সামনেই একের পর এক পার্টির সিজন, তার মধ্যে পেটের সমস্যা হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। পেটে সমস্যা বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। পেটের ফোলাভাব, পেট ফাঁপা, গ্যাসের সমস্যা-খুবই পরিচিত। আসলে আমাদের পাকস্থলী একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত খাবার হজম করতে পারে। তার থেকে বেশি হয়ে গেলেই পেটে গ্যাসের সমস্যা হয়।
কখন বুঝবেন আপনার পেট ফেঁপে গিয়েছে?
তলপেটে চরম অস্থিরতা অনুভব হলে এবং একইসঙ্গে আপনার পেটটি যদি স্বাভাবিক আকারের থেকে অনেকটা ফুলে যায়, তাহলেই বুঝবেন পেট ফেঁপে গিয়েছে। পাকস্থলিতে অতিরিক্ত গ্যাস জমলে পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে।
এছাড়াও যে যে কারণে পেট ফেঁপে যেতে পারে-
- প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে খাবার না খাওয়া।
- অতিরিক্ত হারে ধূমপান করা।
- কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত স্ট্রেস।
- অলস জীবনযাপন।
- খাওয়ার সময় বারেবারে জল পান করা।
- রাতের খাবার খাওয়া হয়ে গেলেই শুয়ে পড়া।
- অতিরিক্ত বাঁধাকপি বা শাক জাতীয় খাবার খাওয়া।
তাই আজ খাস আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম এমন কিছু ঘরোয়া প্রতিকার, যা খেলে এই পেট ফাঁপার সমস্যা নিমেষেই গায়েব হয়ে যাবে।
১) আদা
- পেটের যেকোনও সমস্যার প্রাকৃতিক চিকিৎসা হল আদা।
- পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করার জন্য একেবারে আদর্শ এটি।
- আদায় থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদন হজমে সাহায্য করে এবং পেটে গ্যাস জমতে দেয় না।
- তাই শুকনো আদা বা আদা দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন পেট ফোলা থাকাকালীন।
- আসতে আসতে দেখবেন ফোলা ভাব কমে যাচ্ছে। পেটে জমা গ্যাস বেরিয়ে গিয়ে।
২) শসা
- শসা পেট ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
- এতে রয়েছে ফ্লাভানয়েড এবং অ্যান্টি ফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাস তৈরি হওয়ার হাত থেকে আটকায়।
- তাই খাবার সময় পাতে শসা রাখুন সালাদ হিসেবে।
- হজম হওয়ার সাথে সাথে এটি হেলথের জন্য খুব ভালো।
৩) পেঁপে
- পেঁপেও কিন্তু পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকর।
- এর মধ্যে থাকা পাপায়া নামক এনজাইম হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- একইসঙ্গে আপনার যদি প্রতিদিন পেঁপে খাওয়ার অভ্যেস থাকে, তাহলে গ্যাসের সমস্যা আপনার ধারে-কাছে ঘেঁষবে না।
৪) দই
- দইও খাবার হজম করাতে বিশেষভাবে সাহায্যকারী। তাই দই খেলেও পেট ফাঁপার সমস্যা দূর হয়।
- তবে অনেকের দই সহ্য হয় না। গ্যাস হয়। তাই যাদের দই খাওয়া নিয়ে সমস্যা আছে তারা এটি এড়িয়ে যান।
- বাকিরা কিন্তু খেতে পারেন। তবে অবশ্যই টকদই।
৫) কমলালেবু
- কমলালেবু পাকস্থলীতে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে।
- ফলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সারা বছর তো কমলালেবু পাবেন না।
- তাই শীতকালে খাওয়ার পর একটা কমলালেবু খেয়ে নিন।
- দেখবেন পেটে গ্যাস জমছে না সাথে সাথে স্কিনও গ্লো করছে।
৬) কলা
- কলায় রয়েছে স্যলুবল ফাইবার, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাকে দূরে রাখে এবং কমলালেবুর মতোই পাকস্থলি থেকে সোডিয়াম বের করে দিতে সাহায্য করে। যার ফলে গ্যাসের সমস্যা হয় গায়েব।
- রোজ একটা করে কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের সাথে সাথে পেটের জন্য খুব ভালো।
৭) মৌরি
- খাওয়ার পরে যে মৌরি দেওয়া হয়, তা কিন্তু এমনি এমনি নয়।
- একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মৌরি কিন্তু গ্যাসের সমস্যা এবং পেট ফাঁপার সমস্যা হ্রাস করার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।
- তাই প্রতিদিন সকালে মৌরি-মিছরির জল এবং খাওয়ার পরে মৌরি খান।
৮) টমেটো
টমোটো হল ভরপুর পটাশিয়ামের উৎস। এটি শরীরে সোডিয়ামের মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে পেটে জল জমা এবং পেট ফাঁপার সমস্যাও দূরে থাকে।
আর একটা যেটা খেতেই হবে তা হল এই শীতেও পর্যাপ্ত পরিমাণে জল। শীতকালে বিশেষত এমনিই জল খাওয়া কম হয়, আর অতিরিক্ত স্পাইসি খাবার খেলে অতি অবশ্যই বেশি জল খাওয়া দরকার, তা না হলেই হজমে সমস্যা হবে এবং পেঁট ফেঁপে যেতে পারে।
পেট ফাঁপার সমস্যা দূরে রাখতে আর যে বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন-
- চিপস, আচার, পকোড়ার মতো নুন-সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
- যাদের দুধ বা ল্যাক্টোজ জাতীয় খাবার সহ্য হয় না, তারা দুধ বা দুগ্ধজাত সবরকম খাবারই এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। তা না হলে কিন্তু পেট ফাঁপার প্রকোপ বাড়বে।
- খাওয়ার জন্য হাতে সময় রাখুন। তাড়াহুড়ো করে জল দিয়ে গিলে খাবার খাবেন না, এতে খাবার হজম হয় না। ভাল করে চিবিয়ে খান।
- কোনও সমস্যা হলে নিজে ডাক্তারি ফলানোর চেষ্টা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- সময় করে যোগাভ্যাস করুন
- আর ধূমপানের অভ্যাস যত শীঘ্রই সম্ভব ত্যাগ করার চেষ্টা করুন।
এই সামান্য বিষয়গুলি মাথায় রাখলেই পেট ফাঁপা-সহ পেটের হাজারও সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন সহজেই।