‘ওগো কাজল নয়না হরিণী’- হরিণে মতো কালো চোখের অধিকারী হতে চাইলে একমাত্র ভরসা হল কাজল। গাঢ় কালো কাজল চোখের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়ে।
তবে বাজারচলতি কাজলে থাকতে পারে ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপাদান, যা আপনাক ত্বক ও চোখের ক্ষতি করতে পারে। আর কাজল সাধারণত প্রতিদিন ব্যবহার করার প্রসাধনী, তাই এর কোয়ালিটিতে কম্প্রমাইজ করা উচিত নয়। তাই বাড়িতেই এই সহজ কয়েকটি পদ্ধতিতে বানিয়ে নিতে পারেন গাঢ় কালো কাজল।
প্রথম পদ্ধতি
উপকরণঃ
- ২ টেবিল চামচ চন্দনের গুঁড়ো
- এক টুকরো মসলিন কাপড়
- ঘি
- আমন্ড বাদাম- ৩-৪টি
- মাটির প্রদীপ
পদ্ধতিঃ
প্রথমে চন্দনের গুঁড়োতে সামান্য জল মিশিয়ে একটি পেস্ট বানান, এরপর এতে মসলিনের কাপড় ডুবিয়ে রাখুন এবং রোদে শুকোতে দিন। এরপর পলতে তৈরির জন্য শুকনো কাপড়টি রোল করে দিন। এবার পলতেটি প্রদীপে রেখে তাতে ঘি দিন এবং প্রদীপ জ্বালান। এবার আমন্ড বাদাম একটি কাঁটাচামচে গেঁথে নিন। এবার বাদামটি প্রদীপের শিখার উপরে ধরুন। এরপর বাদাম পুড়ে যে ভুসা-কালির সৃষ্টি হবে সেটাই হল কাজল। এবার সেটি একটি কৌটোতে ভরে রাখুন।
দ্বিতীয় পদ্ধতি
উপকরণঃ
- দুটি সমান আকারের বাটি
- একটি প্রদীপ
- ক্যাস্টর অয়েল
- খাঁটি সুতির পলতে
- একটি তামার পাত্র/প্লেট
পদ্ধতিঃ
প্রথমে প্রদীপে ক্যাস্টর অয়েল নিন। এরপর তুলো দিয়ে সরু করে পলতে বানিয়ে প্রদীপের ওপর রেখে প্রদীপ জ্বালান। দুটি বাটিকে সমানভাবে রেখে তারওপর প্লেটটি রাখুন একেবারে প্রদীপের শিখা বরাবর। প্লেটের ভেতরের অংশটি প্রদীপের শিখার ওপরে ধরুন, কারণ এতেই কালিটা জমা হবে। এই পদ্ধতিতে অনেক সময় প্রয়োজন তাই আপনি যদি রাতে এটি বানান, তবে সবচেয়ে ভালো। খেয়াল রাখবেন প্রদীপটি যেখানে রাখা হবে সেখানে যেন বাতাস না আসে।
প্রদীপটি প্রায় দশ ঘন্টা জ্বলতে দিন। এবার প্লেটটি সাবধানে উল্টে নিন। প্লেটটি মারাত্মক গরম হতে পারে তাই তোয়ালে দিয়ে ধরুন। এবার একটি ছুরির সাহায্যে কালিটি বের করে দিন। এবার একটি পরিষ্কার পাত্রে সেটি সংরক্ষণ করে নিন এবং কয়েক ফোঁটা তেল যোগ করুন।
তৃতীয় পদ্ধতি
উপকরণঃ
- মাটির প্রদীপ
- ক্যাস্টর অয়েল
- অ্যালোভেরা জেল
- একটি প্লেট
- দুটি সমান আকারের বাটি
পদ্ধতিঃ
প্রথমে মাটির প্রদীপে ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে জ্বালান। এবার একটি প্লেটে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে নিন। এপবার প্রদীপের শিখা বরাবর অ্যালোভেরা মাখানো প্লেটটি ধরুন। এই পদ্ধতিতে কাজল বানাতে ৭-৮ ঘণ্টা লাগতে পারে, এর জন্য দুটি বাটির সাহায্যে স্ট্যান্ড তৈরি করুন। অ্যালোভেরা পুড়ে যে কালো কালি তৈরি হবে তা থেকেই পেয়ে যাবেন গাঢ় কালো কাজল। একটি ছুরির সাহায্যে ভুসা-কালি একটি পরিষ্কার পাত্রে সংরক্ষণ করে রাখুন।
চতুর্থ পদ্ধতি
উপকরণঃ
- ছোট্ট একটি মসলিনের কাপড়
- ৩-৪ জোয়ানের বীজ
- চন্দনের পেস্ট
- তামার প্রদীপ
- তামার প্লেট
- সমান আকারের দুটি বাটি
- ক্যাস্টর অয়েল
পদ্ধতিঃ
মসলিনের কাপড় চন্দনের পেস্টে ভিজিয়ে হালকা রোদে শুকিয়ে নিন। প্রদীপ ক্যাস্টর অয়েলে ভরে নিন। প্রদীপের দুপাশে দু’টি বাটি রাখুন। এরপর চন্দন ভেজানো কাপড়ে জোয়ানের বীজ ভরে নিয়ে রোল করে পলতে পাকিয়ে নিন। এবার একটি প্লেট প্রদীপের ওপর রেখে কালি সংগ্রহ করুন। পুরো তেলটি যতক্ষণ না ফুরিয়ে আসছে কালি সংগ্রহ করে নিন। এবার প্লেট থেকে ছুরি দিয়ে কালি তুলে নিয়ে একটি পাত্রে সংগ্রহ করুন।
পঞ্চম পদ্ধতি
উপকরণঃ
- ১০টি কর্পুর
- ১টি তামার পাত্র
পদ্ধতিঃ
কাজল তৈরির এটি একটি দ্রুততম উপায়। এটি তৈরি হতে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগে। এরজন্য প্রথমে একটি পাত্রের মাঝখানে কর্পুরের টুকরোগুলি রাখুন। এবার কর্পুর জ্বালিয়ে দিন। কর্পুর উদ্বায়ী। পুরো কর্পুরটি জ্বলে যাওয়া পর্যন্ত অপক্ষা করুন। কর্পুর জ্বলে যাওয়ার পর যে ভুসো-কালির সৃষ্টি হবে সেটাই কিন্তু গাঢ় কাজল। আর এই কাজল চোখের জন্য খুব উপকারি।
মন্তব্য করুন