রসগোল্লা, ল্যাংচা, রসমালাই—বাঙালীর প্রিয় মিষ্টির যদি নাম করতে বলেন তাহলে আপনাদের অনেকেরই তালিকায় নিঃসন্দেহে এই তিনটি মিষ্টির নাম সবার ওপরেই থাকবে। দোকান থেকে রসগোল্লা, ল্যাংচা, রসমালাই তো অনেক কিনে খেয়েছেন। এই তিনতে মিষ্টি খাবার জন্য কলকাতার তাবড় তাবড় নামজাদা মিষ্টির দোকান খুঁজে বেরিয়েছেন এমন মিষ্টিপ্রেমীর সংখ্যাও কলকাতায় বিরল নয়। কিন্তু এই তিনটে মিষ্টি বাঙালীর প্রিয় হলেও ঘরে সাধারণত সেভাবে কাউকেই বানাতে দেখা যায় না। রসগোল্লা বানিয়ে আপনাকে খাইয়েছেন কেউ বা ল্যাংচা, রসমালাই বানাতে পারদর্শী—এমন ঠাকুমা-দিদিমাই বা আপনি কজন দেখেছেন! তাই আসুন, আজ জেনে নেওয়া যাক রসগোল্লা, ল্যাংচা, রসমালাই বানানোর ঘরোয়া এবং সহজ রেসিপি।
বিজয়া দশমীতে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে প্রণাম করতে যাওয়া বলুন বা যেকোনো উৎসবে, অনুষ্ঠানে খাবার শেষে মিষ্টিমুখে স্পঞ্জি রসগোল্লা যদি না থাকে, তাহলে তো উৎসবের ভালোমন্দ খাবার আনন্দ ওখানেই অর্ধেক মাটি। কিন্তু কেনা রসগোল্লা তো অনেক হল, এবার আসুন বাড়ির লোকজনকে বাড়িতেই রসগোল্লা বানিয়ে চমকে নিন। জেনে নিন রসগোল্লা বানানোর পদ্ধতি।
ফুল ফ্যাট গোরুর দুধ ৪ কাপ, ২-৩ চামচ বা প্রয়োজনমত পাতিলেবুর রস বা ভিনিগার, ১ লিটার জল, ২ কাপ চিনি, ১ চামচ দুধ, ১ চামচ সুজি বা ময়দা, ১-২ চামচ গোলাপজল বা কেওড়ার জল।
একটি প্যানে দুধ নিয়ে হালকা আঁচে ফোটাতে বসান। দুধে সর পড়লে সেটাকে সরিয়ে দিন ও ক্রমাগত নাড়তে থাকুন যাতে তলা লেগে না যায়। এরপর দুধ ফুটতে শুরু করলে আঁচ কমিয়ে দিন ও অল্প অল্প করে লেবুর রস বা ভিনিগার মেশাতে থাকুন, যতক্ষণ না ছানা দুধ ছানা কেটে যায়। দুধ ছানা কেটে গেলেই গ্যাস নিভিয়ে দিন ও খানিকক্ষণ ছানাটাকে রেখে দিন, যতক্ষণ না পুরোপুরি ছানা কেটে যায় ও হালকা সবুজ জল বেরোতে শুরু করে। এরপর নরম কাপড়ে ছানাটাকে ভালো করে চিপে জল ঝরিয়ে শুকনো করে নিন। এমনভাবে চাপবেন যাতে একটুও বাড়তি জল না থাকে। ছানার মধ্যে জল থাকলে কিন্তু রসগোল্লা বানানোর সময় ভেঙে যাবে। এবার ৭-৮ মিনিট ছানার ওপরে ভারি কোন ওজন চাপিয়ে রাখুন। দেখবেন ছানাটা যেন অতিরিক্ত শুকিয়েও না যায়।
এবার কাপড় সরিয়ে একটা পাত্রে ছানাটা নিন তাতে সুজি বা ময়দা মিশিয়ে ভালো করে মাখুন। সুজি বা ময়দা ছানাকে আঁট করবে। এরপর বেশ কিছুক্ষণ ধরে ছানা ভালো করে হাত দিয়ে মাখুন যাতে মিশ্রণটি নরম ও মসৃণ হয়। মনে রাখবেন রসগোল্লা বানানোর সময় এই মাখাটাই কিন্তু সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। ছানা মাখতে মাখতে যখন তেলতেলে হতে শুরু করবে, তখন মাখা থামিয়ে ছোট ছোট গোল বলের মতো পাকান এবং বলগুলো ভিজে ন্যাকড়া দিয়ে চাপা দিয়ে সরিয়ে রাখুন।
এবার একটা বড় পাত্রে ২ কাপ চিনি ও ৪ কাপ জল নিয়ে গরম করতে বসান। এক চামচ দুধ দিন যাতে রসটা পরিষ্কার হয়। চিনির রস গরম হতে শুরু করলে নোংরাগুলো যখন ওপরে ভেসে উঠবে তখন চামচ দিয়ে আস্তে করে সেগুলিকে ফেলে দিন ও রস তৈরি হয়ে গেলে কাপড়ে ছেঁকে নিন। এবার দেড় কাপ রস আলাদা করে সরিয়ে রাখুন।
বাকি আড়াই কাপ রস আপনি আবার পাত্রে ঢালুন ও গ্যাসে হালকা আঁচে ফোটাতে বসান। এবার ছানার বলগুলো আস্তে করে এই রসের মিশ্রণে ছাড়তে থাকুন এক এক করে। সবকটা বল রসে ছাড়া হয়ে গেলে পাত্রটি ঢাকা দিয়ে গ্যাসের আঁচ বাড়িয়ে মিনিট পাঁচেক রেখে দিন। খানিক পর অল্প একটু চিনির রস দিয়ে পাত্রটি হালকা করে নাড়িয়ে নিন ও আবার চাপা দিয়ে রাখুন। এবার একটা কাপে জল নিয়ে একটা রসগোল্লা তুলে ফেলে দেখুন, যদি জলে রসগোল্লাটি ডুবে যায়, তাহলে আপনার রসগোল্লা রেডি। এবার চিনির রসে গোলাপ বা কেওড়ার জল মেশান ও রসগোল্লাগুলিকে ঠাণ্ডা হতে দিন। ব্যাস, আপনার রসগোল্লা রেডি।
শক্তিগড়ের বিখ্যাত ল্যাংচা খাননি এমন বাঙালী বোধহয় কমই আছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক ল্যাংচা তৈরির সহজ পদ্ধতি।
ছানা ৫০০ গ্রাম, দুধ ১/২ কাপ, ময়দা ১২৫ গ্রাম, চিনি ৫০ গ্রাম, ভাজার জন্য তেল বা ঘি, বেকিং সোডা ১/৪ চামচ, বড় এলাচ ৪-৫ টা, রসের জন্য চিনি ১ কেজি, জল ১ লিটার
ছানা, ময়দা, চিনি, অল্প ঘি, বেকিং সোডা এবং বড় এলাচের দানা একটা পাত্রে নিন। এবার ভালো করে মেশান ও ছানা মাখুন যাতে নরম, মসৃণ হয়। এবার মিশ্রণটি কয়েকটা সমান ভাগে ভাগ করুন ও ল্যাংচার মতো শেপ দিন। একটা বড় পাত্রে জল নিয়ে তাতে চিনি দিন ও ফোটাতে বসান যতক্ষণ না চিনি জলে পুরোপুরি গুলে যায়। হালকা ঘন রস তৈরি হয়ে গেলে এবার গ্যাস অফ করে দিন ও রসের থেকে নোংরাগুলোকে ছেঁকে নিন। এবার তেল ও ঘি কড়ায় গরম করুন ও ল্যাংচাগুলোকে ডিপ ফ্রাই করুন ও সামান্য পরে গরম রসে ফেলুন। দেখবেন রস যেন হালকা গরম থাকে নয়তো ল্যাংচার মধ্যে রস ঢুকবে না। বাড়িতে অতিথি এলে পরিবেশন করুন আপনার তৈরি ল্যাংচা, দেখবেন সবাই অবাক হয়ে যাচ্ছে।
১২-১৫ টা রসগোল্লা (আপনি কিনেও আনতে পারেন বা বাড়িতে বানিয়েও নিতে পারেন), ১ লিটার ফুল ফ্যাট গোরুর দুধ, ৪-৫ চামচ চিনি, ১০-১২ টা আমন্ড বাদাম, ১০-১২ টা পেস্তা বাদাম, ছোট এলাচের গুঁড়ো ১/২ চামচ, ১-২ চামচ গোলাপজল বা কেওড়ার জল, এক চিমটে কেশর।
গরম জলে আমন্ড ও পেস্তা বাদাম গুলিকে খানিকক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। এবার একটা পাত্রে ১ লিটার দুধ নিয়ে গ্যাসে হালকা আঁচে বসান। যখন দুধ গরম হবে তখন কেশর দিন। হালকা নাড়াচাড়া করার পর যখন কেশর থেকে রঙ বেরোতে শুরু করবে তখন দুধটাকে ঢিমে আঁচে বসিয়ে রাখুন। মাঝে মাঝেই নাড়াচাড়া করুন যাতে তলা লেগে না যায়। দুধ বেশ কিছুটা ঘন হয়ে এলে তাতে চিনি দিয়ে মেশান। আপনি খুব বেশী মিষ্টি পছন্দ না করলে চিনি নাও দিতে পারেন, কারণ রসগোল্লার রসে বেশ ভালো পরিমাণেই চিনি থাকে। এবার দুধে এলাচ গুঁড়ো দিন, তারপর ভেজানো আমন্ড ও পেস্তা বাদামগুলিকে স্লাইস করে কেটে দুধে দিন।
এবার রসগোল্লাগুলি থেকে বাড়তি রস ভালো করে চিপে দুধে ফেলুন। ৩-৪ মিনিট হালকা আঁচে গ্যাসে বসিয়ে রাখুন যাতে রসগোল্লার ভেতরে ভালো করে দুধ ঢোকে। এবার গ্যাস নিভিয়ে গোলাপজল বা কেওড়ার জল মিশিয়ে নাড়াচাড়া করে ঘরের টেম্পারেচারে এনে ঠাণ্ডা করে পরিবেশন করুন রসমালাই। দেখবেন খেয়ে সবাই কেমন আপনার প্রশংসা করছে।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…