পুজার আমেজ কাটতে না কাটতেই শীত দোরগোড়ায় কড়া নাড়তে শুরু করেছে।শীতকালে শুষ্ক শীতল হাওয়া আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, চুলের স্ক্যাল্প শুকিয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে ঠোঁট ফাটা ও গোড়ালি ফাটার মতো একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। আমাদের শরীরের মধ্যে সবথেকে কোমল অংশ হলো ঠোঁট। তাই তাপমাত্রার পরিবর্তন হলে সবার আগে ঠোঁট ফাটে, শীতে ঠোঁটের যত্ন নেওয়ার জন্য তাই পনেরোটি অনবদ্য উপায় রইল আপনাদের সামনে।
১. ঠোঁটের মৃতকোষ পরিষ্কার করতে সকালের পরিচর্যা
শীতে একটা কমন সমস্যা হল ঠোঁট ফাটা। তাই ঠোঁট যাতে শুষ্ক হয়ে না যায় বা ফেটে না যায় তার জন্য প্রথম থেকেই ঠোঁটের যত্ন নিতে হবে। আর শীতে ঠোঁটের যত্ন নিতে চাইলে সেটা শুরু করতে হবে দিনের প্রথম ভাগ থেকেই। অর্থাৎ ঘুম থেকে উঠে ঘুমোতে যাওয়ার আগে অবধি ঠোঁটের পরিচর্যা করতে হবে। তাই সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠেই নরম ভেজা তোয়ালে দিয়ে হালকা হাতে ঠোঁট টি মুছে নিন। এতে ঠোঁটের মৃতকোষ পরিষ্কার হয়ে যাবে।
২.ঠোঁটকে সজীব রাখতে রাতের পরিচর্যা আমন্ড অয়েল
রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আমন্ড ওয়েল নিয়ে ঠোঁটে ম্যাসাজ করুন। এরপর সারারাত সেটা রেখে দিন, এতে ঠোঁট সজীব থাকবে ও ঠোটের মধ্যে একটি নরম ভাব বজায় থাকবে।
৩. নারকেল তেল
ঠোঁটে মসৃণতা আনতে প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে বারবার ঠোঁটে নারকেল তেল লাগাতে পারেন। এছাড়া ভেসলিন বা পেট্রোলিয়াম জেলি ও ব্যবহার করতে পারেন।
৪. ঠোঁটের কোমলতা বজায় রাখতে ঘি
ঠোঁটের কালচে ভাব দূর করতে ও গোলাপি ভাব ফিরে পেতে ঠোঁটে ঘি লাগান। এটি একটি ঘরোয়া উপাদান তাই এটি ব্যবহারের ফলে ঠোঁটের কোনরকম ক্ষতি তো হবেই না উল্টে এই ঘরোয়া উপাদান ব্যবহারের ফলে আপনার ঠোঁট মখমলের মত হয়ে উঠবে।
৫.মধু

ঠোঁটের পরিচর্যা করতে শীতকালে ঘরোয়া উপায়ে একটি মিশ্রণ তৈরী করে ঠোঁটে লাগাতে পারেন। বাজার চলতি উপাদানের চাইতে এই সকল ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করলে তা ত্বকের জন্য অত্যন্ত ভালো হয়। আধা চা চামচ মধু ও আধা চা-চামচ গ্লিসারিন একসাথে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারেন।
৬. গোলাপজল
ঠোঁট নরম রাখতে শীতকালে এক চামচ গোলাপজল ও আধা চামচ গ্লিসারিন একসাথে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারেন।এতে শীতকালে ঠোঁট নরম থাকে।
৭. অলিভ অয়েল
ঠোঁটের কোমলতা বজায় রাখতে অলিভ অয়েল দিয়ে দিনে দুবার ম্যাসাজ করতে পারেন,এতে ঠোঁট ফাটার সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
৮. প্রচুর পরিমাণে জল
শীতকালে ত্বক ফাটার অন্যতম কারণ দেহের পানিশূন্যতা। শরীর যদি ভেতর থেকেই হয় তাহলে ত্বকের মধ্যে তার প্রতিফলন কীভাবে ঘটবে? তাই ত্বককে ভেতর থেকে সজীব রাখতে চাইলে দিনে প্রচুর পরিমাণে জল পান করতে হবে। প্রতিদিন অন্তত পক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস জল খান। এর ফলে শরীরের আদ্রতা বজায় থাকবে।
৯. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল
শীতকালে শরীরকে সতেজ রাখতে শরীরের বাহ্যিক যত্ন শুধু নিলে হবে না,এর পাশাপাশি শরীরকে ভিতর থেকে সুন্দর রাখতে হবে। শরীরকে ভিতর থেকে সুন্দর করতে গেলে শীতকালে অবশ্যই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে। এতে ত্বকের শুষ্ক ভাব কমে যাবে।
১০. সবুজের আহার
শীতকালে ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখতে গেলে মৌসুমী শাকসবজি ও বাদাম পেস্তা ইত্যাদি খান। এতে ত্বকে ভেতর থেকে সুন্দর হয়ে উঠবে আর ঠোঁটের সৌন্দর্য ও বজায় থাকবে।
১১. গ্লিসারিন
আমাদের ত্বকের জন্য গ্লিসারিন খুব ভালো একটি উপাদান।দিনের যেকোনো সময় ঠোঁটে গ্লিসারিন লাগাতে পারেন, এতে ঠোঁট নরম থাকবে।
১২. দুধ
দুধ অথবা দুধের সর ঠোঁটে লাগিয়ে হালকা হাতে মেসেজ করতে পারেন, এতে ঠোঁট সুন্দর থাকবে।
১৩. মধু ও নারকেল তেল
মসৃণ ও নরম করতে আধা চামচ মধু ও আধা চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে ঠোঁটে লাগাতে পারেন। মধু আর নারকেল তেল দুই একসাথে ব্যবহার করলে ঠোঁট নরম ও থাকবে আবার ঠোঁটের স্বাভাবিক গোলাপি ভাব ও বজায় থাকবে।
১৪. বোরোলিন
ঠোঁট ফেটে গেলে, ঠোঁট থেকে রক্ত বের হলে বোরোলিন গরম করে ঠোঁটে লাগিয়ে নিন। এতে আপনার ঠোঁট ফাটা রক্ত ও ঠোঁট থেকে রক্ত পরা দুই ই বন্ধ হবে।
১৫. ঠোঁটের পরিচর্যার ক্ষেত্রে যে ভুলগুলি করবেন না
- শুকিয়ে গেলে অনেকবারই আমরা জিভ দিয়ে ঠোঁটটাকে ভিজিয়ে নিই। এই ভুল করা থেকে বিরত থাকুন। এতে ঠোঁটের অনেক বেশী ক্ষতি হয়।
- ঠোঁট ফেটে গেলে সেই চামড়াটাকে হাত দিয়ে টেনে তুলতে যাবেন না। এতে ঠোঁট টা খারাপ হয়ে যাবে। ঠোঁটে ক্ষতের সৃষ্টি হবে।

- বারবার দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরবেন না। শীতকালে অনেকেই আমরা এই ভুলটি করে থাকি। কিন্তু ঠোঁটের কোমলতা বজায় রাখতে চাইলে এই বদ অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে।
- কখনোই ম্যাটে লিপস্টিক লাগাবেন না ফাটা ঠোঁটে। এটি করলে ঠোঁট আরো বেশি শুকিয়ে যায়। ফাঁটা ঠোঁটে সবসময় গ্লসি লিপস্টিক লাগাবেন।
- ফাটা ঠোঁটে সরাসরি লিপস্টিক লাগাবেন না। লিপস্টিক লাগানোর আগে ঠোঁটে একটু সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ঠোঁটে একটু ফাউন্ডেশন দিন, এরপর ঠোঁটে গ্লসি লিপস্টিক লাগান।
মন্তব্য করুন