আপনার রক্তের গ্রুপের ওপর কিন্তু অনেক কিছুই নির্ভর করে। কোন কোন ধরণের খাবার খাওয়া উচিত, কতটা পরিমাণ খাওয়া উচিত, কোন কোন খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়, তা কিন্তু অনেকাংশে নির্ভর করে আপনার ব্লাড গ্রুপের ওপর। তাই সুস্থ থাকতে যা ইচ্ছা তাই না খেয়ে আপনার রক্তের গ্রুপ জেনে নিয়ে, সেই অনুযায়ী খাবার খান।
রক্তের গ্রুপের সঙ্গে খাবারের সম্পর্ক কী
- আসল কথা হল সব খাবার সবার জন্য নয়। আপনার শরীরের রক্তকণিকা যেসব খাবার গ্রহণ করতে সক্ষম শরীরকে সেইরকম খাবারই দেওয়া উচিত।
- সহজ ভাষায় বলতে গেলে ‘এ’ ব্লাড গ্রুপের মানুষরা যেধরণের খাবার খাবেন, ‘বি’ গ্রুপের মানুষরা কিন্তু কখনওই সেই খাবার খাবেন না।
- আর রক্তের ধরণ অনুসারে এই খাবার খাওয়ার যে তালিকা রয়েছে তা প্রথম আবিষ্কার করেন পিটার ডি’আদামো।
- তিনি বলেছেন, রক্তের গ্রুপ অনুসারে তৈরি করা খাদ্যতালিকা অনুসরণ করে চললে ওজন থাকবে নিয়ন্ত্রণে এবং শরীরও থাকবে সুস্থ।
- আর এই বিশেষ ধরণের ডায়েটকে ব্লাড গ্রুপ ডায়েট বলা হয়।
কোন ব্লাড গ্রুপের কোন ধরনের খাবার খাওয়া ভালো
‘O’ গ্রুপের ব্লাড যাদের
- বলা হয় প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই নাকি মানুষরা ‘ও’ ব্লাডগ্রুপের অধিকারী ছিলেন।
- সেইসময় মানুষরা কাঁচা মাংস খেত অর্থাত প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন শরীরে প্রবেশ করত। আর সেইকারণেই বিশেষজ্ঞরাও বলেন যে, ‘ও’ গ্রুপের ব্লাডগ্রুপ যাদের তাদের খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকাটা দরকার।
- তাই এই গ্রুপের মানুষরা খাদ্যতালিকায় ডিম, দুধ, মুরগীর মাংস, হাঁসের মাংস, ডাক পাখির মাংস, চিংড়ি মাছ, টুনা মাছ, স্যলমন মাছ, ক্র্যাব মিট, ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
- অন্যদিকে সবজির মধ্যে আদা, পেঁয়াজ, রসুন, লেবু, লেটুস, বীজ রয়েছে এমন ফল যেমন চেরি, খেঁজুর, বেদানা, টমেটো, কিউই, সেইসঙ্গে আখকোট কিসমিস এই ধরণের খাবার খাওয়া যেতে পারে।
‘A’ গ্রুপের ব্লাড যাদের
- এ গ্রুপের ব্লাড যাদের তারা বেশি করে শাকসবজী খান। পাশাপাশি নিরামিষ খাবার খাওয়াও ভীষণভাবে দরকার।
- এক ঝলকে দেখে নিন এ ব্লাড গ্রুপের মানুষরা কোন কোন খাবার খাবেন। ব্রকলি, সেলেরি, বীট, প্রচুর পরিমাণে মরশুমি ফল (বিশেষ করে তরমুজ, আপেল, পেয়ারা, রাসবেরি), লেটুস পাতা, থানকুনি পাতা।
- পাশাপাশি, মাশরুম টোফু, সয়া মিল্ক, বিভিন্ন শস্য-জাতীয় খাবার, রসুন, মৌরি, মাশরুম, ওটস, ব্রাউন ব্রেডের মতো খাবার বেশি করে খাদ্যতালিকায় রাখুন।
‘B’ গ্রুপের ব্লাড যাদের
- এই ব্লাড গ্রুপের মধ্যে যারা পড়েন তারা সবকিছুই খেতে পারেন। এদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ-মাংসের পাশাপাশি সবুজ শাকসবজীও রাখা দরকার।
- তবে যেধরণের খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে এমন খাবার বাদ দেওয়াই ভালো।
- খাদ্যতালিকায় যেধরণের খাবার রাখা যেতে পারে তার মধ্যে রয়েছে- মাংস (খাসি, ভেড়া), পনির, নারকেল, কোকোনাট মিল্ক, মাশরুম, আনারস, স্ট্রবেরি, আম, দুগ্ধজাত পণ্য (যেমন দুধ, দই), দানাশস্য এবং প্রচুর পরিমাণে ফল।
- তবে আপনার যদি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা থাকে ডাল, বাদাম, তিল, গম-এর মতো নানাধরণের শস্যজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
‘AB’ গ্রুপের ব্লাড যাদের
- ‘এ’ এবং ‘বি’-এই দুই ব্লাডগ্রুপের মিশ্র প্রভাব লক্ষ্য করা যায় ‘এবি’ ব্লাড গ্রুপের অধিকারীদের মধ্যে।
- এই ব্লাড গ্রুপের মানুষরা তাঁদের খাদ্যতালিকায় সামুদ্রিক মাছ যেমন টুনা মাছ, সার্ডিন মাছ, টফু, দুগ্ধ জাতীয় খাবার, ফলের মধ্যে আপেল, শশা, ব্লুবেরি, ক্র্যানবেরি, জলপাই, পিচ, তারপর গাজর, ডুমুর, পেঁয়াজ, ঢেঁড়স, ঢেঁড়শ, টমেটো-র মতো খাবার রাখতে পারেন খাদ্যতালিকায়।
ডায়েট মেনে চলার আগে যে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখা দরকার
- ব্লাড গ্রুপ ডায়েট শুরু করার আগে অতি অবশ্যই একবার আপনার ডায়েটিশিয়ানের সঙ্গে কথা বলে নিন।
- আপনার যদি কোনও বিশেষ ধরণের খাবারে অ্যালার্জি থেকে থাকে তাহলে খাদ্যতালিকা থেকে সেই খাবারটি বাদ দিন।
- ব্লাড গ্রুপ ডায়েটে কোন খাবারটি কতটা পরিমাণে খাবেন তাও আপনার ডায়েটিশিয়ানের কাছ থেকে জেনে নিন, কারণ বয়স ও ওজন ভেদে খাবারের পরিমাণ আলাদা হতে পারে।