মেয়েদের পোশাকের কথা চিন্তা করলেই যে পোশাকটির কথা সবার আগে মাথায় আসে সেটি হচ্ছে শাড়ি। বাঙালী মেয়েদের খুবই পছন্দের পোশাক শাড়ি। শাড়ি পরতে পছন্দ করেন না এমন মেয়ে খুঁজে পাওয়া ভার। শাড়ি আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির ঐতিহ্যও বটে। আবার শাড়িরও আছে নানান ধরন, যা এলাকাভিত্তিক সংস্কৃতিরও অংশ।
শাড়ি ভালো রাখার সহজ কয়েকটি উপায়ঃ
সুতি শাড়িঃ
সুতি শাড়ি পরিষ্কার ও সংরক্ষনে তেমন কোনো ঝামেলা নেই। বাসাতেই সুতি শাড়ি পরিষ্কার করা যায়। ঠান্ডা কিংবা হালকা গরম পানিতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে দশ থেকে পনের মিনিট ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে ফেললেই হয়। তবে রঙিন শাড়িতে গরম পানি ব্যবহার না করাই ভালো। তাতে শাড়ির উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। সুতি শাড়ি ধুয়ে মাড় বা এরারুট দিয়ে ইস্ত্রি করে নিলে ভালো থাকে। তবে অনেকদিনের জন্য তুলে রাখতে চাইলে মাড় না দেয়াই ভালো।
তাঁত ও টাঙ্গাইল শাড়িঃ
এধরনের শাড়ি ড্রাই ওয়াশ করালে শাড়ি বেশিদিন ভালো থাকে। বাসায় ধোয়ার সময় ভুলেও শাড়ি ওয়াশিং মেশিনে দেবেন না। ভালোমত শুকিয়ে আয়রন করে তুলে রাখুন। মাঝেমধ্যে উপরের শাড়ি নিচে এবং নিচের শাড়ি উপরে উঠিয়ে উল্টেপাল্টে রাখুন।
জামদানি শাড়িঃ
কখনোই বাসায় জামদানি শাড়ি ধুয়ে নিতে যাবেন না। এই শাড়ি বিশেষ প্রক্রিয়ায় পরিষ্কার করতে হয় যা কাটা ওয়াশ নামে পরিচিত, তাই এটি লন্ড্রিতে বা তাতীদের দিয়ে ওয়াশ করানোই উত্তম। জামদানি শাড়ি ভাঁজ করে রাখবেন না। এতে ভাঁজে ভাঁজে শাড়ি কেটে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। সবসময় হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখুন কিংবা রোলারে পেঁচিয়ে রাখুন। এতে শাড়িতে ভাঁজ পরবে না।
কাতান ও বেনারসি শাড়িঃ
এই শাড়িগুলো ক্যালেন্ডার ওয়াশ পদ্ধতিতে পরিষ্কার করা হয়। এই শাড়িগুলোও জামদানির মতন ভাঁজ করে রাখা যাবে না। হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে। নিতান্তই না পারলে হালকা ভাঁজে রাখতে পারেন। তবে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখলে বা হালকা ভাঁজে রাখলেও শাড়িতে ভাঁজের দাগ পরে যায়। তাই কিছুদিন পরপর শাড়ি বের করে রোদে দিয়ে ভাঁজ পালটে রাখুন।
মণিপুরী শাড়িঃ
মণিপুরী শাড়ি দুই-তিনবার ব্যবহারের পর ওয়াশ করে নেয়া ভালো। খুব যত্ন নিয়ে হালকা ডিটারজেন্ট বা শ্যাম্পু দিয়ে ওয়াশ করবেন। কচলাবেন না বা চিপবেন না। শাড়ি শুকানোর জন্য ঝুলিয়ে দেবার সময় দুটো পাশেই সমান করে ঝুলিয়ে দেবেন। নয়ত শাড়িটা বাঁকা হয়ে যেতে পারে।
রেশম বা সিল্ক শাড়িঃ
এসব শাড়ি ভাঁজ না করে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখলে বেশিদিন ভালো থাকে। স্যাতস্যাতে স্থানে এসব শাড়ি রাখা যাবে না। ড্রাই ওয়াশ করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। বাসায় ধোয়ার ক্ষেত্রে শাড়ি কচলানো যাবে না। বেশি ময়লা হলে শ্যাম্পু দিয়ে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রেখে এরপর ধুয়ে ফেলুন। শাড়ি হালকা ভেজা থাকতেই উল্টো করে ইস্ত্রি করুন। শাড়িতে কোথাও দাগ লাগলে সাথেসাথেই সেখানটায় পাউডার দিয়ে দিন।
জর্জেট ও শিফন শাড়িঃ
ভারী এব্রোয়ডারি কিংবা ভাড়ী পাড়ের জর্জেট ও শিফন শাড়ি হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখা উচিত নয়। এতে করে ওই ভারী কাজের ভারেই শাড়ি ছিঁড়ে যেতে পারে। এধরনের শাড়ি ড্রাই ওয়াশে দেয়াই উত্তম। বাসায় ধোয়ার ক্ষেত্রে ডিটারজেন্টে সাথে শ্যাম্পু মিশিয়ে নিন। শাড়ি ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন, ভুলেও চিপবেন না।
ব্লক ও বাটিক শাড়িঃ
বাটিক শাড়ি কখনোই সরাসরি রোদে শুকাতে দেবেন না। ব্লকের শাড়ি প্রথমবার ধোয়ার আগে ব্লকের কাজের উল্টো পিঠে আয়রন করে নিন বা কড়া রোদে শুকিয়ে নিন, এতে রঙ পাকা হবে। এসব শাড়ির যত্ন নেয়া খুবই সহজ। বাসায়ই ধুয়ে নিতে পারবেন। প্রথমবার ধোয়ার সময় লবন মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে রেখে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। অতিরিক্ত চিপে পানি ঝরাবেন না, এতে শাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
যে কোনো ধরনের শাড়ির ক্ষেত্রেই নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখবেনঃ
- পাড়ওয়ালা শাড়ি কেনার পরপরই শাড়িতে ফলস লাগিয়ে নিন। তাহলে পাড়ের কাজ নষ্ট বা ক্ষয় হয়ে যাবে না।
- আলপিন কিংবা সেফটিপিন শাড়িতে ব্যবহার না করাই শ্রেয়। তারপরও ব্যবহার করতে হলে চেষ্টা করুন পিনগুলো যাতে আঁটসাঁট হয়ে না থাকে।
- বাইরে থেকে এসে শাড়ি খুলে ঘাম শুকিয়ে বাতাসে বা হালকা রোদে দিয়ে এরপর ভাঁজ করুন। নয়ত ঘামের দাগ পরতে পারে।
- ধুলোবালি ও গন্ধ থেকে শাড়িকে রক্ষা করতে মসলিন কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন।
- শাড়ি ঝুলিয়ে রাখতে প্লাস্টিকের তৈরি হ্যাঙ্গার ব্যবহার করুন। স্টিল বা ধাতব তৈরি হ্যাঙ্গারে শাড়ি রাখলে তাতে মরিচার দাগ লেগে যাবার সম্ভাবনা থাকে। হ্যাঙ্গারে দুটো শাড়ি একসাথে রাখবেন না।
- সরাসরি কড়া সূর্যের আলোতে শাড়ি শুকাবেন না। রোদে দেবার সময়েও খুব বেশি রোদে দেবেন না। এতে শাড়ির রং নষ্ট হয়ে উজ্জ্বলতা কমে যেতে পারে। সবসময় শাড়ি উল্টো পিঠে শুকাতে দিন।
- সব শাড়িই তো আপনি নিয়মিত পরেন না। তাই যে শাড়িগুলো নিয়মিত পরেন না বা তুলে রাখেন, সেগুলো কিছুদিন পরপর রোদে দিন এবং ভাঁজ পাল্টে রাখুন।
- ভারী কাজ করা শাড়ির ক্ষেত্রে সবসময় শাড়ির উল্টো দিক বাইরের দিকে রেখে ভাঁজ করুন। এতে শারীর কাজ নষ্ট হবে না।
- সুতি শাড়ি প্রথমবার ধোয়ার আগে কিছুক্ষন লবন মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। দামী শাড়ি বাসায় পরিষ্কার করতে চাইলে ডিটারজেন্টের বদলে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
- শাড়ির ম্যাটেরিয়াল যা-ই হোক না কেন, কখনোই শাড়ি ঘন্টাখানেক পানিতে চুবিয়ে রাখবেন না।
- সরাসরি শাড়িতে কখনোই সুগন্ধি বা পারফিউম মাখবেন না। এতে শাড়িতে দাগ পরে যায় যা সচরাচর উঠতে চায় না।
- ছত্রাক থেকে শাড়িকে রক্ষা করতে আলমারি, ট্রাঙ্ক, ক্লজেট অর্থাৎ শাড়ি রাখার স্থানে সিলিকা জেল রাখুন।
- তেলাপোকা, ছাড়পোকা ও অন্যান্য কীটপতঙ্গের হাত থেকে শাড়িকে বাঁচাতে শাড়ির আশেপাশে ন্যাপথলিন বল দিয়ে রাখুন। হাতের কাছে ন্যাপথলিন বল না পেলে কালোজিরা, লবঙ্গ, দারুচিনি বা নিমপাতা শুকিয়ে দিয়ে রাখুন।
শাড়ি বাঙালী নারীর সৌন্দর্য। আর শাড়িকে সুন্দর রাখতে শাড়ির যত্ন নিন। আপনি শাড়িকে সুন্দর রাখুন, শাড়ি আপনার সৌন্দর্য আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে।
মন্তব্য করুন