Health

আখের রসের গুনাগুণ ও আখের রস খাওয়ার ১২টি উপকারিতা জেনে নিন

আখ বা আখের রস হলো প্রাকৃতিক মিনারেল ওয়াটার যা আমাদের শুধু তৃষ্ণা নিবারণ করে না বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধেও কার্যকারী ভূমিকা গ্রহণ করে। আজকে আমরা জেনে নেব আখের মহামূল্যবান ১২ টি গুনাগুন।

১. তাৎক্ষণিক এনার্জি

পেটের সমস্যা বা ডিহাইড্রেশন এর জন্য আপনার শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ জল বেরিয়ে যাচ্ছে? তাহলে এক গ্লাস আখের রস পান করুন। কারণ আখের রসে আছে চিনি বা গ্লুকোজ যা শরীরের খুব সহজেই শোষিত হয় এবং শরীরকে রি-হাইড্রেট করে সতেজ করে তোলে।

২. দাঁতের যত্নে

মানব শরীরে একটি এসেনসিয়াল অর্গান এর মধ্যে দাঁত অন্যতম। আর এই দাঁত ভালো রাখতে আখের রস খুবই উপকারী। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের মতো খনিজ উপাদান দাঁত ক্ষয় এর হাত থেকে বাঁচায় এবং দুর্গন্ধ যুক্ত নিঃশ্বাস এর বিরুদ্ধে কাজ করে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে বাড়ন্ত শিশুরা যদি আখের রস চিবিয়ে পান করে তাহলে তার দাঁতের সমস্যা অনেকটাই লাঘব হয়।

৩. লিভার গার্ড হিসাবে

কথায় বলে- “লিভার খারাপ যার সব খারাপ তার”। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, লিভার মানবদেহের মাদার অর্গান। লিভারের কার্যকারিতা কমে গেলে অর্থাৎ পিত্তরস জমে গেলে আমরা জন্ডিসে আক্রান্ত হয়ে পড়ি। আখের রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ইমিউন সিস্টেম এবং লিভার সংক্রামন হওয়া থেকে বাঁচায়।

গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রেখে রোগ নিরাময়ে ঘরোয়া টোটকা হিসেবে আখের রস বেশ উপকারী। জন্ডিসে আক্রান্ত রোগীরা দুবেলা আখের রস অবশ্যই পান করুন কারণ এটি শরীরের ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রক্ষা করার পাশাপাশি বিলিরুবিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

৪. ত্বকের যত্নে আখের রস 

আপনি কি জানেন ব্রণের মতো ত্বকের সমস্যা দূর করতে আখের রস কতটা উপকারী? আখের রস ত্বককে এক্সফলিয়েট করতে সাহায্য করে।

সপ্তাহে একদিন আখের রসের সাথে মুলতানি মাটি ও নিমপাতা মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে মিনিট পনেরো অপেক্ষা করার পরে ভেজা নরম তোয়ালে দিয়ে মুখটা পরিষ্কার করে মুছে ফেলুন। দেখবেন আপনার ব্রণের সমস্যা অনেকটাই দূর হয়ে গেছে।

ফল তাড়াতাড়ি পেটে যদি প্রতিদিন এক গ্লাস করে আখের রস পান করেন, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, আপনার ত্বকের কোন সমস্যাই থাকবে না।

তাছাড়া বলিরেখা দূরীকরণ কিংবা খসখসে চামড়া স্মুথ করতে অথবা মাথার খুশকি দূর করতে আখের রসের কোন তুলনা হয় না।

৫. কিডনি ভালো রাখতে

নিয়মিত আখের রস সেবনএ মূত্রনালির ইনফেকশন দূর হয়। এতে আছে প্রাকৃতিক অ্যালকালাইন যা এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। শরীরের প্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে কিডনি সুস্থতা নিশ্চিত করতে প্রতিদিন আখের রস পান করুন।

৬. অতিরিক্ত ওজন নিরাময়ে 

বাড়তি ওজনের সমস্যায় ভুগছেন? শরীরচর্চা ডায়েট এগুলোর পাশাপাশি পান করুন আখের রস। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা কোলেস্ট্রলকে নিয়ন্ত্রণে রেখে শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে করতে সাহায্য করে।

৭. হজম শক্তির বৃদ্ধিতে

আখের রসে থাকা পটাশিয়াম এবং ফাইবার হজম শক্তি কে দ্রুত বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্যের মতন সমস্যাকে সহজেই দূর করে ফেলে। হজমের সমস্যায় ভুগছেন প্রতিদিনের খাদ্যের রুটিনে যদি এক গ্লাস আখের রস রাখেন তাহলে এই সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাবেন।

৮. বিভিন্ন রোগের প্রতিষেধক হিসেবে

প্রচণ্ড গরমে আখের রস পান করলে কেবলমাত্র যে আপনার পিপাসা নিবারণ হবে শুধু তাই নয় শরীরের শক্তি বা এনার্জি ও বৃদ্ধি পাবে।

ভিটামিনও এবং মিনারেলস আখের রসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এই দুইটি এলিমেন্ট একদম পারফেক্ট।

এই কারণে প্রতিদিন আখের রস সেবন, শরীরের মধ্য থেকে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা কে বাড়িয়ে তোলে। ফলে বিভিন্ন ভাইরাস ঘটিত রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে এই আখের রসকেই প্রধান চাবিকাঠি হিসেবে গণ্য করা হয়।

৯. ক্যান্সার প্রতিরোধে

ক্যান্সার একটি দুরারোগ্য ব্যাধি। এখন পর্যন্ত ক্যান্সারএর সম্পূর্ণরূপে নিরাময় একটি দুর্বিষহ ব্যাপার। কিন্তু পূর্ব পরিকল্পনাই আমাদের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে।

আখের রসে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন প্রভৃতি থাকে যা ব্রেস্ট ক্যান্সার এবং পোস্টেড ক্যান্সার নিরাময়এ কাজ করে। এতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট এর উপস্থিতিই ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

১০. গর্ভধারণের ক্ষেত্রে

গর্ভবতী নারীদের পুষ্টির অভাব পূরণ করার জন্য খাদ্য তালিকায় অবশ্যই যোগ করুন আখের রস। এই রস সেবন গর্ভধারণের সাহায্য এবং নিরাপদ গর্ভাবস্থা নিশ্চিত করে। আখের রসে ফলিক অ্যাসিড এর আধিক্য গর্ভধারণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।

১১. হৃদ রোগ বা হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে

হূদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক এই শব্দটি শুনলেই আমরা চমকে উঠি। সাধারণত কোলেস্ট্রল জনিত কারণে অর্থাৎ শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

কিন্তু প্রতিদিন যদি আখের রস পান করা যায় তাহলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা একদম স্বাভাবিক থাকে যা আপনাকে হৃদরোগজনিত সমস্যা থেকে মুক্ত করে।

১২. উচ্চমাত্রার জ্বরে

শরীরে উচ্চমাত্রার জ্বর কেবলমাত্র ফেবব্রাল ডিজঅর্ডার এর কারণে হয়ে থাকে। আর এই গোত্রের জ্বর শরীরের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিনের ঘাটতি সৃষ্টি করে। হ্যাঁ, একমাত্র আখের রস ই পারে এই প্রোটিন আপনার শরীরে ফিরিয়ে দিতে।

সোমা দাস

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago