প্রাণায়াম হলো আদি ভারতবর্ষের একটা অকৃত্রিম যোগাভ্যাস যা দিয়ে শুধুমাত্র শ্বাসকার্যের দ্বারা শরীরকে সজীব ও প্রাণবন্ত রাখা যায়। কপালভাতি প্রাণায়াম শ্বাস প্রশ্বাস নির্ভর একটি ক্রিয়া যা আপনার শারীরিক,মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখে।
কপালভাতির এমন অনেক গুন আছে যা আপনার দৈনন্দিন জীবনের সমস্যাকে সমাধান করতে সক্ষম। কপালভাতি মাথার অনেক চ্যানেল খুলতে সাহায্য করে ফলে আপনার চিন্তা করার ক্ষমতা, পড়াশোনা হোক বা অফিসের কাজে ফোকাস করতে বিশেষভাবে সুবিধে হয়।
কপালভাতি কেন কপাল খুলবে?
- হ্যাঁ ঠিকই পড়েছেন। কপালভাতিই কিন্তু খুলতে পারে আপনার কপাল। এই প্রাণায়াম অত্যন্ত সহজ এবং সব ওজনের মানুষের জন্যই কনভেনিয়েন্ট।পাশাপাশি এটি করতেও জিম এ যেতে হয়না আর সময় এর সাশ্রয়ও হয়।
- কপালভাতি অভ্যাস করার আগে মনে রাখুন এটির সাথে আপনার কপাল এর যোগাযোগ প্রবল। তাই থেকে তো নামটা এসেছে। নাক, মুখ ও মাথার সংযোগস্থলের অংশে এই প্রাণায়াম বিশেষভাবে কাজ করে।
- এই অঞ্চলে থাকে আমাদের সাইনাস, তাই সাইনাস সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা সহজেই দূর করতে পারে এই প্রাণায়াম তাও শুধুমাত্র শ্বাস কৌশল দ্বারা।
- আমাদের শরীরে ৬০ হাজারেরও বেশি রক্তজালক রয়েছে যার ফলে কোষে কলায় রক্ত সঞ্চালন ও অক্সিজেন পরিবহন ঘটে। অক্সিজেন এর যোগান নির্ভর করে আমাদের স্বাভাবিক ব্রিথিং এর উপর। আমরা চিন্তাগ্রস্ত হলে শ্বাস ও দমের তারতম্য হয়।
- ফলে রক্তে অক্সিজেন ঠিক মতো সরবরাহ হতে পারেনা। এই জন্য মস্তিষ্ক, পাকস্থলী ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কাজকর্মে ব্যাঘাত হয় এবং আমাদের নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
- কপালভাতি ঠিক এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে এবং শরীরে অক্সিজেন এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের অস্থিরতা কমায়,পরিপাক,রক্তচাপ সহ একাধিক জিনিস ঠিক রাখে।
পদ্ধতি:
- প্রথমে একটি শান্ত ও নিরিবিলি জায়গা নির্বাচন করুন। সমতল জায়গায় আপনার সুবিধামতো পদ্মাসনে বা সুখাসনে বসুন মেরুদন্ড সোজা রেখে।
- দুটো হাত হাঁটুর উপর নিয়ে তর্জনী ও বুড়ো আঙ্গুল যুক্ত করে জ্ঞানমুদ্রা ধারণ করুন। চোখ বন্ধ করে রিল্যাক্স করুন ও স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস প্রশ্বাস নিন।
- ধীরে ধীরে শ্বাস এর গতি বাড়ান ও গভীর শ্বাস নিন ও ছাড়ুন। দ্রুত করবেন না কোনোভাবেই।
মূল ক্রিয়া:
- এইবার মুখ খুলে যতটা পারেন লম্বা শ্বাস নিন ও ধরে রাখুন। বুক যেন সামনের দিকে চিতিয়ে থাকে ও পেট ফুলিয়ে রাখুন এতে ফুসফুস এর ডায়াফ্রাম এ বেশি বাতাস প্রবেশ করবে।
- পরবর্তী ধাপে পেট সংকুচিত করে একটু একটু করে শ্বাস নাক দিয়ে বার করতে থাকুন।নাকে ধূলো বালি বা পোকা ঢুকলে আমরা যেমন ভাবে নাক ঝাড়ি ঠিক সেভাবে বাতাস বের করুন। নাক এ কোনভাবেই বেশি চাপ প্রয়োগ যেন না হয়।
- কয়েকবার করার পর আপনার শরীরে রক্ত চলাচল বাড়বে ও কান মুখ ইত্যাদি লাল হয়ে উঠতে দেখবেন আর মনে আসবে একটা বিকারহীন প্রশান্তি।
শেষ হয়েও হইলো না শেষ:
- এই প্রক্রিয়াটি ২মিনিট স্থায়ী হবে। চেষ্টা করুন একটি সিটিং এ পাঁচবার করে রিপিট করার।
- কপালভাতি ভোরবেলা করাই শ্রেয় এবং খাওয়ার ৩ঘন্টার মধ্যে এই আসন না করাই ভালো।
- কপালভাতি করার আগে ভস্ত্রিকা প্রাণায়াম ও পরে অনুলোম বিলোম করলে ফল আরো ভালো পাওয়া যায়।
উপকারিতা:
- ওবেসিটি, পেটের চর্বি নিয়ে যারা ওষুধ খেয়ে,জিম ডায়েট করেও ফল পান নি তাদের বলছি এটা একবার ট্রাই করে দেখুন পেটের গঠন তো টোনড হবেই সাথে পেটে গ্যাস ও হজম সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
- স্নায়ুতন্ত্র সজাগ হয়ে উঠবে। আগের থেকে অনেকবেশি এনার্জেটিক ফিল করবেন বাড়ির কাজ ও অফিসে। বাচ্চার সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা খেলেও আর ক্লান্ত হবেন না।
- ত্বক নিয়ে যারা সচেতন তাদের জন্য ও সুখবর। এটি ত্বকের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে ভীষণভাবে। ফাইন লাইন ও এজিং কম করে উল্লেখযোগ্য ভাবে।
- চুল এর জন্য ও কপালভাতি আশীর্বাদস্বরূপ। অকালপক্কতা, চুল ঝরে যাওয়া সহ একাধিক ঝঞ্ঝাট থেকে মিলবে মুক্তি।
- অনবরত শ্বাস নেয়ার ফলে ফুসফুস এর কার্যক্রম উন্নত হয়।কার্ডিওভাসকুলার রোগ,লিভার ও অগ্ন্যাশয় এর ফাংশন ঠিকঠাক চলে।
- মহিলাদের মাইগ্রেন,পিরিয়ড এর পীড়া থেকে অনেকাংশে সুরাহা হয়।
সতর্কতা সেইসব বিষয়ে যেগুলো থাকলে মোটেই করবেন না কপালভাতি:
- মাথাব্যথা
- পেটের পেশিতে যন্ত্রনা
- সদ্য অস্ত্রোপচার
- হার্নিয়া
- উচ্চ রক্তচাপ ও হাঁপানি
- নাক দিয়ে রক্তপাত
মন্তব্য করুন