সমাজে নারী-পুরুষের ভেদাভেদ আজ যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে যতই মেয়েদের খাটো করে দেখানো হোক না কেন কয়েকটি বিষয়ে মেয়েরা কিন্তু ছেলেদের থেকে অনেকাংশেই এগিয়ে।
কোনও ভেদাভেদে না গিয়ে কোন কোন বিষয়ে ছেলেদের পিছনে ফেলে অনেক এগিয়ে মেয়েরা। তারপর নিজেরাই বিচার করুন!
১. মেয়েরাই ভালো শিক্ষার্থী
মেয়ে, তাই পড়াশোনা করে কী হবে, বিয়ে দিয়ে দেওয়াই ভালো, আর ছেলেরা পড়াশোনা করে শিক্ষিত হবে- এই ধারণা এখন অতীত। মুখের কথা নয়, জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের করা একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে পুরুষদের থেকে মহিলারা বেশি ভালো শিক্ষার্থী। গবেষণায় আরও জানা গিয়েছে, যে মেয়েরা পড়াশোনায় অধিক মনোযোগী।
২. মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা
সত্যি বলতে ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা কিন্ত বেশি মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। পুরুষরা হয়তো বলবেন, অল্পেতেই মেয়েরা কান্নাকাটি করে। তবে বলে রাখি, নিজেদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ এইভাবে করে থাকলেও, মানসিক চাপ সহ্য করার ক্ষমতা কিন্তু তাদের অনেক বেশি। ছেলেরা তাঁদের মানসিক চাপ ব্যক্ত করতে পারেন না বলেই চাপমুক্ত হতে পারেন না। অন্যদিকে মেয়েরা মানসিক চাপের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে আরও বেশি চাপ সহ্য করার ক্ষমতা রাখে।
৩. মেয়েরা বেশি স্বাস্থ্যকর খাবার খায়
যেসব ছেলেরা দাবি করেন যে, মেয়েরা ছেলেদের টাকায় বসে বসে খায়, তাঁদের বলে রাখি মেয়েরা কিন্তু যতটুকু খায় তা স্বাস্থ্যকর। মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে ১৪০০০ মানুষের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে মেয়েরা ছেলেদের থেকে বেশি স্বাস্থ্যকর খাবার খান। অধিকাংশ ছেলেরা যখন পাস্তা, পিজা বা মাটনের দিকে ঝোঁকেন তখন অধিকাংশ মেয়ে কিন্তু ফল সবজি বেশি করে খান।
৪. সম্পর্ক বাঁচাতে মেয়েদের জুরি নেই
বৈবাহিক হোক বা প্রেমের সম্পর্ক কিংবা নিছকই বন্ধুত্বের সম্পর্ক- মেয়েরা কিন্তু ছেলেদের থেকে বেশি সম্পর্কের কদর বোঝে। সমীক্ষা বলছে ছেলেদের থেকেও মেয়েরা কিন্তু বেশি সম্পর্কে বিশ্বাসী। ছেলেরা অল্পেতে হাল ছেড়ে দেন, সম্পর্ক থেকে সরে আসার কথা বলেন। কিন্তু মেয়েরা ততটাই আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকতে চান। পুরুষ বন্ধুরা শুনছেন? দয়া করে সঙ্গীনিটিকে আর দুঃখ দেবেন না।
৫. মেয়েদের আইকিউ বেশি
আন্তর্জাতিক স্তরের একটি সমীক্ষায় উঠে এসেছে যে, মেয়েদের বুদ্ধ্যাঙ্ক বা ইনটেলিজেন্স কোশিয়েন্ট ছেলেদের চেয়ে বেশি। জনৈক গবেষক জেমস ফ্লাইন তাঁর গবেষণায় দেখেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইওরোপ, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, আর্জেন্টিনায় আইকিউ টেস্টে ছেলেদের থেকে মেয়েরা অনেকটাই এগিয়ে।
৬. স্মৃতিশক্তি মেয়েদেরই বেশি
জন্মদিন, বিবাহ বার্ষিকী, প্রথম দেখা হওয়া, বাচ্ছার স্কুলের মিটিং- সবকিছু মনে রাখার ক্ষেত্রে কিন্তু মেয়েরা ছেলেদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। এটা দৈনন্দিন সাংসারিক জীবনে আপনারা বারবারই অনুভব করবেন যে, সাংসারিক চাপ হোক বা অফিসের প্রেশার-কারণ যাই হোক না কেন ছেলেরা কিন্তু সবজিনিস নিখুঁতভাবে মনে রাখতে পারেন না। ঠিক যেমনটা মেয়েরা পারে।
৭. সঞ্চয় করে কিন্তু মেয়েরাই
প্রাথমিকভাবে এটাই মনে হতে পারে যে, মেয়েরা কিন্তু বেশি শপিং করে তাই খরচও বেশি করে। কিন্তু আসল সঞ্চয়ের দিকে কিন্তু মেয়েরাই বেশি নজর দেন। অনেকসময় এমন হয় যে, ছেলেরা অতিরিক্ত খরচ করে ফেলে কিন্তু মেয়েরা সবকিছু সামলে বুঝে খরচ করে এবং বাজেট মাথায় রেখেই চলে।
৮. মেয়েরাই কিন্তু বেশি পরিচ্ছন্ন
ছেলেরা প্রায়শই মেয়েদের এই স্বভাবকে শুচিবাইগ্রস্ততা বলে আখ্যা দিলেও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবন-যাপন করা আমাদের সকলেরই কর্তব্য। কিন্তু বাড়ি-ঘর বা নিজের ব্যবহার্য জিনিসের প্রতি মেয়েদের মতো করে যত্ন কেউ নিতে পারেন না, ছেলেরাও না। সমীক্ষা বলছে একজন মহিলার ব্যবহৃত জিনিসে ছেলেদের তুলনায় ১০-২০ শতাংশ কম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়।
৯. নেতৃত্ব দানে মহিলারাই শ্রেষ্ঠ
বিষয়টি সামান্য বিতর্কিত বলে মনে হলেও বিশেষজ্ঞরা বলেন, মেয়েরা বেশি ভালো শ্রোতা, পরামর্শদাতা, সমস্যার সমাধানকারী এবং একসঙ্গে একাধিক দিক সামলাতে পারে বলেই একজন পুরুষের থেকে একজন মহিলাই কিন্তু অধিক নেতৃত্বদানের ক্ষমতা রাখে।
১০. মানিয়ে চলার ক্ষমতা মেয়েদেরই বেশি
সেই প্রাচীনকাল থেকেই মেয়েদের মধ্যে মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। সাংসারিক জীবনে সফল হওয়ার একমাত্র চাবিকাঠি এই ফর্মুলা। একজন মেয়ে যত সহজে সবকিছু মানিয়ে নিতে পারে, বিশেষত বিয়ের পর, তা কিন্তু সত্যিই ছেলেরা পারে না।
এই নিবন্ধ কিন্তু পুরুষকে খাটো করে দেখানোর জন্য নয়। বরং আজকের যুগে এসেও বিভিন্নক্ষেত্রে মেয়েরা যে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েন সেখান থেকে তাঁদের বেরিয়ে আসার জন্য উৎসাহ দেওয়া মাত্র।
মন্তব্য করুন