এই সময়েই বড়ি দিয়ে দিন। এবার এর মধ্যে গুঁড়ো আর নারকেল কোড়া দিয়ে আরক কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন। নামানোর আগে অল্প ঘি দিয়ে আঁচ বন্ধ করে ৫ মিনিট ঢেকে রেখে নামিয়ে নিন।
২. মিঠা ডালি
এটিও জগন্নাথদেবের মন্দিরে ভোগ দেওয়া হয়। আপনারা পুজোর দিন বাদে অন্য দিনেও খেয়ে দেখতে পারেন। খুব ভাল লাগবে। ডাল তো অনেক রকমের খান। এটা একবার খেয়ে দেখুন।
উপকরণঃ
ঘি, গুড়, নুন, আদা কুচি, হলুদ গুঁড়ো, অড়হর ডাল, হিং, গোটা জিরে।
পদ্ধতিঃ
অড়হর ডাল ভাল করে ধুয়ে ৪ ঘণ্টা মতো জলে ভিজিয়ে রেখে দিন। তারপর জল ছেঁকে নিয়ে রেখে দিন। এবার কড়াইতে এই ডাল নিয়ে তাতে জল দিয়ে সেদ্ধ করতে বসিয়ে দিন। ডালটা ফুটে আসলে এতে নুন আর হলুদ দিয়ে আরও ১৫ মিনিট অল্প আঁচে ঢেকে রাখুন। এতে এবার গুড় দিয়ে আরও ১৫ মিনিট ঢেকে রাখুন।
অন্য একটি পাত্রে ভাজা মশলা বানিয়ে নিন। শুকনো কড়াইতে দিয়ে দিন গোটা জিরে। অল্প নেড়ে গুঁড়ো করে নিন। একটি পাত্রে ঘি নিয়ে তাতে আদা আর হিং ফোঁড়ন দিয়ে এই ঘি ডালের মধ্যে দিয়ে দিন। সঙ্গে দিয়ে দিন ভাজা জিরে গুঁড়ো। ভাল করে সব ডালের সঙ্গে মিশিয়ে নিন। আঁচ বন্ধ করে ঢাকা দিয়ে খানিকক্ষণ রেখে দিন। তারপর পরিবেশন করুন।
৩. রসাবলী
এটি একটি মিষ্টি উপকরণ। বানাতে একটু পরিশ্রম হচ্ছে মনে হলেও বানানোর পর কিন্তু সব কষ্ট চলে যাবে যখন আপনি এটি খাবেন। উপোস থাকলে রাতে খাবার পর এটি খেতে পারেন।
উপকরণঃ
চিনির গুঁড়ো, এলাচ, ২ লিটার দুধ, ময়দা অল্প, এক কাপ চিনি, ঘি।
পদ্ধতিঃ
১ লিটার দুধ থেকে আগে ছানা কেটে নিন। বাকি দুধ ব্যবহার করা হবে মূল রান্নায়। ছানা ছেঁকে নিয়ে এর মধ্যে মিশিয়ে নিন অল্প ময়দা মাখার জন্য। ভাল করে চাপ দিয়ে মেখে নিন যাতে দানা না থাকে। এর মধ্যেই এবার দেব গুঁড়ো চিনি। আবার ভাল করে মিশিয়ে নেব। একদম নরম হওয়া অবধি মেখে নেব। এবার ছানা নিয়ে অল্প গোল করে গড়ে একটু চ্যাপটা করে নেব আর মাঝের অংশে আঙুল দিয়ে একটা গর্ত করে নেব।
এবার কড়াইতে ঘি দিয়ে অল্প গরম করে নেব। আঁচ অল্প করে রেখে এর মধ্যে আমরা ছানার রসাবলি দিয়ে দেব। আঁচ কিন্তু সবসময়ে অল্প থাকবে। আমরা লাল লাল করে ভেজে নেব ছানার রসাবলি। লাল হলেও দেখবেন যেন পুড়ে না যায় বা অতিরিক্ত ভাজা না হয়। সব রসাবলি ভাল করে ভেজে নিয়ে আলাদা পাত্রে রেখে দিন। অন্য একটি পাত্রে দুধ নিয়ে সেটি ফুটিয়ে ঘন করে নিন। ফুটিয়ে প্রায় অর্ধেক করে আনুন।
তারপর এর মধ্যে ভেজে রাখা রসাবলী দিয়ে দিন। অল্প আঁচ রেখে দুধ আরও ঘন হতে দিন। এই সময়ে এলাচ দিয়ে দিন আর দিয়ে দিন পরিমাণমতো চিনি। ১০ মিনিটের মধ্যেই দেখবেন দুধ ঘন হয়ে এসেছে আর রসাবলীর মধ্যে খুব সুন্দর রস ঢুকে গেছে। এবার একটি পাত্রের মধ্যে রসাবলী দুধ সমেত তুলে নিন আর ফ্রিজে রেখে দিন। ঠাণ্ডা পরিবেশন করলে খেতে বেশি ভাল লাগবে।
আশা করি এই তিনটি নতুন রেসিপি আপনাদের খেতে খুব ভাল লাগবে। এগুলি বানানো খুব সহজ আর খুব কম সময়ে হয়ে যায়। পুজো বা অন্য যে কোনও অনুষ্ঠান ছাড়াও অন্য রকমের কিছু যদি আপনার খেতে ইচ্ছে করে তাহলে একদিন অনায়াসে এগুলি তৈরি করে নিয়ে দেখতে পারেন।
মন্তব্য করুন