কালী পুজোর স্পেশাল মেনু

পুজোর মরশুম মানেই ভোজনরসিক বাঙালির চাই রসে-বসে জমিয়ে পেট পুজো| আর এই পেট পুজো দুর্গা পুজো দিয়ে শুরু হলেও শেষ হয় কিন্তু কালী পুজো দিয়ে| তাই কালী পুজোর দিনটিও যাতে ভালো ভাবে স্বাদে-আহ্লাদে কাটে তার জন্য আমি নিয়ে এসেছি বেশ টেস্টি এবং গতে বাধা রেসিপি থেকে আলাদা  কিছু কালী পুজো স্পেশাল রেসিপি| এবারের পুজোয় এগুলো বানিয়ে কালী পুজোর আনন্দ জমিয়ে উপভোগ করুন|

শাহী পোলাও

খিচুড়ি ছেড়ে এবার একটু অন্য রকম কিছু খাওয়ার জন্য এর থেকে ভালো আর কিছুই হতে পারেনা|

উপকরণ

গোবিন্দভোগ চাল ৫০০ গ্রাম, পনীর ১৫০ গ্রাম ছোটো টুকরো করে কাটা, আদা কুচি ২ বড় চামচ, বিনস ছোটো টুকরো করে কাটা ৪ চামচ, ফুলকপি ছোটো টুকরো করে কাটা ৪ চামচ, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, চিনি স্বাদ অনুযায়ী, ঘি ৪ চামচ, কাঁচালঙ্কা ৪-৬ টি গোটা, তেজপাতা ২ টি, এলাচ ৪ টি, দারচিনি ১ টুকরো ছোটো, গোলাপ জল ১/২ চামচ, কেশর দুধে ভেজানো ৪-৫ চামচ, কাজু বাদাম ২ চামচ, কিসমিস ২ চামচ|

প্রণালী

একটি পাত্রে প্রথমে সাদা তেলে পনীরের টুকরোগুলি লবণ মাখিয়ে ভেজে তুলে নিন| এর পর ফুলকপি ও বিনস হালকা করে ভেজে নিয়ে তুলে রাখুন| গোবিন্দভোগ চাল ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে নিন| এবার পাত্রে ঘি গরম করে তাতে তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি ফোড়ন দিন ভালো গন্ধ বেরোলে তাতে আদা কুচি দিয়ে দিন| একটু নাড়াচাড়া করে কাঁচালঙ্কা দিয়ে দিন|

এবার চাল দিয়ে ভালো করে ভাজুন| নাড়াচাড়া করুন ২ মিনিট মত অল্প আঁচে| এবার পনীর, বিনস ও ফুলকপির টুকরোগুলি দিয়ে মিশিয়ে নিন| কাজু ,কিসমিস মেশান| এবার ৬ কাপ জল দিয়ে স্বাদ মত লবন ও চিনি মেশান| পাত্রটি দেখে আঁচ কমিয়ে দিন| চাল সেদ্ধ হয়ে গেলে তাতে অল্প ঘি ও কেশর মেশানো দুধ দিয়ে কিছুক্ষণ ঢেকে রাখুন| পরিবেশনের আগে একবার ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন|

ভেজ মটন ডিলায়েট

কালী পুজোর ভোগ হিসেবে অনেক ক্ষেত্রেই পাঁঠার মাংস খাওয়া হয়| তাই আপনিও বাড়িতে বানিয়ে ফেলতে পারেন শাহী পোলাও এর সাথে। কম্বিনেশন মন্দ লাগবেনা|

উপকরণ

পাঁঠার মাংস ৫০০ গ্রাম, আলু ৪ টি, ৪ টুকরো করে কাটা, কাঁচালঙ্কা ৩-৪ টি, আদাবাটা ১ চামচ, রসুনবাটা ১ চামচ, হাং কার্ড ১/২ কাপ, হলুদগুঁড়ো ১ চামচ, কাশ্মীরি মির্চ পাউডার ১ চামচ, ধনেগুঁড়ো ১ চামচ, জিরেগুঁড়ো ১ চামচ, গ্রীন এলাচ ২-৩ টি, দারচিনি ১ টুকরো, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, তেল, তেজ পাতা ১-২ টি, ছোটো এলাচ ২-৩ টি, লবঙ্গ ৪-৫ টি|

প্রণালী

মাংস ভালো করে ধুয়ে একটি পাত্রে রাখুন| এবার হলুদ ও লবণ মিশিয়ে অল্প জলে কিছুক্ষণ হালকা আঁচে ভাপ দিয়ে নিন| গ্যাস বন্ধ করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিন| এবার জল থেকে মাংস আলাদা করে নিন| একটি বাটিতে হাং কার্ড, বাকি হলুদ, আদা ও রসুনবাটা ও বাকি গুঁড়ো মশলা মিশিয়ে একটি স্মুদ পেস্ট মত বানিয়ে নিন| এবার অল্প তেল, লবণ ও মশলার পেস্টটি দিয়ে মাংস ম্যারিনেট করে রেখে দিন ১-২ ঘন্টা|

ম্যারিনেট হয়ে গেলে প্রেসার কুকারে তেল দিয়ে তাতে তেজপাতা, এলাচ, দারচিনি, লবঙ্গ ফোড়ন দিন| এবার আলুগুলি দিয়ে ভেজে নিন| ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে দিন| ভালো করে মেশান| মাংস নিজে থেকে জুস ছাড়তে শুরু করবে| মাংস ভালো করে ভাজা হয়ে আসলে ও মশলা ভালো করে কষে গেলে মাংস ভাপা করা জল ও তার সাথে পরিমাণ মত জল মেশান ভালো করে| লবণ মেশান প্রয়োজনে| কাঁচালঙ্কা দিয়ে প্রেসার কুকারের ঢাকনা বন্ধ করে ৭-৮ টি সিটি দিয়ে নিলেই আপনার স্পেশাল ভেজ মটন ডিলায়েট রেডি|

৩. নবাবী সবজি বাহার

সেই একই খিচুড়ি লাবড়া না খেয়ে এই সবজি রেসিপি ট্রাই করে দেখতেই পারেন এবারের কালী পুজোয়|

উপকরণ

গোটা জিরে ১ চামচ, দারচিনি ২ টুকরো, লবঙ্গ ২-৩ টি, এলাচ ২-৩ টি, ১/২ চামচ গোটা ধনে, আদা কুচি ১/২ চামচ, ১/২ চামচ কাশ্মীরি মির্চ পাউডার, ১ চামচ ধনেগুঁড়ো, ২ চামচ জল|

লাল, হলুদ ও সবুজ ক্যাপসিকাম ১ কাপ, টমেটো টুকরো করে কাটা ১ টি, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, পনীর ১৫০ গ্রাম টুকরো করে কাটা, কাজুবাটা ২ বড় চামচ, ১/২ চামচ গরম মশলা পাউডার, ১ চামচ ফ্রেশ ক্রিম, ধনেপাতা কুচি ২ চামচ|

প্রণালী

দু’চামচ জলে হলুদ, জিরে এবং কাশ্মীরি মির্চ পাউডার ভালো করে মিশিয়ে আলাদা করে রেখে দিন| একটি বড় পাত্রে তেল গরম করে তাতে গোটা গরম মশলা ফোড়ন দিন| এরপর আদা কুচি দিয়ে নাড়াচাড়া করে ওতে মশলা পেস্ট দিয়ে ভালো করে মেশাতে থাকুন| এবার ক্যাপসিকাম মেশান, ভালো করে নাড়াচাড়া করে লবণ ও অল্প চিনি মেশান| আঁচ কম করে অল্প জল মিশিয়ে ঢেকে রাখুন| ৭-৮ মিনিট পর ওতে কাজুবাদাম বাটা মিশিয়ে তাতে পনীরের টুকরোগুলি দিয়ে অল্প জল মেশান ও আরো ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন| ৫ মিনিট পর গরম মশলা পাউডার মেশান ও ফ্রেশ ক্রিম মেশান| গ্যাস বন্ধ করুন ধনেপাতা ছড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন|

৪. চকোলেট সন্দেশ

মিষ্টি ছাড়া কিন্তু বাঙালির খাওয়াটা ঠিক জমে না| তাই শেষ পাতে খাওয়ার জন্য থাকলো চকোলেট সন্দেশ| ভাবছেন বানাতে পারবেন কিনা? আরে খুব সোজা, চটপট রেসিপি তে চোখ বুলিয়ে নিন|

উপকরণ

খোয়া ক্ষীর ৫০০ গ্রাম, কন্ডেন্সড মিল্ক ১/৪ কাপ, কোকো পাউডার ২ চামচ, গরম দুধ ৪-৬ বড় চামচ, মাখন বা ঘি ১ বড় চামচ, ড্রাই ফ্রুট কুচানো ২ চামচ|

প্রণালী

একটি পাত্র গরম করে তাতে খোয়া ক্ষীর দিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকুন| ভালো গন্ধ বেরোলে তাতে কন্ডেন্সড মিল্ক বা সম পরিমাণ চিনি মেশাতে থাকুন| আপনার খোয়া ক্ষীর দুধের মত হয়ে আসলে ভালো করে নেড়ে নিয়ে আরো ৩-৪ মিনিট রাখুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘন হতে শুরু করবে| ভালো, ঘন মিশ্রণে পরিণত হলে গ্যাস বন্ধ করুন| এবার ঠান্ডা হতে দিন পুরোপুরি| ঠান্ডা হয়ে গেলে আপনার মিশ্রণ যদি খুব বেশি ড্রাই হয়ে যায় তাহলে গরম দুধ মিশিয়ে নরম করে নিন| এবার ১ ড্রপ ঘি মিশিয়ে ভালো করে মেখে নিন|

এবার মিশ্রণটি দুটো অংশে বা ৪:১ রেশিও তে ভাগ করে নিন| প্রথমে ১/৪ অংশে ফুড কালার মিশিয়ে নিন ও তারপর ৩/৪ অংশে কোকো পাউডার মিশিয়ে নিন| এবার আপনার হাতে মখন বা ঘি লাগিয়ে নিন| প্রথমে কোকো পাউডার মেশানো অংশ থেকে কিছুটা মিশ্রন হাতে নিয়ে সন্দেশের মত বানিয়ে নিন এবার ফুড কালার মেশানো অংশ থেকে মিশ্রণ নিয়ে পাতলা করে সন্দেশের মত বানিয়ে দুটি অংশকে জুড়ে দিন ও ওপরে ড্রাই ফ্রুট ছড়িয়ে দিন| এভাবে বাকি সন্দেশগুলি বানিয়ে নিন|

আপনার কালী পুজোর মেনু কিন্তু এই রেসিপিগুলো দিয়ে বেশ ভালোই জমবে| এখন থেকেই লিস্ট বানিয়ে জরুরি উপকরণগুলির জোগাড় শুরু করুন| আর কালী পুজো তো এসেই গেল| সেই একই গতানুগতিক খিচুড়ি লাবড়া ও পায়েস-চাটনি থেকে সরে একটু অন্যরকম খেয়েই দেখুন, জমে গেলে পুরো ক্রেডিট কিন্তু আপনার|

https://dusbus.com/bn/kochu-saker-notun-tinti-recipe-aji-try-korun/