মুরগি আগে না ডিম আগে এই নিয়ে তর্ক চলতেই পারে এবং মীমাংসা না করা গেলেও মুরগির ডিমের পুষ্টিগুণ টক্কর দিতে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কোয়েলের ডিমের উপস্থিতি কোনোভাবেই অগ্রাহ্য করা যায়না।
মুরগির ডিম একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্তই খাওয়া যায় কিন্তু কোয়েলের ডিম আট থেকে আশি সবাই খেতে পারে। এতে দেহের আবশ্যকীয় পুষ্টির চাহিদা তো বটেই সাথে হৃদসমস্যা, কিডনি, পাকস্থলী, কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ সম্পর্কিত নানা রোগের আরোগ্যলাভ ঘটে।
মুরগির ও কোয়েলের ডিমের তুলনা:
- সাধারণত ছাপোষা বাঙালি বাড়িতে হাঁস মুরগি ছাড়া অন্য কিছুর ডিম বড় একটা পাতে পড়েনা। কিন্তু কোয়েলের ডিমের অসাধারণ গুন আপনাকে বাধ্য করবে মুরগির ডিমের জায়গাটি ছেড়ে দিতে।
- কোয়েলের ডিমের আকার মুরগির ডিমের তুলনায় ৫গুন ছোট হয়। তাই একটার বেশি স্বচ্ছন্দে একবারে খেতে পারেন।
- মুরগির ডিমে প্রোটিনের মাত্রা বেশি হলেও প্রায় ৪% কোলেস্টেরল থাকে আর সেখানে কোয়েলের ডিমে কোলেস্টেরল থাকে মাত্র ১.৪%।
- মুরগির ডিমের কুসুমের আকার কোয়েলের থেকে ৭গুন বড় হয়।
- কিন্তু কোয়েলের ডিমে ভিটামিন ও মিনারেল মুরগির ডিমের তুলনায় ৩-৪গুন বেশি থাকে।
কোয়েলের ডিমের পুষ্টি উপাদান:
- ক্যালোরি ১৪ কিলক্যালোরি
- ফ্যাট ১গ্রাম
- ওমেগা ৩ এসিড ৪ মিলিগ্রাম
- ওমেগা ৬ এসিড ৮৪ মিলিগ্রাম
- প্রোটিন ১.২ গ্রাম
- কোলেস্টেরল ৭৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ ১%
- ভিটামিন বি ৪%
- ভিটামিন বি১২ 2%
- ভিটামিন বি ৫ ২%
- আয়রন ও ফসফরাস ৪%
কোয়েলের ডিমের উপকারিতা:
শারীরিক দক্ষতা বৃদ্ধি:
- কোয়েলের ডিম খুবই ভালো এনার্জির ভান্ডার।এটিতে প্রোটিন,ফ্যাটি এসিড ও মিনারেল সমৃদ্ধ যা আপনার সতেজতা ধরে রাখবে।
- দৈহিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে এতে মজুত আমিনো এসিড সাহায্য করে এবং রক্তে চিনির মাত্রা ও বাড়তে দেয়না।
- শরীরে জটিল পদ্ধতিতে বডি সেলের মেরামত করে ও কোলাকোষের পুনরুজ্জীবন ঘটায়।
- লাইসিন নামে উপাদানটি হরমোন,কোলাজেন ইত্যাদির ক্ষরণ পরিচালিত করে ও দেহের রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়াকে মসৃন করে তোলে।
- এতে থাকা আয়রন পেশিক্লান্তি দূর করে ও এনিমিয়া রোগীদের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা নেয়।
- হজমশক্তি উন্নত করে পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো রাখে ও রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়।
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এর খেয়াল রাখে:
- এতে থাকা ভিটামিন বি২ শারীরবৃত্তীয় নানাবিধ কাজ সহজেই সম্পন্ন করতে যোগদান করে।
- থায়ামিন ভিটামিন যকৃৎ,পিত্তের নিঃসরণ,ত্বক ও চুলের যত্ন নেয়।
- অস্থিমজ্জার পুনর্গঠন গঠনে সাহায্য করে এই ভিটামিনগুলি যাতে রক্তে হিমোগ্লোবিন ও অক্সিজেন এর পরিমাণ বেড়ে যায়।
- বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে ও সুষ্ঠু কার্যপরিকল্পনার দ্বারা কিডনিতে পাথর হওয়া আটকায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধে:
- এতে থাকা সেলেনিয়াম খনিজ জরায়ুর ক্যানসার প্রতিরোধ করে যা পরীক্ষামূলক ভাবে প্রমাণিত।
- দেহকোষের ক্ষয় ও অক্সিডেশন হতে দেয়না তাই এইচআইভি রোগীদের ওজনহ্রাস এর সংকটে এটিকে পথ্য হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।
দৃষ্টিশক্তির উজ্জীবন:
- স্বাভাবিক ভাবেই এতে থাকা রেটিনল দৃষ্টিশক্তির তীক্ষ্ণতা বৃদ্ধি করে।
- এন্টিঅক্সিডেন্ট চোখের কোষের সিলিয়ারী পেশির সংকোচন ও প্রসারণ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে খুবই উপযোগী।
- এটি নিয়মিত খেলে হটাৎ করে চালসে রোগ বা ছানি পড়বেনা চোখে।
স্মৃতিশক্তি:
- বাচ্চাদের ছোট থেকেই দিন কোয়েলের ডিম কারণ এটি তাদের প্রভূত মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশ সাধন করে।
- সাইনোকবালামিন ও রাইবোফ্লাভিন স্মৃতির ক্ষয় হতে দেয় না।তাই বহু পুরনো ঘটনাও মনে থাকে সহজে।
বহুবিধ উপকার:
- এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। রক্তপ্রবাহের নালিতে প্রবাহের মাত্রা বাড়িয়ে কমিয়ে দেহের অন্যান্য অঙ্গ গুলির কার্যপ্রণালীতে সুবিধে করে দেয়।
- এমনকি এতে থাকা ওভমিউকয়েড প্রোটিন দেহের অন্তঃস্থলে প্রদাহ, এলার্জি ও নানা সংক্রমণের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করে অনাক্রম্যতা তৈরি করে।
সতর্কতা:
যদিও সবদিক দিয়েই এটি মুরগির ডিমের চেয়ে এগিয়ে তাও এতে ওমেগা থ্রি ফ্যাট হলো আনসাচুরেটেড তাই ডায়াবেটিস এর রোগীরা না খেলেই ভালো করবেন।