কথাতেই আছে মাছে-ভাতে বাঙালি। অনেকে আবার রসিকতা করে এমনটাও বলেন যে, বাঙালির নাকি মাছের গন্ধেতেই এক থালা ভাত খাওয়া হয়ে যায়। তাই বাঙালির প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ থাকাটা অনিবার্য। আর সারা বছর বাজারে পাওয়া যায় এমন মাছের তালিকায় তেলাপিয়া মাছ অন্যতম।
বলা হয় বিশ্বের প্রায় একশোটিরও বেশি দেশে এই তেলাপিয়া মাছের চাষ করা হয়। ভারতবর্ষের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষও কবজি ডুবিয়ে খান এই তেলাপিয়া মাছ। অন্যান্য মাছের থেকে দামও কম, সহজলভ্য এবং স্বাদেও ভাল হওয়ায়, অনেকেই এই মাছ খেতে পছন্দও করেন তাই বাজারে তেলাপিয়া মাছের চাহিদাও রয়েছে।
তেলাপিয়া মাছ কোন দিক থেকে উপকারি?
- পুষ্টিবিদরা দাবি করেছেন যে, তেলাপিয়া মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন (বি-১২), প্রোটিন, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের মতো একাধিক পুষ্টিগুণ।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর তরফে তেলাপিয়া মাছকে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপযুক্ত বলে পরামর্শ দিয়েছেন।
- পাশাপাশি যেসব স্তন্যদুগ্ধ বৃদ্ধি করতেও তেলাপিয়া মাছ বিশেষ উপকারী।
তবে তেলাপিয়া মাছে সমস্যা কোথায়?
- এতকিছুর পরেও সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা একাধিক গবেষণায় খুঁজে পেয়েছেন যে, তেলাপিয়া মাছের নাকি একাধিক ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। গবেষকরা এমনও দাবি করছেন যে, তেলাপিয়া মাছ খেলে মারণ রোগ ক্যান্সারের ঝুঁকিও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
- পাশাপাশি শরীরে আরও নানারকমের ক্ষতি হতে পারে। কী, অবাক হলেন, ভাবছেন তো, যে মাছ রসিয়ে রসিয়ে খান তার মধ্যেই কীভাবে লুকিয়ে থাকতে পারে এই মারণ ব্যধি?!
- তবে এই সম্ভাবনার কথা একেবারেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তরফে দাবি করা হচ্ছে যে, সুস্থ মানুষ তেলাপিয়া মাছ খেলে তাঁর ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ১০ গুণ বেড়ে যায়।
- প্রসঙ্গত, এই মার্কিন মুলুকে আমদানি হওয়া তেলাপিয়া মাছের প্রায় অর্ধেকের বেশি আসে চিন থেকে। পাশাপাশি চিনের এই তেলাপিয়া মাছ সরবরাহ করা হয় সারা এশিয়া মহাদেশেও। আর আমেরিকার কৃষি বিভাগের বিশেষজ্ঞরা তেলাপিয়া মাছের শরীরে এমন কিছু উপাদান খুঁজে পেয়েছে যা বিষাক্ত ও ক্ষতিকর।
- গবেষকরা জানিয়েছেন, চিনে চাষ করা তেলাপিয়া মাছকে যেসব খাবার খাইয়ে দ্রুত বড় করে তোলা হয়, সেই খাবারের মধ্যেই রয়েছে বিষাক্ত উপাদান, যা মাছগুলোর ক্ষতি না করলেও, সেই মাছ খেলে শারীরিক ক্ষতি অনিবার্য।
- মার্কিন গবেষকরা খুঁজে পেয়েছেন যে, তেলাপিয়া চাষের জন্য যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, তাতে ডিবিউটিলিন (Dibutylin) এবং ডাইঅক্সিন (Dioxin) নামে দুই প্রকার ক্ষতিকারক রাসায়নিকের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
- গবেষকদের কথায়, প্লাস্টিকের বিভিন্ন জিনিস তৈরির ক্ষেত্রে এই ডিবিউটিলিন ব্যবহার করা হয়। মার্কিন গবেষকদের কথায় এই বিষাক্ত রাসায়নিক শরীরে প্রবেশ করলে হাঁপানি এবং অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেইসঙ্গে ওবেসিটি অর্থাৎ স্থূলতার মতো সমস্যাও হতে পারে।
- এই রাসায়নিকের প্রকোপে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মার্কিন গবেষকরা প্রায় আটশোরও বেশি মাছের ওপর পরীক্ষা-নীরিক্ষা চালিয়ে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, তেলাপিয়া মাছ একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়, বরং শরীরের পক্ষে হানিকারক।
ক্যান্সার ছাড়াও তেলাপিয়া মাছ খেলে শরীরে আর যে যে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তা হল-
- ডাইঅক্সিন শরীরে প্রবেশ করলে তার বিনাশ ঘটে না। বরং তা শরীরে চক্রাকারে আবর্তীত হতে থাকে। একবার ডাইঅক্সিন শরীরে প্রবেশ করলে তা শরীর থেকে বেরোতে প্রায় ১১ বছর সময় লাগে এর ফলে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- তাছাড়া একাধিক গবেষণায় এও বলা হয়েছে যে, তেলাপিয়া মাছ খেলে শরীরে প্রদাহ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বলা হয় বেকনের থেকেও শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে তেলাপিয়া মাছ।
১) ডাইঅক্সিন শরীরে প্রবেশ করলে তার বিনাশ ঘটে না। বরং তা শরীরে চক্রাকারে আবর্তীত হতে থাকে। একবার ডাইঅক্সিন শরীরে প্রবেশ করলে তা শরীর থেকে বেরোতে প্রায় ১১ বছর সময় লাগে এর ফলে শরীরে দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২) তাছাড়া একাধিক গবেষণায় এও বলা হয়েছে যে, তেলাপিয়া মাছ খেলে শরীরে প্রদাহ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। বলা হয় বেকনের থেকেও শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে তেলাপিয়া মাছ।
তবে সেই অর্থে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এই নিয়ে এখন পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। তবে তেলাপিয়া খাওয়ার আগে একবার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন।