মেহেদী, মেহেন্দী, মেন্দি, হেনা – ডাকা হোক যে নামেই, পরিচিত রয়েছে এর সবখানেই। এর রয়েছে ঔষধি গুণ। ছত্রাকরোধী হিসেবেও এটি দারুন কার্যকর। পৃথিবীর অনেক দেশে এটি উৎসবের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বাংলাদেশে ঈদ ও বিয়ে উপলক্ষে মেহেদীর ব্যবহার অনেকটা আবশ্যিকরূপে প্রচলিত।
এছাড়া চুলের যত্নে ও নখ রঙ করতে মেহেদীর জুড়ি নেই। সাধারণত ‘লসোন’ নামক এক প্রকার পদার্থের উপস্থিতির জন্যই মেহেদীতে রঙ হয়। মেহেদীর পাতাতে লসোন থাকে। যে গাছের পাতায় লসোন বেশি থাকে, সে গাছের ফলে বীজ কম হয়। মেহেদী থেকে তৈরি হয় নানান ধরনের সুগন্ধিও।
হাতের কাছে পাওয়া সহজলভ্য এই মেহেদী হয়ে উঠতে পারে আপনার দৈনন্দিন জীবনের অংশ। আসুন জেনে নেই মেহেদীর কিছু গুণাগুণ –
১. ব্যথা সারাতে
কাঁধের ব্যথা সারাতে মেহেদী পাতার রসের সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে মালিশ করলে ব্যথা কমে যায়। মেহেদী মিশ্রিত তেল বাত এবং বাতজনিত সব রকমের ব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মেহেদী গাছের ফুল মাথা ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। ব্যথার ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পেতে টানা দুই মাস নিয়মিত মেহেদী ব্যবহার করুন।
২. টাক দূর করতে
কয়েকটি মেহেদী পাতা সরিষার তেলের সঙ্গে দিয়ে জ্বাল দিয়ে নিন। এটি ঠান্ডা হয়ে গেলে মাথার তালুতে মালিশ করুন। এই তেল টাক পড়া প্রতিরোধ করবে। এছাড়া মেহেদী পাতার পেস্টের সাথে সরিষার তেল মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
৩. জীবাণুনাশক হিসেবে
মেহেদী পাতা বাটা বা পেস্ট পিঠ, ঘাড় এবং ঘামাচি আক্রান্ত স্থানে বা যে কোনো ধরনের চুলকানিতে লাগাতে পারেন। এটি ঘামাচি ও অন্যান্য চুলকানি এবং জ্বালাপোড়া হ্রাস করতে সাহায্য করবে। মেহেদী দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন মাউথওয়াশও। মেহেদী পাতার গুড়া পানিতে গুলিয়ে নিন। এবার এই পানি দিয়ে কুলকুচি করুন। এটি মুখের ঘা দ্রুত ভালো করে থাকে এবং মুখ জীবাণুমুক্ত করে তোলে।
৪. ক্ষত সারাতে
বারবার ফিরে আসে এরকম পুরনো ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে মেহেদী। মেহেদী পাতা বেটে এই ক্ষততে লাগিয়ে রাখুন, মুক্তি মিলবে সহজেই। নোংরা বা জীবাণুযুক্ত পানি লাগার ফলে বা দীর্ঘক্ষণ পানিতে কাজ করার ফলে আঙুলের মাঝের অংশে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই ক্ষততে মেহেদীর প্রলেপ লাগিয়ে রাখলেও ঘা খুব দ্রুত ভালো হয়ে যায়। হাত-পায়ের ফাটাও দূর করে মেহেদী।
৫. বলিরেখা দূর করতে
বয়সের ছাপ দূর করতেও মেহেদীর কোনো তুলনা নেই। ভাবছেন এতে ত্বক লাল হয়ে যাবে কি না? মোটেও লাল হবে না। আপনার প্রতিদিন ব্যবহৃত ফেসপ্যাক বা উপটানে কয়েক ফোঁটা মেহেদী পাতার রস মিশিয়ে নিন। ফেসপ্যাক বা উপটান দশ মিনিটের বেশি মুখে লাগিয়ে রাখবেন না। এভাবে নিয়মিত ব্যবহারে বলিরেখা হবে বিলম্বিত। মেহেদী পাতার রস পুরো মুখে লাগিয়ে দুই/তিন মিনিট পর ধুয়ে ফেললেও বলিরেখা দূর হয়।
৬. খুশকি দূর করতে
খুশকি দূর করতে মেহেদী বেশ কার্যকরী। সরিষার তেল, মেথি, মেহেদীর পাতা সিদ্ধ একসাথে যোগ করে চুলে ব্যবহার করুন। এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। অথবা মেহেদী পাতা বেটে সরিষার তেলের সাথে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে নিন। এতে করে পাবেন খুশকি মুক্ত ঝলমলে সুন্দর চুল। সেই সাথে চুলের গোড়াও হবে মজবুত।
৭. প্রাকৃতিক নেইল পলিশ
নখ ভালো ও রঙিন রাখতে মেহেদীর ব্যবহার চলে আসছে সেই সুপ্রাচীনকাল থেকেই। নখকুনি বা নখের ও এর আশেপাশের চামড়ার যে কোনো সমস্যার সমাধানে মেহেদী পাতা বাটা বা পেস্ট করে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে তুলে ফেলুন। রঙ গাঢ় করতে সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
৮. চুল পরা কমাতে
মেহেদী পাতা গুড়া করে অথবা বেটে নিয়ে এর সাথে টকদই ও লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এটি চুলের গোড়াসহ পুরো চুলে মেখে নিন। ত্রিশ থেকে চল্লিশ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুল পরা কমানোর পাশাপাশি চুলের ভেঙ্গে যাওয়া রোধ করে এবং চুলে সিল্কি ভাব আসে।
৯. চুল রঙ করতে
সাদা চুল রঙিন করতে বা কালো চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও মেহেদীর জুড়ি নেই। এক টেবিল চামচ কফি পাউডার পানিতে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। একটা পাত্রে মেহেদির গুঁড়া নিয়ে গরম কফির মিশ্রণটি মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এবারে চুল কয়েকটি ভাগে ভাগ করে এই প্যাক আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত ব্যবহার করুন। তিন ঘন্টা পর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। সাথে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন।
১০. ব্রণ দূর করতে
ব্রণের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে আছেন? সাথে ব্যথাও আছে? চিন্তা নেই, মেহেদী সবই দূর করবে। পানিতে কয়েকটি মেহেদী পাতা ভালো করে ফুটিয়ে নিন। কুসুম গরম থাকতে থাকতে এই ফুটানো পানি দিয়ে ধুয়ে নিন ত্বক। ব্রণ দূর হবে। ব্যথা দূর করতে মেহেদী পাতা চিপে রস বের করে ব্রণের উপর লাগিয়ে রাখুন। এতে ব্যথা গায়েব হবার পাশাপাশি ত্বকে ব্রণের দাগও থাকবে না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মেহেদী পাতা খুবই উপকারী। কিন্তু একেকজনের চুল ও ত্বক একেকরকম হয়ে থাকে। তাই মেহেদীতে কারো এলার্জি থাকলে ত্বকে বা চুলে ব্যবহার না করাই উত্তম।
মন্তব্য করুন