অনেক সময়ে আমাদের দাঁত পান খাওয়ার ফলে লালচে হয়ে যায়। এছাড়াও ভালও করে দাঁত ব্রাশ না করার জন্য হলদেটে দাগ তো পড়েই যায়। সেই দাগ অনেক সময়ে এমন জেদি হয় যে ডাক্তারের কাছে গিয়ে টিথ হোয়াইটনিং না করলে দাঁত সাদা হয় না। কিন্তু অনেক সময় দাঁত হোয়াইটনিং না করেও সাধারণ কিছু জিনিস দিয়ে দাঁতের পরিচর্যা করলে দাঁত অনেকটা সাদা হয়ে আসে।
১. বেকিং সোডা
বেকিং সোডা দাঁত সাদা করার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় আর প্রচলিত একটি উপাদান। বেশির ভাগ ভাল কিছু টুথপেস্টে বেকিং সোডা ব্যবহার করা হয়। আপনি চাইলে আপনার মাজনের মধ্যে বেকিং সোডা মিশিয়ে নিয়ে মাজতে পারেন। না হলে শুধু বেকিং সোডা দিয়েও দাঁত মাজতে হবে। দিনে দুই বার মাজলে খুব ভাল। তবে বুঝতেই পারছেন, একদিনে দাঁত সাদা হবে না। একটু সময় নিলে কয়েক সপ্তাহেই দাঁত ঝকঝকে হবে।
২. অয়েল পুলিং
অয়েল পুলিং মানে হল তেল দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা। মূলত সানফ্লাওয়ার তেল ব্যবহার করা হয় এক্ষেত্রে। কিন্তু তার বদলে নারকেল তেল ব্যবহার করা খুব ভাল। নারকেল তেল খাবার জন্যেও যে পাওয়া যায় সেটা নিশ্চয়ই জানেন। সেই নারকেল তেল দিয়ে দাঁত মাজুন দিনে দুই বার করে। অন্তত দুই মিনিট ধরে ব্রাশ করুন। এতে খুব তাড়াতাড়ি সাদা হয়ে আসবে দাঁত।
৩. হলুদ গুঁড়ো
হলুদও কিন্তু খুব ভাল দাঁতের কালচে ভাব দূর করে। কাঁচা হলুদ বেটে এটি করলে পারলে খুব ভাল। না হলে হলুদ গুঁড়ো ব্যবহার করলেও হবে। হলুদ গুঁড়োর মধ্যে অল্প জল নিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হবে। এই পেস্ট টুথব্রাশে লাগিয়ে দাঁত মাজতে হবে দুই মিনিট মতো। এতে মুখে ব্যাকটেরিয়াল প্রকোপ যেমন কমবে, তেমনই দাঁত সাদা ঝকঝকে হয়ে আসবে।
৪. চারকোল দিয়ে ব্রাশ
চারকোল দাঁত পরিষ্কার করতে অসাধারণ কাজ দেয়। চারকোল পাউডার বাজারে পাওয়া যায় ভাল মুদির দোকানে। না হলে অনলাইনেও আনিয়ে নিতে পারেন। ব্রাশের মধ্যে চারকোল নিয়ে দাঁত মাজুন। দিনে দুইবার অবশ্যই মাজবেন। দাঁত পরিষ্কার হয়ে আসবে কয়েক দিনের মধ্যেই। আগেকার দিনে মানুষ ছাই দিয়ে দাঁত ব্রাশ করতেন, কারণ ছাইয়ের মধ্যে এই চারকোলের মতো দাঁত পরিষ্কারের গুণ ছিল।
৫. লেবুর রস আর বেকিং সোডা
বেকিং সোডা নিজে তো সুন্দর দাঁত সাদা করতে পারে। এর সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে নিলে বেকিং সোডার কার্যকারিতা আরও অনেক বেড়ে যায়। লেবু তো ন্যাচারাল ব্লিচ, তাই খুব ভাল দাঁত পরিষ্কার করে। বেকিং সোডা আর কয়েক ফোঁটা লেবুর রস ভাল করে মিশিয়ে নিন একটা পেস্টের মতো। এই পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন। খুব তাড়াতাড়ি ফল বুঝতে পারবেন।
৬. অ্যাপেল সিডার ভিনিগার
রোগা করার পাশাপাশি দাঁতের থেকে লালচে বা হলদেটে দাগ তুলে ফেলতেও কিন্তু অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খুবই কার্যকারী। যেহেতু এটি অ্যাসিডিক, তাই দাঁতের থেকে দাগ ছোপ সহজেই উঠিয়ে আনতে পারে। অ্যাপেল সিডার ভিনিগারের মধ্যে ব্রাশ ডুবিয়ে সেটি দিয়ে মাজুন। তারপর মুখ ধুয়ে নিন। টানা দুই মাস করলে দাঁত সাদা হয়ে আসবে।
৭. নুন আর বেকিং সোডা
বেকিং সোডার সঙ্গে নুন মিশিয়ে সেই মিশ্রণ দিয়ে দাঁত মাজলেও দাঁত ঝকঝকে হয়ে আসে। নুন খুব তাড়াতাড়ি দাঁতের ময়লা তুলে দেয়। বেকিং সোডার মধ্যে নুন আর জল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই পেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করুন। দিনে দু বার করুন খুব ভাল ফল পেতে। নুন ক্যালসিয়াল যুক্ত দাঁতের মজবুত গঠনেও সাহায্য করবে।
৮. পাউডার মিল্ক
শুনে বিশ্বাস হচ্ছে না! কিন্তু পাউডার মিল্ক দাঁত সাদা করতে পারে হলদে ভাব দূর করে। মিল্ক পাউডারের মধ্যে ব্রাশ নিয়ে তারপর মাজুন দুই মিনিট ধরে। এভাবে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁত থেকে হলদে বা লালচে ভাব উঠে যাবে। যেহেতু মিল পাউডারে ক্যালসিয়াম থাকে আর ক্যালসিয়াম দাঁতের জন্য ভাল, তাই মিল্ক পাউডার দিয়ে দাঁত মাজলে দাঁত মজবুত আর চকচকে হয়।
৯. অরেঞ্জ পিল
শীতের সময়ে কমলালেবু খেয়ে খোসা ফেলে দেবেন না। এই খোসা দাঁতের জন্য খুব ভাল। বিশেষ করে দাঁতের থেকে দাগ তুলতে এই খোসা খুবই কার্যকারী যেহেতু এটি অ্যাসিডিক। অরেঞ্জ পিল নিয়ে অল্প শুকিয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিন। তারপর একটু গুঁড়ো মতো করে নিয়ে দাঁত ঘষুন। মনে রাখবেন, অরেঞ্জ পিল দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করার পর কিন্তু এমনি মাজন দিয়েও একবার আপনাকে দাঁত পরিষ্কার করতে হবে।
১০. কিছু খাবার বাদ দেওয়া
দাঁতে আটকে থাকতে পারে এরকম স্টিকি খাবার কম খেতে হবে। এছাড়া পান, গুটখা কম পাওয়া আর স্মোক না করার দিকে নজর দিতে হবে। চুইংগাম, অতিরিক্ত চিনি থাকা জিনিস চিবিয়ে খাওয়াও বন্ধ করা উচিত। তাহলেই দাঁতের ওপর সহজে লালচে দাগ হবে না।
এই কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখলে দাঁত সহজেই পরিষ্কার আর সাদা থাকবে, ঝকঝক করবে।
Jayati Saha
Onek dhonnobad eigulu amader sathe share korar jonno