বাঙালি যেকোনও রান্নার প্রতিদিনের উপকরণ হল আদা। কষা মাংস হোক বা নিরামিষ তরকারি আদা কিন্তু একটা এমনই উপকরণ যা না হলে রান্নাটি ঠিক জমবেই না। তবে শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ানোই নয়, শরীরের অন্যান্য হাজারও সমস্যার সমাধানে কিন্তু আদা একটি অনবদ্য উপকরণ।
প্রতিদিন যদি খাদ্যতালিকায় আদা রাখেন, তাহলে আপনার ধারণাই নেই কতখানি উপকার পেতে পারেন এর থেকে। এক ঝলকে দেখে নিন প্রতিদিন আদা খেলে আপনি কতরকমভাবে উপকৃত হতে পারবেন।
১. বদহজম থেকে মুক্তি পেতে আদা
- অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া হলেই তার সঙ্গে যুক্ত হয় বদহজমের সমস্যা।
- আর এই বদহজমের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিন্তু এক কুচি আদাই যথেষ্ট।
- বদহজম বা পেটের ফাঁপাভাব দূর করে আদা কাজ করে ম্যাজিকের মতো।
- মশলা জাতীয় খাবার খাওয়ার পর এককুচি কাঁচা আদা খেয়ে এক গ্লাস জল পান করুন। হাতেনাতে ফল পাবেন।
২. বমি বমি ভাব দূর করে
- অনেকেই এমন রয়েছেন যাদের বাসে উঠলে বা পাহাড় বা সমুদ্রে বেড়াতে গেলেও বমি বমি ভাব দেখা দেয়।
- তাদের জন্য আদা-চা হল সবচেয়ে ভাল সমাধান।
- তবে গর্ভবতী মহিলারা আদা-চা খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া উচিত।
৩. ঋতুকালীন যন্ত্রণা হ্রাস করতে
- ঋতুকালীন যন্ত্রণায় ভোগেননি এমন মহিলা নিতান্তই হাতে গোনা।
- ঋতুকালীন সময়ে অনেক মহিলা এমন রয়েছেন যারা অসম্ভব যন্ত্রণা অনুভব করেন।
- বিনা চিকিৎসা ব্যবস্থায় আদাকে কিন্তু ঋতুকালীন যন্ত্রণা উপশমে এক অব্যর্থ টোটকা হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
- তাই ঋতুকালীন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে একটু ব্রাউন সুগার দিয়ে আদা চা তৈরি করে খেতে পারেন, নিশ্চিত উপকার পাবেন।
৪. রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে আদা
- অনেকেই এমন রয়েছেন যারা ডায়াবেটিস কিংবা মধুমেহতে আক্রান্ত।
- দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খেয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছে না? আপনার সমস্যার সমাধান হতে পারে আদা।
- বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষায় দেখা গিয়েছে, আদাতে রয়েছে অ্যান্টি ডায়াবেটিক প্রপার্টি, যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৫.খারাপ কোলেস্টরল কমাতে সাহায্য করে
- খাদ্যাভ্যাস, অনিয়ন্ত্রিত জীবন-যাপনের জন্য শরীরে এই খারাপ কোলেস্টরলের প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে।
- যা পরোক্ষভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
- বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টরল দূর করতে আদার ভুমিকা কিন্তু অনস্বীকার্য।
- তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আপনার সঙ্গী হোক আদা।
৬. লিভারের সুরক্ষায় আদা
- লিভার ভালো রাখতে আদা একটি অনবদ্য উপকরণ।
- তাই খাদ্য তালিকায় যদি প্রতিদিন আদা রাখেন, তাহলে নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারের মতো সমস্যা দূর করতে আর কোনও বাধাই থাকবে না।
- তাছাড়া লিভার পরিষ্কার থাকবে। লিভার জনিত কোন ক্ষতি আপনার শরীরে দেখা দেবে না।
৭. ওজন কমাতে আদা
- ওজন বাড়লে সমস্যা হাজার। কারণ বাড়তি ওজন আরও অনেক আনুষঙ্গিক সমস্যা ডেকে আনে।
- তাই আজকের ব্যস্ত দিনে সকলেরই একটাই চিন্তা যে ওজনি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
- সেক্ষেত্রে আপনার সব সমস্যার সমাধান হতে পারে আদা। কীভাবে? বলা হয় আদা একদিকে যেমন হজমে সাহায্য করে অন্যদিকে খিদে কমাতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- তাই ওজন কমাতে মুখে রাখুন এক কুচি আদা। তাহলেই কেল্লাফতে।
৮. অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণে
- অনেকেই হয়তো জানেন না, আদা নিরাময়ে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- গবেষকরা জানান আদা শরীরে ‘ইমিউনোগ্লোবিন ই’ হ্রাসের মাধ্যমে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে পারে।
- বলা হয় আদার রস শ্বাসনালীর সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
- পাশাপাশি আদার রস অ্যালার্জি দূর করতেও সাহায্য করে।
৯. ক্যান্সার প্রতিরোধে আদা
- গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শরীরে ক্যান্সারের জীবাণুকে সৃষ্টি হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে আদা।
- বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে দেখা গিয়েছে, আদার মধ্যে থাকা ‘জিনজারল’ নামক উপাদানটি ক্যান্সারের প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে।
- তাই বুঝতেই পারছেন খাদ্যতালিকায় আদা থাকা কতখানি জরুরী।
- রোজ এক কুঁচি আদা কেউ যদি নিয়ম করে খান তাহলে তিনি ক্যান্সারের মত মারণ রোগ থেকে নিজেকে অনেক দূরে রাখতে পারেন।
১০. হৃদরোগের সম্ভাবনা কমাতে সাহায্য করে
- আদা রক্তকে জমাট বাঁধতে না দিয়ে রক্তকে সর্বদা তরল রাখতে সাহায্য করে।
- শরীরে রক্ত সর্বদা তরল থাকলে তবে তা পরোক্ষভাবে হৃদরোগ বা স্ট্রোকের সম্ভাবনা দূর করতে সাহায্য করে।
- তবে আপনার রক্ত যদি আগে থেকেই পাতলা থাকে তাহলে আদা খাওয়ার আগে একবার অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নিন।
১১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় আদা
- আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল প্রপার্টি শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
- এর জন্য গরম জলে দু-চামচ গ্রেট করা আদার সঙ্গে একটি লেবুর রস এবং আধ চামচ মধু মিশিয়ে তা প্রতিদিন খান। ফল পাবেন হাতেনাতে।
১২. ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে আদা
১৩. ত্বকের খসখসে ভাব দূর করতে সাহায্য করে
- শীতের দিনে ত্বকের রুক্ষ-শুষ্কভাব হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।
- আদার মধ্যে থাকা বিশেষ উপাদান ত্বকের রুক্ষ-শুষ্কভাব, ব়্যাশ-এর সমস্যা দূর করে ত্বককে সুন্দর করে গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
- আদার রস মধু, লেবুর সাথে মিশিয়ে ফেস প্যাকের মত করে লাগান সপ্তাহে একবার।
- দেখবেন ত্বকের রুক্ষ শুষ্ক ভাব অনেক কমে গিয়েছে।
১৪. অসস্টিওআর্থারাইটিস নিরাময়ে আদা
- আদা অস্টিওআর্থারাইটিসের মতো সমস্যা দূর করতে ও আদা বিশেষভাবে উপকারি।
- তাই বিশেষজ্ঞরা বলেন অস্টিওআর্থারাইটিসের সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে আদা বিশেষভাবে উপকারি।
- উষ্ণ গরমজলে আদার টুকরো ২ মিনিট মত ফুটিয়ে সপ্তাহে তিনদিন খান। ভালো রেজাল্ট পাবেন।
- তাছাড়া আদার তেল বানিয়ে ব্যাথাতে লাগাতে পারেন খুব ব্যাথা হলে, এতে আরাম পাবেন।
১৫. ডিএনএ সুরক্ষিত করতে আদা
- আদা ডিএনএ প্রতিরক্ষায় বিশেষভাবে সাহায্য করে।
- একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, একজন পুরুষ যদি তিন মাস প্রতিদিন ৫০০ গ্রাম করে আদা গুঁড়ো সেবন রেন তাহলে তাঁদের শুক্রাণুর গুণমান অনেকখানি বেড়ে যায়।
- পুরুষের বন্ধ্যাত্বের সমস্যাও দূর হয়।
- সুখী দাম্পত্যের জন্য আদা কিন্তু আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারে।
View Comments
আদা খেলে বমি বমি ভাব দূর হয় জানতাম না। লেবু বা লেবু পাতার ঘ্রানে বমি বমি ভাব দূর হয় এটা জানি। আমার কাজেও লাগে (বাসে জার্নি করলে আমার নিজের সমস্যা হয় তার সমাধানে লেবু ইউজ করি)
যাই হোক নতুন তথ্য জানলাম। লেবুর পাশা পাশি আদাও বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে।