মেছতা এমন একটি সমস্যা যা পঁয়ত্রিশের কোঠা পেরোলেই নারী-পুরুষ সবাইকে ভুগিয়ে ছাড়ে। অপরিষ্কার ত্বক মূলত মেছতার প্রধান কারণ। প্রচলিত ক্রিম বা বিউটি ট্রিটমেন্টে মেছতা নির্মূল অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই আজকের আলোচনায় থাকছে মেছতার জন্য ঘরোয়া টোটকা যা মাখলে নিমেষে দাগ দূর হবে। চলুন জেনে নেই সেই ঘরোয়া টোটকাগুলো সম্পর্কে।
১. লেবুঃ
লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড ন্যাচারাল ব্লিচের কাজ করে৷ ফলে মেছতার দাগ ও অন্যান্য নানা দাগ নিমেষেই দূর হয়ে যায়। তাছাড়া এটি মুখের তেল চিটচিটে ভাব দূর করে এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে ত্বককে রক্ষা করে৷ আপনি চাইলে প্রতিদিনই লেবুর রস ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সেনসিটিভ স্কিনের ক্ষেত্রে একদিন পর একদিন ব্যবহার করতে হবে।
টাটকা পাতিলেবুর রসে তুলা ভিজিয়ে সরাসরি মুখে অ্যাপ্লাই করবেন। সেনসিটিভ স্কিন হলে রসের সাথে পানি বা মধু মিশিয়ে পাতলা করে নিতে হবে। দাগের উপর ১৫ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলবেন।
কমলালেবুর খোসাও মেছতার দাগ দূর করতে সাহায্য করে। এই খোসাতে আছে প্রচুর পরিমাণে সাইট্রিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি। এটি ত্বকের মৃত কোষ পুনরুজ্জীবিত করে বিধায় ত্বক দেখায় উজ্জ্বল। খোসা কড়া রোদে শুকিয়ে গুঁড়া করে কাঁচা দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।
২. টমেটোঃ
লেবুর মতো টমেটোতেও আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এটি ত্বকে টাইরোসিনেজের কার্যক্রম কমায়, ফলে ত্বকের কালো দাগ দূর হয়ে যায়। সপ্তাহে তিন-চারদিন টমেটো চটকে মুখে লাগাবেন। ১৫ মিনিট রেখে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলবেন। অল্প কয়দিনেই পাবেন মেছতাবিহীন সুন্দর মুখ।
৩. আলুঃ
মেছতার দাগ দূর করতে আলু একটি চমৎকার অপশন। এতে আছে ক্যাটেকোলেজ নামক এক ধরণের উপাদান যা ডার্ক সার্কেল দূর করতেও সাহায্য করে। আলু ব্লেন্ড করে বা রস নিয়ে মুখে সার্কুলার মোশনে ঘষুন এবং ১০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে আলু কুরিয়ে তাতে লেবুর রস মিশিয়ে ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। প্রতিদিন ব্যবহারে মুখের দাগছোপ উধাও হবে এক মাসের মধ্যেই।
৪. টকদইঃ
প্রতিদিন টকদই ব্যবহারে মাত্র এক মাসে পাওয়া যাবে পারফেক্ট ত্বক। সমপরিমাণ টকদই ও মধু ভালো করে মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করে নিন। মুখ পরিষ্কার করে নিন, তারপর মাস্ক লাগিয়ে ১০ মিনিট রেখে দিন। এরপরে ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। টকদই ও মধুর এই মাস্ক প্রতিদিন ব্যবহার করা যাবে।
৫. অ্যালোভেরাঃ
তাজা অ্যালোভেরার জেল মেছতার জায়গায় লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট ধরে মাসাজ করুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। মাসাজ না করে জেল ত্বকে শুধু লাগিয়ে রাখতে পারেন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন বা সারারাত রেখে দিন। এরপর শুধু পানিতে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইদিন ফ্রেশ জেল ব্যবহার করবেন।
২ চা চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১ চা চামচ লেবুর রস, এবং ১ চা চামচ চিনি একসাথে মিশিয়ে আলতো করে ত্বকে মাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিনদিন এই মিশ্রণটি ব্যবহার করতে পারবেন।
৬. মুলতানি মাটিঃ
রূপচর্চায় মুলতানি মাটির অবদান অপরিসীম। এটি ত্বকের মরা কোষ পরিষ্কার করে এবং বাড়তি তেল শুষে নেয়। এই মাটি মেছতা দূর করার জন্য বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা যায়। মুলতানি মাটি, গ্রিন টি, গোলাপজল, শসার রস, লেবুর রস, এবং পানি একসাথে মিশিয়ে ফেস প্যাক বানিয়ে নিন। মুখে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে মুলতানি ও টমেটোর রস একত্রে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে দুইদিনের বেশি মুলতানি মাটি ব্যবহার না করাই ভালো।
৭. অ্যাপেল সিডার ভিনেগারঃ
ম্যালিক অ্যাসিডে সমৃদ্ধ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মৃত কোষকে এক্সফোলিয়েট করে। তাই মেছতা ও অন্যান্য দাগ দূর হয়ে ত্বক দেখায় ভিতর থেকে ফর্সা। ১ টেবিল চামচ ভিনেগার ও ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে মেছতার জায়গায় লাগিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট পরে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন। শুধু দাগের উপর অ্যাপ্লাই করলে প্রতিদিন ভিনেগার ব্যবহার করতে পারবেন। পুরো মুখে লাগালে একদিন পর পর ভিনেগার অ্যাপ্লাই করতে হবে।
৮. তেলঃ
মেছতার দাগ দূর করতে তেলও কিন্তু পিছিয়ে নেই। বিভিন্ন রকমের তেলে যেসব পুষ্টি উপাদান থাকে তা মুখের দাগ হালকা করতে সক্ষম। তার সাথে সাথে এগুলো ত্বকে পুষ্টিও জোগায়।
২-৩ ফোঁটা হালকা গরম আমন্ড অয়েল মেছতার জায়গায় মাসাজ করুন। ১ ঘন্টা পরে ধুয়ে ফেলুন। ভিটামিন এ এবং ই তে পরিপূর্ণ এই তেল ন্যাচারাল ব্লিচিংয়ের কাজ করে।
শুকনো, পরিষ্কার মুখে ২-৩ ফোঁটা আরগান অয়েল মাসাজ করুন। রাতে ঘুমানোর আগে মাসাজ করবেন, সকালে মুখ ধুয়ে ফেলবেন। আরগান অয়েলের ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই, এবং ক্যারোটিনয়েডস মেছতার দাগ দূর করে এবং ইউভি রশ্মির প্রভাব কমায়।
আঙ্গুলের ডগায় সামান্য অলিভ অয়েল লাগিয়ে মুখে মাসাজ করতে থাকুন। ত্বক যখন তেল শুষে নিবে তখন মাসাজ বন্ধ করুন এবং ১ ঘন্টা রেখে দিন। সবশেষে হালকা গরম পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। দিনে দুই-তিনবার অলিভ অয়েল মেছতার উপর অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
১-২ ফোঁটা টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল নিয়ে মুখে ৫ মিনিট ধরে মাসাজ করুন। কয়েক ঘন্টা পরে ধুয়ে ফেলুন। চাইলে রাতে ঘুমানোর আগে এটি করতে পারেন। দিনে একবার বা দুইবার এই তেল মেছতার জন্য ব্যবহার করা যাবে। টি ট্রি অয়েলের হিলিং প্রোপার্টিজ ত্বকে সুদিং ইফেক্ট এনে দেয়। এটি মেছতার দাগের সাথে সাথে ব্রণের সমস্যাও কমায়। সেনসিটিভ স্কিনের ক্ষেত্রে টি ট্রি-র সাথে অন্য যেকোন তেল যোগ করতে হবে।
মন্তব্য করুন