ধরুন আপনি অফিসে পর পর তিন চারদিনের ছুটি পেলেন।আর খুব ঘুরতে ভালোবাসেন।তাহলে নিশ্চয়ই এই ছুটির দিনগুলো নষ্ট করার মানুষ আপনি নন।কিন্তু কোথায় যাবেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না।মাত্র তিনদিনে কোন জায়গাটা কম খরচে বেস্ট হবে?আচ্ছা সেটা যদি হয় কোনো লাল মাটির দেশ?মানে পুরুলিয়া।কি ভাবছেন ধুর পুরুলিয়া?আরে মশাই আছে আছে,পুরুলিয়াতেও অনেক কিছু দেখার আছে।আজ দিচ্ছি তারই সন্ধান।চটপট দেখে নিন একবার।
পুরুলিয়া
পুরুলিয়া হল পশ্চিমবঙ্গ মেদিনীপুর বিভাগের একটি জেলা।যদি অল্প দিনের ট্যুরে পাহাড় দেখতে চান,তাহলে চলে যেতেই পারেন পুরুলিয়া। যেখানে পাহাড়ের সাথে বাড়তি পাওনা ঝরনা।আহা!নিজের চোখে ঝরনা দেখার সে যে কি অনুভূতি,নিজে না দেখলে বোঝা যায় না।
শুধু কি ঝরনা, তার সাথে আরও নানান এরমই চোখ ধাঁধানো জায়গা।আর যারা ছবি তুলতে ভালোবাসেন,তারা অবশ্যই নিজের ক্যামেরাটা নিতে ভুলবেন না।কারণ জঙ্গলে হাতি কিংবা হরিণ বা আরও তিন চার রকম প্রজাতির পশু ও পাখি তো দেখতেই পারবেন।
➡ পশ্চিমবঙ্গের হেনরি আইল্যান্ড দুদিনের ছোট্ট ট্যুর তাও কম খরচে
কি কি দেখবেন পুরুলিয়ায়
জঙ্গল আর পাহাড়ের একসাথে মজা নিতে পুরুলিয়া ভালো।বাড়তি পাওনা উপচে পড়া ভিড় একদমই নেই।নিরিবিলিতে মজা নিতে পারবেন।আর চোখে পড়বে চারিদিকে লালের সমারোহ।চারিদিকে লাল পলাশ ও লাল মাটির রাস্তার একটা সুন্দর গ্রাম্য পরিবেশ,যা শহুরে ভিড়ের থেকে অনেক ভালো লাগবে।প্রধান আকর্ষণ হিসাবে অনেক জায়গায়ই আছে।তার মধ্যে অযোধ্যা পাহাড় অন্যতম,যেখানে বয়ে গেছে সুবর্ণরেখা,কংসাবতী ও কুমারী তিনটি নদীর স্রোত।অযোধ্যা ছাড়াও দেখার সুযোগ মিলবে,সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত সিনেমা হীরক রাজার দেশের শুটিং স্পট জয়চণ্ডী পাহাড় ও বাগমুণ্ডী পাহাড়।জয়চণ্ডী পাহাড়ে আছে দেবী জয়চণ্ডীর মন্দির।পুরুলিয়ায় গিয়ে আগে ঠিক করে নিতে হবে,কোথায় কোনদিন যাবেন। তিনদিনে সব দেখতে গেলে,ঠিক না করে গেলে সব জায়গা হয়তো দেখা হবে না।একটা ম্যাপ মত রাখুন নিজের কাছে,তাহলে আরও বেশী সুবিধা। প্রথম দিন পায়ে হেঁটে ঘুরতে পারেন সাহেব বাঁধ,জেলাবিজ্ঞান কেন্দ্র।তারপর একটু বিকেল গড়িয়ে এলে চলে যান কুমারী কানন,কুমারী ড্যাম। ওখানেই আছে ডিয়ার পার্ক অতিথি নিবাস।পুরুলিয়ার বিখ্যাত ঝুমুর নাচ দেখতে সন্ধ্যাবেলা চলে যান ডিয়ার পার্কের বিপরীতে।
এছাড়াও পরেরদিন যদি অযোধ্যা পাহাড় দেখতে বেরোন,তাহলে অযোধ্যা পাহাড়ের ওখানেই পর পর পেয়ে যাবেন পাখি,পাহাড়,থুরগা ফলস,বামনী ফলস,আপার ড্যাম ও লোয়ার ড্যাম।এছাড়াও দেখতে পারেন পি.পি.এস.পি প্রোজেক্ট যেখানে পাবেন একটু বিজ্ঞানের ছোঁয়া।এছাড়াও অযোধ্যা পাহাড় থেকে বাগমুণ্ডী হয়ে চলে যেতে পারেন চোরিদা গ্রামে।সেখানে ছোঁয়া পাবেন অপূর্ব ছৌ নাচের।তারপর চোরিদা গ্রাম থেকে নেমে বুরদা মোড়। ওখান থেকে ডান দিকে গেলেই অপূর্ব খয়রাবেরা ড্যাম চোখে পড়বে।আর চোখে পড়বে পঞ্চকোট পাহাড়।
কীভাবে যাবেন
হাওড়া বা সাঁতরাগাছি থেকে ট্রেন পাবেন পুরুলিয়ার।পুরুলিয়া নেমে ওখান থেকে সোজা গাড়ি ভাড়া করে চলে যেতে পারেন অযোধ্যা পাহাড়ের পথে। সাঁতরাগাছি থেকে সকাল ৯.১৫ তে পাবেন সামারসাত্তা এক্সপ্রেস।আর সকাল ৬.২৫ এ পাবেন রুপসিবাংলা এক্সপ্রেস।আর হাওড়া থেকে যেতে চাইলে,সকাল ৮.৩০ এ পাবেন লালমতি এক্সপ্রেস।এছাড়াও হাওড়া থেকে আরেকটি ট্রেন পাবেন যেটি ছাড়ে রাত ১১টায়।তারপর ফেরার জন্য,আদ্যা – হাওড়া ট্রেন পেয়ে যাবেন।
কোথায় থাকবেন
পুরুলিয়ায় পৌঁছে ওখানে পর পর হোটেল পেয়ে যাবেন।যেমন হোটেল আকাশ,পুষ্পক হোটেল,হোটেল জিনিয়াস,হোটেল হিল ভিউ পুরুলিয়া ইত্যাদি ও আরও অনেক আছে।এছাড়াও বাগমুণ্ডীতে পেয়ে যাবেন কিছু কোয়াটার।
খরচ কেমন
ট্রেন পথে পুরুলিয়া যাবার খরচ মোটামুটি ওই ১২০ থেকে ১২৫ মত পড়ে পার হেড।এছাড়াও পুরুলিয়াতে হোটেলে থাকার খরচ বিভিন্ন আছে।মানে বিভিন্ন দামে বিভিন্ন মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।৫০০ থেকে ৪০০০ অবধি বিভিন্ন দামে হোটেল পেয়ে যাবেন।ওই মোটামুটি পার হেড তিন থেকে চার হাজার টাকা হলেই ঘুরে অনায়াসে আসতে পারবেন পুরুলিয়া।
তাহলে দেখলেন তো কম খরচে কত সুন্দর হতে পারে আপনার পুরুলিয়া ট্যুর।হয়তো তিনদিনেও সব জায়গা দেখা শেষ হবে না।তাহলে আর দেরী কীসের,তিনদিনের ছোট্ট ট্যুরে,ছোট্ট এই লালমাটির দেশই হোক না এবারের গন্তব্যস্থল।
অ্যামাজনে কিভাবে পছন্দের জিনিস সার্চ করবেন দেখুন স্টেপ বাই স্টেপ
মন্তব্য করুন