“এসো হে বৈশাখ এসো এসো”। অপেক্ষার অবসান শেষ। আজ বাঙালির নতুন বছরের আগমন। সকলকে জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন। ১২ মাসে ১৩ পার্বণ কথাটি বাঙালির প্রতি এক প্রকারের বিশেষণ। নববর্ষের উদযাপন দিয়ে পালাপার্বণ পর্বের শুরু।
পয়লা বৈশাখ বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে নববর্ষকে স্বাগত জানানোর ধরন পাল্টেছে। বাঙালির সাবেকিয়ানা এখন আধুনিকতার নয়া মোড়কে বাঁধা পড়েছে ঠিকই কিন্তু বাঙালি আজও তার ঐতিহ্যকে বজায় রেখেছে। নববর্ষ পালন শুধু নয় তাকে সাদর আপ্যায়নে আলিঙ্গন করে বাঙালি।
পয়লা বৈশাখ হল বাংলা নববর্ষ বা নতুন বছর। পয়লা বৈশাখ হল বাংলা সনের প্রথমদিন। পশ্চিমবাংলা এবং বাংলাদেশে ‘নববর্ষ’ বিশেষ উৎসব হিসেবে পালন করা হয়। আসাম, ত্রিপুরা বাঙালি বসবাসরত জায়গায় এই দিনটি বিশেষ উৎসবের দিন। দেশী প্রবাসী প্রায় সব বাঙালির কাছে এটা খুশির দিন।নববর্ষ বাঙালিদের একটি সর্বজনীন উৎসব হিসাবে বিবেচিত।
তথ্যকথা নয় বাঙালি হিসেবে নববর্ষকে যাপন করতে চাই
নববর্ষ নিয়ে যখন লিখতে শুরু করলাম তখন মাথার মধ্যে অনেক বিষয় এসে বসেছিল।একবার ভাবলাম এই নববর্ষের ইতিহাস লিখি। কি? কেন? কবে? কোথায়? এইসব ‘ক’ কেন্দ্রিক প্রশ্নের উত্তর পর্ব। কিন্তু না তা লিখছি না। নববর্ষের ইতিহাস, ভূগোল যাই জানতে চান মাউসের ঘাড় ধরে ঘোরালেই জানতে পারবেন। আজ কোন তথ্যকথা নয়। বাঙালি হিসেবে নববর্ষকে শুধু যাপন করতে চাই।
এতক্ষণ ধরে যে বাঙালি বাঙালি করছি সেই বাঙালি কি হয়ে উঠতে পারলাম আমরা! আপনাদের কথা জানি না। আমি বোধ হয় হয়ে উঠতে পারিনি। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি নববর্ষ মানে যেন হিন্দুমেলা। থুড়ি ! ঐ নানান মেলা, যেগুলো আর কি ঠাকুর, দেবতা, কেন্দ্রিক। চড়কমেলা, চৈত্রসংক্রান্তি, আরও কত কি।
হিন্দুত্বের একটা তকমা যেন লেগে আছে। একটা জিনিস শুধু বুঝে উঠতে পারি না বাঙালি মানে কি শুধু হিন্দু না বাঙালি মানে যে বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা মানে! সে ধর্ম যাই হোক না কেন।কিন্তু না। এত বছর বয়েস হল দেখলাম না জাতি হিসেবে বাঙালিকে। বাঙ্গালি মানে যদি হিন্দু হয় তাহলে গোটা ভারতবর্ষের সব হিন্ধু, বাঙালি! আবার গুলিয়ে ফেলেছি! এই জন্যই আমার বাঙালি হয়ে ওঠা আর হল না।
আমি হিন্দু আমার মাতৃ ভাষা বাংলা কিন্তু আমি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়েছি। তাই সারা বছর আমি বাংলায় কথা বলতে গিয়ে তোতলাই, কেউ বেশি বাংলা বললে তাকে ভাবি অশিক্ষিত। আর নিজেকে ভাবি হেব্বি পণ্ডিত। সেই আমি বাংলা নববর্ষের দিন আপাদমস্তক বাঙালি হয়ে উঠি। যাকে বলে খাটি বাঙালি। এই দ্বিচারিতার অর্থ আজও আমার কাছে স্পষ্ট নয়। কেন আমি একদিন গর্ব করি বাকি দিন গুলো নিজেকে ছোট করি। উত্তর খুঁজেছি পাইনি। আপনাদের জানা থাকলে জানাবেন।
অন্যদিকে একটা দেশ তার মাতৃভাষার জন্য যুদ্ধ করলো। ‘মুক্তিআন্দোলন’ বিশ্বের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন যেখানে মাতৃভাষার জন্য লড়াই করে প্রান দিয়েছে সাধারণ মানুষ। সেই সব মানুষ আজ শুধু ধর্ম দিয়ে চিহ্নিত হয় আমদের কাছে। আমরা বাঙালি তারা মুসলমান। হ্যাঁ ঠিকই বুঝেছেন বাংলাদেশের কথা বলেছি। যে দেশ জন্ম নিয়েছে মাতৃভাষাকে কেন্দ্র করে। বাঙালি যদি বলতেই হয় তাহলে নিজের মাতৃভাষাকে সন্মান করুন। জাতি আর ধর্ম যে এক নয় সেটা আগে বুঝুন তারপর চিৎকার করুন হিন্দুত্ববাদ নিয়ে।
যাইহোক শুভ নববর্ষ বলে গিয়ে কি সব যে বলে ফেলাম নিজেই জানি না। তবে যা বললাম তা এক কান দিয়ে নিয়ে অন্য কান দিয়ে… বুঝে গেলেন কি বলতে চাইলাম! সাব্বাস বাঙালি। আপনাদের কথা মত তাহলে বাঙালি হয়ে ওঠার চেষ্টা করবো নতুন বছর থেকে।
মনে প্রানে মানবো যে বাঙালি মানে যে বাংলায় বাস করে, যার মাতৃ ভাষা বাংলা। হিন্দু মুসলমান বা অন্য ধর্মনির্বিশেষে বাঙালি হয়ে ওঠা যায়। বাংলায় কথা বলা মানে অশিক্ষিত ভাবা নয়, নিজের মাতৃ ভাষাকে সন্মান করলে বাঙালি হয়ে ওঠা যায়। তাহলে বন্ধুরা চলুন নববর্ষ বাঙালি হিসেবে সবাই এক সাথে পালন করি। শুভ নববর্ষ মন খুলে বলি এতে যেন কোন প্রকার জড়তা না থাকে।
মন্তব্য করুন