রোজ সকালে উঠে এক গ্লাস গরম জলে মধু আর লেবুর রস আপনি নিশ্চয়ই খান।এর ফলে আপনি যে বেশ ছিপছিপে আছেন সেটাও জানি।কিন্তু আপনার শরীর থেকে মেদ সরানো ছাড়াও মধু অন্যান্য নানাভাবে আপনাকে সাহায্য করে।আপনি কি জানেন যে আপনার ত্বক আর চুলের জন্য মধু কত উপকারী?এতদিন অনেক ফেস প্যাক ব্যবহার করেছেন আর চুলে অনেক মধু দিয়েছেন জানি।কিন্তু মধুর গুণাগুণ না জেনেই তো দিয়েছেন।মধু কিন্তু খেতে যতটা ভালো,উপকারের দিক থেকেও ততটাই উপকারী।তাই আজ আসুন জেনে নিই মধু আমাদের ত্বক আর চুলের যত্নে আমরা কিভাবে কাজে লাগাতে পারি।
আমাদের ত্বকের সার্বিক যত্নে আমরা মধুকে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতেই পারি।সেই প্রাচীনকাল থেকেই মধু ত্বকের পরিচর্যায় আমাদের সঙ্গে আছে।
আপনার যদি ড্রাই স্কিন হয় তাহলে এই শীতে তার অবস্থা আরও খারাপ হতে চলেছে।চামড়া ফেটে অনেকসময় রক্ত পর্যন্ত পড়ে।যদিও অনেকটাই শীত জাঁকিয়ে পড়েছে,তাও এখনই সময় চলে যায়নি।আজ থেকেই মধু ব্যবহার করতে থাকুন।
উপকরণ
১ চা চামচ মধু,১ চা চামচ দুধ,১ চা চামচ লেবুর রস।
পদ্ধতি
সবকটি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে মুখে আর হাতে,গলায় লাগিয়ে নিন।২০ মিনিট রেখে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।শীতকাল বলে গরম জল ব্যবহার করতে পারেন।দু’সপ্তাহ পর থেকেই উপকার পেতে শুরু করবেন।
ফর্সা হোক বা শ্যামলা,উজ্জ্বলতা সবাই চায়।ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতেও কিন্তু মধুর তুলনা নেই।
উপকরণ
১ চামচ মধু,পরিমাণমতো টম্যাটোর রস।
পদ্ধতি
দুটি উপকরণ মিশিয়ে নিয়ে মুখে,হাতে,গলায় মেখে রাখুন ২৫ মিনিট মতো।তারপর ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন এক সপ্তাহ পর থেকেই আপনি স্কিনে আলাদা একটা গ্লো পেতে থাকবেন।তবে এটা সপ্তাহে ৩-৪ দিন করলে ভালো হয়।
অনেকসময়ই আমাদের শরীরে কালো দাগ হয়ে যায়।কখনো তা হতে পারে ব্রায়ের থেকে,আবার কখনো হতে পারে চশমা বা নাকের নথ থেকে।কিন্তু যে কোনো কালো দাগকেই দূর করতে মধু খুবই কার্যকরী।
উপকরণ
২ চা চামচ মধু,৩ চা চামচ গোলাপজল।
পদ্ধতি
দুটি উপকরণ ভালো ভাবে মিশিয়ে স্কিনে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট মতো।এরপর তুলে ফেলুন।সপ্তাহে ৪-৫ দিন করুন।দেখবেন যত পুরনো দাগই হোক না কেন,দু’সপ্তাহ পর থেকেই হাল্কা হতে শুরু করবে।
আজকাল কম বয়স থেকেই বলিরেখা হতে শুরু করে।আর বলিরেখা হওয়া মানেই বয়সের আগেই বুড়িয়ে যাওয়া।তাই আপনার চির তারুণ্য ধরে রাখুন মধু দিয়ে আর মুখে ভাঁজ হয়ে যাওয়া আটকান।
উপকরণ
পরিমাণমতো মধু,দুধ আর দই।
পদ্ধতি
সবকটি উপকরণ মিশিয়ে যেখানে ভাঁজ হয়ে যাচ্ছে সেখানে লাগিয়ে রাখুন প্রায় ১০ মিনিট মতো।হাল্কা শুকিয়ে আসলে তুলে ফেলুন।সপ্তাহে ৪ দিন মতো করুন এটা।বলিরেখা আর তো হবেই না,আগে যা হয়েছিল,সেটাও আস্তে আস্তে কমে যাবে।
যতই আমারা ভালো ভালো ফেস ওয়াশ ব্যবহার করি না কেন,সেগুলো লোমকূপের খুব গভীর থেকে ময়লা সবসময় বের করতে পারে না।কিন্তু মধু এক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ দেয়।অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্যাকটেরিয়াও হতে দেয় না।
উপকরণ
২টেবিল চামচ মধু,২-৩চামচ বেকিং সোডা।
পদ্ধতি
দুটি উপাদান খুব সুন্দর করে মিশিয়ে মুখে হাতে লাগিয়ে নিন।১০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।এরপর হাল্কা গরম জল দিয়ে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে তুলে ফেলুন।আপনি এটা পারলে রোজই করুন।দেখবেন এক সপ্তাহ পর থেকেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
এইটা একটা বড় সমস্যা।ব্রণ হওয়ার থেকেও বড় সমস্যা ব্রণর দাগ থেকে যাওয়া।কিছুতেই যেতে চায় না।কিন্তু কথা দিলাম মধু ব্যবহার করলে ব্রণ আর ব্রণর দাগ দুইই যাবে।
উপকরণ
২চামচ মধু,পরিমাণমতো লেবুর রস,চন্দনের গুঁড়ো।
পদ্ধতি
সবকটি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে ৩০ মিনিট মতো লাগিয়ে রাখুন।তারপর গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিন।দেখবেন আস্তে আস্তে কমে আসছে।চন্দনও ব্রণ সারাতে খুব কার্যকরী।খুব সময় না পেলে সপ্তাহে দু’দিন অন্তত করুন।
আমাদের গরমের দেশে রোদে পোড়া তো আমাদের ভবিতব্য।কিন্তু পোড়া দাগ তো রেখে দিতে পারি না।তাই মধু ব্যবহার করুন।
উপকরণ
পরিমাণমতো মধু,অ্যালোভেরার রস।
পদ্ধতি
মধু আর অ্যালোভেরার রস পোড়া অংশে লাগান।শুকিয়ে গেলে কিছুক্ষণ হাল্কা হাতে ম্যাসাজ করে তুলে ফেলুন।ম্যাসাজ করার সময় ব্যবহার করুন গরম জল।দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই ট্যান চলে যাচ্ছে।
ত্বকের মতো চুলের ক্ষেত্রেও কিন্তু মধু খুবই উপকারী।আপনি নানাভাবে মধু ব্যবহার করতে পারেন।
শ্যাম্পু করার পরই তো কন্ডিশনার লাগে।অনেক কন্ডিশনার লাগানোর সময় আপনি হয়তো দেখেছেন যে তাতে মধু আছে।তা মধু দিয়ে কন্ডিশনার নিজেই বানান না বাড়িতে এবার।
উপকরণ
২-৩ চামচ মধু,পরিমাণমতো নারকেল তেল।
পদ্ধতি
শ্যাম্পু করার পর এই দুইয়ের মিশ্রণ চুলে লাগিয়ে নিন।কিছুক্ষণ রেখে ভালো করে জল দিয়ে ধুয়ে নিন।নারিকেল তেল শুনে মুখ ঘোরাবেন না।যে জেল্লাটা তারপর পাবেন সেটা সব ভুলিয়ে দেবে।
আজকাল আমরা সবাই একটু চুল নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেই থাকি।আর তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি করে থাকি রঙ করার ক্ষেত্রে।তা চুল রঙ করার ক্ষেত্রেও মধু দারুণ কাজ দেয়।
উপকরণ
পরিমাণমতো মধু,জল।
পদ্ধতি
মধু আর জল মিশিয়ে পরিষ্কার চুলে লাগান।এরপর রোদে খানিকক্ষণ থাকুন।দেখবেন চুলে আস্তে আস্তে রঙ আসছে ভালো।
আপনার যদি খুব চুল উঠে থাকে,তাহলে অন্য অনেক কিছু ব্যবহার না করে করুন শুধু মধু।দেখবেন চুল ওঠা অনেক কম হবে।আর মধু তো হাতের কাছেই পাবেন।
উপকরণ
পরিমাণমতো মধু।
পদ্ধতি
মধু জলে গুলে সেটা চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ২-৩ মিনিট ম্যাসাজ করুন।এরপর পুরো চুলে লাগিয়ে ঘন্টা তিনেক রাখুন।তারপর হাল্কা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এটা আপনি সপ্তাহে ৩-৪ দিন করুন।দেখবেন খুব উপকার পাচ্ছেন।
চুলের জেল্লা বাড়াতে বাজার থেকে আনা শুধু কিছু কেমিক্যাল জেল ব্যবহার করে কিছু কি ফল পেয়েছেন?জানি পাননি।তাই এবার মধু ব্যবহার করেই দেখুন।
উপকরণ
২ চামচ মধু,কয়েক ফোঁটা আপেল সিডার ভিনিগার।
পদ্ধতি
দুটি উপকরণ ভালো করে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে রাখুন।১৫ মিনিট পর হাল্কা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।দেখবেন চুলের জেল্লা কেমন বাড়ছে সুন্দরভাবে।
শুধু ত্বককে নয়,চুলকেও ময়েশ্চারাইজ করা দরকার।তারজন্য মধুকেই সঙ্গী করুন এবার থেকে।
উপকরণ
আধ কাপ মধু,১/৩ ভাগ অলিভ অয়েল।
পদ্ধতি
দুটি উপকরণ মিশিয়ে চুলে দিন।চাইলে মিশ্রণটা একটু গরম করে নিতে পারেন।সপ্তাহে তিন দিন করুন।তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।দেখবেন চুল সুন্দর ভাবে ময়েশ্চারাইজড হচ্ছে,কোমল থাকছে।
এবার থেকে তাহলে মধু ব্যবহার করুন আপনার ত্বক আর চুলের সার্বিক পরিচর্যায়।কিন্তু বাজার চলতি মধু নয়,ব্যবহার করতে হবে বিশুদ্ধ মধু।তবে গিয়ে আপনি পাবেন মধুর আসল উপকার।আর আপনি আরেকবার নতুন করে মধুর প্রেমে পড়ে যাবেন।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…