দেবতাদের দেবতা হলেন মহাদেব, তাই তাঁকে বলা হয় দেবাদিদেব। কিন্তু ভক্তের কাছে দেবাদিদেব-এর চাহিদা কিন্তু খুবই সামান্য। বলা হয়, মহাদেব হলেন আপনভোলা, তাই তিনি ‘ভোলা বাবা’। মন দিয়ে ভক্তিভরে মহাদেবকে ডাকলে মন থেকে বাবার কাছে কিছু চাইলে বাবা তাঁর কোনও ভক্তকেই ফেরান না।
শ্রাবণ মাসে তারকেশ্বরের মতো পুণ্যভুমিতে মানুষ হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন বাবার আশীর্বাদ লাভের জন্য। আর আজ শিবরাত্রি তাই আপনাদের জন্য রইল কয়েকটি খুব সহজ নিয়ম, যেগুলি মেনে চললে মহাদেবকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন সহজেই।

১) শুদ্ধ বস্ত্রে জল ও মধু দিয়ে স্নান
মহাদেবের পুজো করার আগে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করুন। শরীর-মন শুদ্ধ থাকলেই আপনার ডাক পৌঁছে যাবে এই সর্বশক্তিমানের কাছে। এরপর শুদ্ধ বস্ত্রে শিব লিঙ্গে দুধ ঢালুন। জল এবং মধু দিয়ে স্নান করান। একে খুব শুভ বলে মনে করা হয়। এতে মহাদেব অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। বলা হয় এমনটা করলে সাংসারিক সমস্যা, চাকরি ক্ষেত্রে এমনকী ব্যবসায়িক দিকেরও নানা সমস্যা মিটে যায় সহজে।
২) মহাদেবের প্রিয় খাবার
মহাদেবের পুজোর সময় নিশ্চয় ভোগ অর্পণ করবেন। কী উৎসর্গ করবেন তাঁকে। জানলে অবাক হবেন, তাঁর খুব পছন্দের খাবারের তালিকায় রয়েছে দই, পিটে-পুলি, আর বেশি করে চিনি দিয়ে তৈরি করা দুধ। সেইসঙ্গে পুত্র গণেশের মতো লাড্ডু খেতেও পছন্দ করেন মহাদেব। কি অবাক হচ্ছেন তো? গাঁজা ভাঙ খান মহাদেব- এমন ধারণা সকলের মনে থাকলেও এগুলি কিন্তু মহাদেবের প্রিয় খাদ্যের তালিকায় নেই।
৩) পছন্দের ফুল
পুজোর জন্য ফুল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাচার। ধুতুরা এবং আকন্দ ফুল মহাদেবের খুবই পছন্দের। এই ফুল দিয়ে পুজো করলে দেবাদিদেব খুবই প্রসন্ন হন। তবে অনেকেই জানেন না বেল গাছের ফুল কিন্তু মহাদেবের খুবই পছন্দের। তবে সুগন্ধযুক্ত বেলফুলের কথা কিন্তু এখানে বলা হচ্ছে না। বেল গাছে ফল ধরার আগে যে ফুল হয় সেই ফুলই মহাদেবের পছন্দের। পারলে সেই ফুল নিবেদন করুন বাবাকে।
৪) ভস্ম
শিব লিঙ্গে জল ঢালার পাশাপাশি মহাদেবকে উৎসর্গ করতে পারেন ভস্ম। ভস্ম দিলে মহাদেব খুবই প্রসন্ন হন।
৫)চন্দন
চন্দন মহাদেবের খুব পছন্দের। শ্বেত চন্দন দিয়ে শিবলিঙ্গে তিলক কেটে দিন। শ্বেত চন্দন শীতল প্রকৃতির। বিশ্বাস করা হয় মহাদেবের লিঙ্গে শ্বেত চন্দন লাগালে জীবনে সুখ ও শান্তি নেমে আসে।
৬) বেল ফল
বেল ফল মহাদেবের খুব পছন্দের। বলা হয়, বেল হল পরমায়ুর প্রতীক। মহাদেবকে বেল নিবেদন করলে, যাঁর নামে নিবেদন করবেন, তিনি দীর্ঘায়ু লাভ করবেন। আর ভগবান শিবের কৃপাদৃষ্টি সদাসর্বদা তাঁর ওপর বজায় থাকবে।
৭) তুলসী মঞ্জরী
মহাদেবকে প্রসন্ন করতে হলে তাঁকে রঙিন ফুল দিয়ে কখনওই সাজাবেন না। মহাদেব কিন্তু রঙিন ফুল একেবারেই পছন্দ করেন না। রঙিন ফুলের বদলে মহাদেবকে নিবেদন করুন তুলসী মঞ্জরী। বিশ্বাস করা হয় যে তুলসী মঞ্জরী দিয়ে ভগবান শিবের উপাসনা করা হলে ভক্তের মুক্তিলাভের পথ খুলে যায়।
৮) বেলপাতা
বিল্বপত্র, অর্থাৎ বেলপাতা হল শিব পুজোর প্রধানতম উপকরণ। তিনটি পাতা সম্বলিত বেলপাতা ছাড়া মহাদেবের পুজো অসম্ভব। বেলপাতা দিয়ে পুজো করলে মহাদেব ভক্তের ওপর খুবই সন্তুষ্ট হন, এর জন্য শিব লিঙ্গের মাথার ওপর বেলপাতা রাখুন। তবে মনে রাখবেন শিবের পুজোয় তুলসীপাতা কখনওই চলে না।
৯) যথাযথ শুদ্ধিকরণ
শুদ্ধাচার পবিত্রতার লক্ষণ। মহাদেবকে বাড়িতে স্থাপন করলে তা যথাযথ নিয়ম মেনেই করা উচিত। ঠাকুরের সিংহাসন হোক বা বাড়ির যেখানেই মহাদেবকে বসান না কেন, তাঁকে জল-মিষ্টি দিতে ভুলবেন না। আর শিব লিঙ্গ বাড়ির এমন জায়গায় রাখুন যেখানে আপনার নিত্য যাতায়াত রয়েছে। যেখানে আপনি নিত্য পুজো করতে পারবেন। মহাদেবকে একা সকলের অগোচরে কখনওই রাখবেন না।
১০) সাপই মহাদেবের অলংকার
মহাদেবের যে প্রচলিত ছবি আমাদের মনে গেঁথে রয়েছে সেখানে মহাদেবের জটায় পাক খেয়ে থাকে সাপ। তাই সাপ অনেকটা মহাদেবের অলঙ্কারের মতো। তাই অষ্টধাতু বা পাথর যা দিয়েই শিব লিঙ্গ বানান না কেন, তার সঙ্গে সাপ যেন অবশ্যই থাকে।
মন্তব্য করুন