উজ্জ্বল সুন্দর ত্বক পেতে, ত্বকের বার্ধক্যরোধে, ব্রণর হাত থেকে মুক্তি পেতে ও ডার্ক সার্কেলের হাত থেকে মুক্তি পেতে প্রতিটি মানুষই নাইট সিরাম ব্যবহার করে থাকেন। সেই কারণে ত্বকের প্রত্যেকটি সমস্যার জন্য আলাদা আলাদা নাইট সিরাম পাওয়া যায়।
এখন আপনার যদি চার পাঁচ রকমের সমস্যা থাকে, তাহলে আপনাকে অনেকগুলি নাইট সিরাম ব্যবহার করতে হবে। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ার জন্য সকলের পক্ষে তা সম্ভব না। তাই ত্বকের সমস্ত সমস্যার জন্য একটি ঘরোয়া নাইট সিরাম বানিয়ে নিতে পারেন আপনি। কীভাবে বানাবেন? চলুন জেনে নিই।
নাইট সিরাম বানানোর উপকরণঃ
- ক. চাল
- খ. অ্যালোভেরা জেল
- গ. একটি বেস ওয়েলঃ আমন্ড ওয়েল /রোজ ওয়েল
- ঘ. গোলাপ জল
- ঙ. ভিটামিন ই ক্যাপসুল
- চ. এসেনশিয়াল অয়েলঃ টি ট্রি ওয়েল
উপরে উল্লেখিত প্রত্যেকটি উপাদান ত্বকের যত্নের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নাইট সিরাম বানাতে এই উপাদানগুলির ব্যবহার করলে ত্বকের বার্ধক্য আটকানোর সাথে সাথে ত্বকের উজ্জলতা আসবে, ব্রণ ও ডার্ক স্পট জনিত সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে ও ত্বক ময়শ্চারইজ হবে।
কীভাবে বানাবেনঃ
- ক. নাইট সিরাম বানানোর জন্য প্রথমে দুই চামচ চাল নিন ও সেটাকে ভালো করে ধুয়ে নিন।
- খ. একটি প্যান নিন ও তাতে চার চামচ মতো জল নিন।
- গ. এই প্যানের মধ্যে এইবার দুই চামচ যে চাল আছে সেটা ঢেলে দিন।
- ঘ. এরপর পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের জন্য আপনি গ্যাসে বসিয়ে এটি নাড়াচাড়া করে নিন। এই সময় দেখবেন জলটা সাদা হয়ে যাচ্ছে।
- ঙ. এরপর এটিকে ঠান্ডা হওয়ার জন্য দশ পনেরো মিনিট ছেড়ে দিন।
- চ. ঠান্ডা হওয়ার পর একটি ছাঁকনি দিয়ে জলটা ফিল্টার করে ছেঁকে নিন। দেখবেন এইবার দুই চামচ মত জল আপনি পেয়ে যাবেন।
- ছ. এর মধ্যে এক চামচ অ্যালোভেরা জেল এইবার দিয়ে দিন।
- জ. এরপর এর মধ্যে এক চামচ তেল মিশিয়ে নিন। যদি নরমাল স্কিন হয় তা হলে এক চামচ রোজ ওয়েল দেবেন, যদি আপনার স্ক্রিন ড্রাই হয় তাহলে দেড় চামচ রোজ ওয়েল নেবেন আর যাদের স্কিন অত্যন্ত ড্রাই তারা দুই চামচ দিতে পারেন। যাদের স্কিন অয়েলি বা কম্বাইন্ড তারা আধা চামচ রোজ ওয়েল দেবেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, যদি আপনার কাছে রোজ ওয়েল না থাকে তাহলে আপনি এর বদলে আমন্ড অয়েলও দিতে পারেন। যদি তাও না থাকে তাহলে রোজ অয়েল ঘরেই বানিয়ে নিতে পারেন।
১ . কীভাবে রোজ অয়েল বানাবেন জেনে নিনঃ
- রোজ ওয়েল বানানোর জন্য নিয়ে নিন একটি গোলাপ। এই গোলাপের থেকে পাঁচ ছয়টি পাঁপড়ি নিয়ে নিন ও এগুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে নিন। এর ফলে যখন এর থেকে তেল বের করবেন তখন গোলাপের রসটা ভালোমতো বেরিয়ে আসবে।
- এরপর একটি পাত্রে অলিভ অয়েল নিয়ে নিন। অলিভ অয়েল না থাকলে আমন্ড ওয়েল নিন। এইবার ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে গ্যাসে রাখুন।
- তবে গ্যাসে ডাইরেক্ট এটি দেবেন না। ডবল বয়লার মেথডে ব্যবহার করুন। ডবল বয়লার মেথডে দেওয়ার জন্য একটি প্যানে জল নিন। তারমধ্যে আচারের কোটোর মতো একটি ছোট কোটোতে ঢাকনা এঁটে গোলাপের পাপড়ি শুদ্ধ তেল ভরে দিন। এবার গ্যাস জ্বালিয়ে চার থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
- চার থেকে পাঁচ মিনিট পর গ্যাস অফ করে ঠাণ্ডা হতে দিন।
- মিশ্রণটি ঠাণ্ডা হয়ে গেলে একটি ছাঁকনি দিয়ে তেলটা ছেঁকে নিন। ব্যাস, আপনার রোজ অয়েল রেডি। এটিকে এইবার আপনি ফ্রিজে রেখে দিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। তবে সাত দিনের মধ্যে এটাকে ব্যবহার করে নিতে হবে। তাই অল্প পরিমাণে এটি তৈরি করে নিলেই হবে।
সিরামের মিশ্রণের মধ্যে এইবার গোলাপ জল নিন এক চামচ। এসেন্সিয়াল অয়েল এর ক্ষেত্রে টি ট্রি অয়েল নিন। যাদের ব্রন প্রবণ ত্বক আছে তারা তিন থেকে চার চামচ মিশিয়ে নেবেন। এরপর এর মধ্যে ভিটামিন ই ক্যাপসুল তিনটি নিন। এইবার এইসব উপাদান গুলি ভালো মতো মিশিয়ে নিন। ব্যাস আপনার হোমমেড নাইট সিরাম রেডি।
কীভাবে ও কতদিনের জন্য ব্যবহার করবেন এই সিরাম
- ১. যদি আপনি শুধুমাত্র ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর জন্য এই নাইট সিরাম ব্যবহার করে থাকেন তাহলে এক সপ্তাহ ব্যবহার করলেই যথেষ্ট।
- ২. যদি আপনার ত্বক ব্রণ প্রবণ হয়, তাহলে এতে টি ট্রি অয়েলও দিন। যাদের ব্রণ ও ডার্ক সার্কেলের প্রবলেম হয় তারা এক মাস এটি ব্যবহার করুন।
- ৩. রাত্রের বেলায় এটি মুখে রেখে ঘুমিয়ে পড়ুন। সারারাতের জন্য মুখে লাগিয়ে রাখলে ভালো ফল পাবেন।
- ৪. অল্প পরিমাণে এই ক্রিমটি ডট করে গোটা মুখে নিয়ে হাত দিয়ে একটু মেখে নিন।
ঘরোয়া সিরাম কীভাবে সংরক্ষণ করবেন ও কতদিনের জন্য
এই সিরামটি সাত দিনের জন্য ফ্রিজের মধ্যে রাখতে পারেন। এক মাস ব্যবহার করতে হলে আপনাকে চারবার বানাতে হবে। এই সিরামটি কোন প্লাস্টিকের বোতলের রাখবেন না একটি কাঁচের ছোট শিশিতে রাখবেন।
মন্তব্য করুন