মাশরুম হলো একধরনের ভক্ষণযোগ্য অপুষ্পক মৃতজীবী ছত্রাক যা ফলত আয়স্কমাইসেটিস প্রজাতির অন্তর্গত। বর্তমানে পৃথিবীতে ৩ লাখেরও বেশি ছত্রাক এর সন্ধান মিলেছে।
এর মধ্যে যেগুলো পুষ্টিকর ও খাবার যোগ্য (সংখ্যায় প্রায় ১৪হাজার) সেগুলোই মাশরুম নামে পরিচিতি ও মান্যতা লাভ করেছে। তাই মাশরুমকে ব্যাঙের ছাতার সাথে গুলিয়ে ফেলবেন না যেন। মাশরুম টিস্যু কালচারের মাধ্যমে বেড়ে ওঠে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে।
মাশরুমের পুষ্টিমূল্য:
মাশরুম খুবই নির্ভরযোগ্য ও পুষ্টিকর খাবার যা নানা উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। আমাদের খাবারের টেবিলের বিভিন্ন পদের শোভা ও স্বাদ বাড়িয়ে দেয় এই মাশরুমই। প্রতি ১০০গ্রাম মাশরুমে প্রোটিন থাকে ২৫-৩৫গ্রাম, ভিটামিন ও মিনারেল থাকে ৫৭-৬০গ্রাম, শর্করা ৫-৬গ্রাম ও আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এর পরিমাণ থাকে ৪-৬ গ্রাম।
মাশরুমের উপকারিতা:
কোলেস্টেরল কমাতে:
- কোলেস্টেরল ফুসফুস,হার্ট ইত্যাদির নানা উপায়ে ক্ষতি করে। ডায়াবেটিস এর দিকে ঠেলে দেওয়ার মুলেও এই কোলেস্টেরল।
- মাশরুমে কোলেস্টেরল ভঙ্গক উপাদান ইরিটাডেনিন, লোভাস্টটিন, এন্টাডেনিন, কিটিন ও ভিটামিন বি, সি এর উপস্থিতি ঘটায় হৃদরোগ ও রক্তচাপ থাকে নিয়ন্ত্রণে।
- এছাড়া এর পটাশিয়াম রক্তে সুগার এর পরিমাণ কন্ট্রোলে রাখে।
- ফলে ব্লাড সুগার এর রোগীরাও বিনা বাধায় খেতে পারেন এটি।
ইমিউনিটি জাগাতে:
- শরীরে এন্টিবডি তৈরি হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ না হলে শরীর হয়ে ওঠে যাবতীয় রোগ বিমারীর আড্ডা।
- মাশরুম পলিফেনল ও সেলেনিয়াম এর উৎস যাতে থাকে অনেক এন্টিঅক্সিডেন্ট।
- যেগুলোর ভেষজ গুন জীবনঘাতী কিছু রোগ যেমন- স্ট্রোক, স্নায়ুরোগ ও ক্যান্সার এর থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।
- এগুলো বাদেও শিশুদের জ্বর, ঠান্ডা, সর্দি, কাশি ইত্যাদি থেকে দূরে রাখতে অবশ্যই কার্যকরী।
- এতে থাকা সালফার ও ইমিউনিটি বুস্ট করে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
সুগঠিত হাড় ও দাঁত পেতে:
- সূর্যালোকের উপস্থিতিতে বেড়ে ওঠা মাশরুমে ভিটামিন ডি এর সঞ্চয় হয়।
- যেটা ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস এর শোষণক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
- তাই মাশরুম খেলে দাঁতের এনামেল এর ক্ষয় কমে ও হাড়ের ঘনত্ব মজবুত হয়।
টিউমারের আশঙ্কা নির্মূল করতে:
- বর্তমানে মেয়েদের প্রায়ই স্তন টিউমার বা জরায়ুর টিউমার ধরা পড়ছে। গাইনকোলজিস্ট রাও এটি নিয়ে চিন্তিত।
- অপারেশন এর ঝক্কি এড়াতে তাই খাওয়া শুরু করুন মাশরুম। কারণ এর বেটা ডি, ল্যাম্পেট্রোল, টারপিনওয়েড ও বেনজোপাইরিন উপাদান ক্যান্সার ও টিউমার এর সম্ভাবনা প্রতিহত করে দেয়।
- সম্প্রতি জাপানের ন্যাশনাল ক্যান্সার ও টিউমার গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রামাণ্য তথ্য দিয়েছে যে মাশরুম নিয়মিত খেলে তা ক্যানসার এর ঝুঁকি ও অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
পাচন ক্ষমতা স্টিমুলেট করে:
- মাশরুমের সুপ হোক কি চাইনিজ পদ তা মুখরোচক হলেও পাচনে বাধক হয়ে দাঁড়ায় না।
- মাশরুমে থাকা নানা উৎসেচক ও পাকস্থলীর ট্রিপসিন ও প্যানক্রিয়াস এর জারকরস নির্গত করে খাবার করে তোলে সহজপাচ্য।
- পেটের ব্যারামেও উপকারী এর ইলুটিন আমাশয় ও লুসমশন কাটাতে সাহায্য করে ও হজমশক্তি বাড়ায়।
- পাশাপাশি এর মধ্যে থাকা প্রচুর ফাইবার বা দেহআঁশ পেশির তন্তু গঠনে সাহায্য করে আপনাকে দেয় সুডৌল স্বাস্থ্য।
প্রসূতি ও সন্তানদের প্রতিপালনে:
- মাশরুমে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল এর জটিল বন্ধন আমাদের শারীরবৃত্তীয় কাজকে বিশেষরূপে সচল রাখে।
- প্রসূতি মায়েরা নিশ্চিন্তে এটি খেতে পারেন কারণ এতে আছে নিয়াসিন এস্কর্বিক এসিড যা গর্ভস্থ শিশুর শরীরে লোহিতকনিকার যোগান বাড়িয়ে দেয়। প্রসব হয়ে ওঠে সহজ।
- শিশুদের ও দিতে পারেন তাতে করে তারা স্কার্ভি ও পেলগ্রা রোগমুক্ত হবে।
চুল চোখ ও ত্বকের কেয়ারে:
- নানা ধরনের চর্মরোগ, হেয়ার ট্রিটমেন্ট ও দৃষ্টিশক্তির ক্ষিপ্রতা বাড়াতে বর্তমানে মাশরুম ব্যবহৃত হচ্ছে।
- ঝিনুক মাশরুমের নির্যাস ড্যান্ডরাফ দূর করে। এর সালফার চুলপড়া ও গ্রে হেয়ার এর পরিমাণ হ্রাস করে।
- মিনারেল কম্পাউন্ড চোখের মায়োপিক ভিশন দূর করে ও দৃষ্টিশক্তির উজ্জীবন ঘটায়।
নানা দুরারোগ্য রোগ সারাতে:
- এতে থাকা ট্রাইটারপিন এডস রোগ প্রতিরোধ করে।
- স্ফিংগলিপিড ও ভিটামিন ১২ এর কম্বো থাকায় স্নায়ুতন্ত্র ও মেরুদণ্ডের গঠন সুদৃঢ় হয় ফলে হাইপারটেনশন থাকে নাগালের বাইরে।
- আয়রনের খনি বলা হয় মাশরুমকে। তাই এনিমিয়া বা রক্তাল্পতার চিকিৎসায় পথ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
- লিংকজাই ৮ ও নটি আমিনো এসিড এর উপস্থিতি দূর করে হেপাটাইটিস বি ও জন্ডিস রোগ।
- নিউক্লিক এসিড ও এন্টি এলার্জিন থাকায় কিডনির পাথর হওয়া আটকায়।
সাইড এফেক্ট:
- আপাতত মাশরুম এর কোনো উল্লেখযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ধরা পড়েনি।
- তবে কাঁচা খেলে তার মধ্যে থাকা ব্যাকটেরিয়া ও জার্ম নানা সমস্যার উদ্ভাবন করে।
- যেমন – বমি, পেটব্যথা, মাথাঘোরা, অস্বভাবিক হৃদস্পন্দন ও উচ্চরক্তচাপতাই মাশরুম ভালো করে ধুয়ে ও সঠিক উত্তাপে রান্না করে খাওয়া উচিত।