করোনার জন্য আমরা এমনিতেই এখন খুব ভয়ে ভয়ে আছি। তার ওপর এই সময়ে আবার খুবই ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। আর যে সব অঞ্চলে এমনিতেই মশার উপদ্রব খুব বেশি, সেখানে তো ম্যালেরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা ভালোই থাকছে। আর এখন এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গু বা ম্যালেরিয়া যাই হোক না কেন, চিকিৎসা করতে কিন্তু সমস্যায় পড়তে হবে। আর তার জন্য আগে থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই ব্যবস্থাটি হল মশারি। আজ মশারি ব্যবহার করার ১০টি উপায় আপনাদের জানাবো এই আর্টিকেলে।
১. প্রাণঘাতী রোগ থেকে রক্ষা
যেমন বলেছিলাম শুরুতে, এখন কিন্তু ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার সময়। তাই এই সময়ে মশার থেকে সাবধান থাকতে রাতে বা যদি দুপুরে ঘুমোন তখন মশারি অবশ্যই ব্যবহার করুন। ইয়োলো ফিভার, জিকার মতো প্রাণঘাতী রোগ কিন্তু মশার থেকেই হয়েছিল বাইরের দেশে। আর একটা তথ্য আপনাদের দিয়ে রাখি। আফ্রিকায় মশারি ব্যবহার করে ৭৫ শতাংশ মানুষ মুক্তি পেয়েছেন ম্যালেরিয়া থেকে। আমাদের বাংলাও কিন্তু ম্যালেরিয়ার আদর্শ জায়গা। তাই আমাদের মশারি ব্যবহার করা উচিৎ।
২. অন্য পোকা থেকে রেহাই
মশারি খাটিয়ে শুলে মশা থেকে তো রেহাই পাবেনই, সঙ্গে সঙ্গে অন্য পোকা থেকেও রেহাই পাবেন। আমরা তো মাছি, ছারপোকার মতো অনেক কীট-পতঙ্গের সমস্যায় ভুগি। রাতে মশারি খাটিয়ে শুলে কিন্তু আপনি এই সমস্ত ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্তি পাবেন।
৩. সম্পূর্ণ নিরাপত্তা
আপনি যদি মশার ধুপ বা কোনও ক্রিম ব্যবহার করেন সেটি কিন্তু আপনার ক্ষতি করছে। মশার ধুপের ক্ষতিকর ধোয়া যেমন আপনার ফুসফুসের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে, তেমনই মশা থেকে রক্ষা পেতে যে ক্রিম ব্যবহার করেন তা আপনার স্কিনে কিছু সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই এই সব সমস্যা থেকে একেবারে রক্ষা পেতে মশারি ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো।
৪. মশা মারতেও সাহায্য করে
এক ধরণের মশারি পাওয়া যায় যাতে বিশেষ রাসায়নিক মেশানো থাকে। একটু ভালো দোকানে গিয়ে আপনি এই মশারি পেয়ে যাবেন। এই মশারিতে থাকা রাসায়নিক মশা মেরে ফেলবে। অর্থাৎ মশারি খাটিয়ে আপনি নিজে নিরাপদে ঘুমোতে পারলেন, আর মশা মরেও গেল।
৫. শরীরের সার্বিক উন্নতি
মশা বা অন্য কোনও পোকার উপদ্রবে আপনার নিরবচ্ছিন্ন ঘুম হয় না। মাঝে মাঝেই যদি মশা মারতে হয় তাহলে ঘুমে বিঘ্ন ঘটে আর তার প্রভাব আপনার সারাদিনের কাজে পড়ে। আপনি ক্লান্ত হয়ে যান খুব তাড়াতাড়ি। কিন্তু মশারি থাকলে আপনি নিশ্চিন্তে, বিনা বাধায় অনেক ক্ষণ ঘুমোতে পারবেন। আর আমরা সবাই তো জানি, ভালো ঘুমোলে তার প্রভাব পড়ে শরীরের সার্বিক উন্নতিতে।
৬. ধুলো থেকে রক্ষা
আমরা অনেকেই গরম কালে জানলা খুলে ঘুমোতে পছন্দ করি। কিন্তু আবার এই ভয়টাও থাকে যে রাতে ঝড় হলে হু হু করে সব ধুলো বিছানায় এসে পড়বে। এর থেকেও কিন্তু রক্ষা করবে মশারি। মশারি খাটিয়ে আপনি নিশ্চিন্তে জানলা খুলে ঘুমিয়ে পড়ুন। ঝড় হলেও ধুলো সরাসরি বিছানায় বা আপনার গায়ে আসবে না। মশারি অনেকটাই আটকে দেবে।
৭. বাচ্চাদের জন্য অবশ্যই দরকারি
আমরা সব সময়ে দেখেছি বাচ্চাদের ঘুমনোর সময়ে ছোট মশারি খাটিয়ে দেওয়া হয়। এটা কিন্তু শুধুমাত্র যে পোকা বা মশা থেকে বাচ্চাদের রক্ষা করতে তা কিন্তু নয়। বাচ্চারা খুব জোরে হাওয়া সহ্য করতে পারে না। ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। তাই মশারি থাকলে তাতে ঠাণ্ডা হাওয়া সরাসরি লাগে না শিশুর গায়ে। ফলে বাচ্চা এবং বড়রা সকলেই ভালো করে ঘুমোতে পারবেন।
৮. গ্রামের দেশে একান্তই প্রয়োজন
এবার একটা অন্য দিক নিয়ে আলোচনা করি। দেখুন গ্রামের দিকে, বিশেষ করে সুন্দরবনের দিকে কিন্তু মশারি খাটিয়ে রাতে শুতে যাওয়া খুব দরকারি। ওই অঞ্চলে সাপের প্রকোপ খুব বেশি । মানুষের ঘরে সাপ ঢুকে যায়। আপনার খাটের চারপাশে যদি মশারি থাকে তাহলে সাপ আপনার সংস্পর্শ পাবে না। কিন্তু মশারি না টাঙানো থাকলে ফলাফল মারাত্মক হতে পারে।
৯. টাকার সাশ্রয়
একটা মশারি কিনে নিলে আপনাকে কত জিনিস কিনতে হবে না বলুন তো মাসে মাসে! মশার ধূপ, মশার কয়েল, মশার তেল, কোনও গায়ে মাখার ক্রিম, এই সবের খরচ আপনার কিন্তু কমে যাবে। যদি হিসেব করেন, ভালো কোম্পানির এই সব জিনিস কিনতে কিন্তু ভালোই খরচ হয়। এই বাজারে এই টাকাটা বেঁচে গেলেও বা ক্ষতি কি বলুন তো!
প্রতি মাসে মশা মারার রিপলেণ্ট কিনতে ১৬০ টাকার মত পরে বছরে খরচ গিয়ে দাড়ায় ১৯২০ টাকা। একবার ভালো দামের একটা মশারি কিনে নিলে প্রতিবছর ভাবুন কত টাকা আপনারা সাশ্রয় করতে পারবেন।
১০. ঘরের আলাদা সৌন্দর্য
এখন কিন্তু নানা রকমের, নানা রঙের মশারি কিনতে পাওয়া যায়। আপনি যদি ভাবেন মশারি খাটালে ঘর দেখতে বাজে লাগবে তাহলে সেটা কিন্তু ভুল ধারণা। এক ধরণের মশারি পাওয়া যায় যেটা খাটের ওপরে মাঝখান থেকে নিচের দিকে নামে। দেখতে অনেকটা তাবুর মতো লাগে। এরকম মশারি কিন্তু আপনার ঘরের শোভা বাড়াবে।
এখনও যদি আপনার মশারি না থাকে তাহলে কিনে আনুন। সব দোকান খুলে গেছে। কিনতে কোনও সমস্যা হবে না। মশারি খাটিয়ে ঘুমনো কিন্তু খুব ভালো অভ্যাস।
মন্তব্য করুন