লকডাউনের বাজারে করোনা ভীতি ও চিন্তা থেকে মুক্তি পান!
কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের বিভীষিকাময় দাপটে সারাবিশ্বে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে। আমেরিকা, ব্রিটেন, চায়না, ইতালি ও স্পেনে শয়ে শয়ে মানুষ প্রতিদিন বলি হচ্ছে। আজ পর্যন্ত এর কোনো প্রতিষেধক বা কার্যকরী ওষুধ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
ভারতেও করোনা তার করাল ছায়া বিস্তার করে ফেলেছে। ২১দিনের লকডাউনে সমস্ত স্কুল, কলেজ, অফিস, কারখানা বন্ধ রেখে দাঁতে দাঁত চেপে একযোগে লড়াই চালাচ্ছে গোটা দেশ এই ভাইরাসকে হারাতে। এসব এর মাঝেই জীবনে এক নিস্তব্ধতা নেমে এসেছে, কেউ যেন পজ বাটন টিপে দিয়েছে।
যে যার ঘরে বিচ্ছিন্ন ও বন্দিদশায় আবদ্ধ। একাকীত্ব, আশাহীনতা, ভীতিবোধ মানুষকে কাবু করে ফেলছে। এইরকম অসহায় অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে কি কি করবেন তার সন্ধান আজ আপনাদের দেব।
সেন্টার ফর ডিজিজ এবং প্রিভেনশন (আমেরিকা) জানাচ্ছে কিছু স্টেপস আছে যা অনুসরণ করলে লকডাউনের ডিপ্রেশন ও কর্মহীন শিথিলতা কাটানো যেতে পারে।
অতিমারিতে আক্রান্ত হবার খবরে বারবার চোখ রাখলে তা আপনার মানসিক উৎকন্ঠা বাড়াবেই বাড়াবে। খবর পড়া, খবর দেখা বা শোনা থেকে আপাতত বিরত থাকুন।
বাড়িতে বিনোদন মূলক ও সৃজনশীল কাজে নিয়োজিত থাকুন। স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিন। স্ট্রেচিং যোগা করুন। খাবারে সুষমতার ভারসাম্য বজায় রাখুন।
৭-৮ ঘন্টার ঘুম দিন চুটিয়ে। নেশার জিনিস থেকে দূরে থাকুন ও নিজের মতামত ও অভিব্যক্তি নিকটজনের কাছে খুলে বলুন। সর্বোপরি রিল্যাক্সড থাকুন।
জরুরি তথ্য সম্পর্কে সজাগ থাকুন:
আপনি যদি বর্তমান সময়ে সম্পর্কে আপডেটেড না থাকেন তবে হাবিজাবি চিন্তা আপনাকে গ্রাস করবে। তাই খবর অবশ্যই নিন তবে বিশ্বাসযোগ্য সূত্র মারফত।
ভারত সরকার কোভিড -১৯ হেল্পডেস্ক খুলেছে হোয়াটসআপ এ আপনাদের সুবিধার্থে। এই নম্বরে ইমারজেন্সি পরিষেবা ও জরুরী তথ্য সরবরাহ করা হয়।নম্বরটি হলো – ৯০১৩১৫১৫১৫
লেটেস্ট ডাটার জন্য ১ মেসেজ করলেই আপনার সামনে সমস্ত দরকারি ইনফরমেশন চলে আসবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভুয়ো খবর ও অজস্র ভাইরাল খবরে বিভ্রান্ত হবেন না। যাচাই করে তবেই সেটা সত্য বলে বিশ্বাস করুন।
ডাক্তার সীমা শর্মা যিনি একজন মনোবিদ ইয়ং ইন্ডিয়া সাইকোলজিক্যাল সলিউশন প্রতিষ্ঠানের, তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন যে করোনা নিয়ে এতটা হৈচৈ করে আতঙ্ক ছড়ানোর কোনো যুক্তি নেই। বিশ্ব এইরকম মহামারী প্রথমবার দেখছেনা। বরং আমরা আগের পরিস্থিতি গুলোর চেয়ে প্রযুক্তির দৌলতে এখন সুবিধেজনক জায়গায় আছি।
আমরা এই ভাইরাসের প্রকৃতি জানি ও সেটা দমন করতে কিকি পদক্ষেপ দরকার সেটাও সচেতন ভাবে গ্রহণ করে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে পারি। তাই দিশেহারা বোধ করার মানেই হয়না।
স্ট্রেস কমানোর জন্য কিছু পথনির্দেশ:
প্রিয়জনদের টাচ এ থাকুন:
মানুষ কিন্তু তার সঙ্গীহীনতায় সবচেয়ে বেশি কাতর বোধ করে। তাই রিলেটিভ, কলিগ, বন্ধুবান্ধব এর সাথে যতটা পারা যায় যোগাযোগ রাখুন ভিডিও চ্যাট, কল যেটা পারেন করুন।
মনের কথা আদানপ্রদানে মানসিক বোঝা অনেকটাই হালকা হয়ে যায় আর মেজাজ ও ফুরফুরে থাকে।
গান শোনা:
গানকে তো বলাই হয় স্ট্রেস বাস্টার। ফিটনেস ট্রেনিং করতে করতে তাই হেডফোন বা ব্লুটুথ স্পিকারে পছন্দের গান চালিয়ে দিন। গানের ছন্দে মনেও দোলা লাগবে।
হবি কাজে লাগান:
কাজের চাপে এতদিন যে হবি করতে পারেননি হা হুতাশ করেছেন এই ফাঁকা সময়ে সেটা জমিয়ে কাজে লাগান।
বই পড়ুন মোটিভেশনাল হোক বা ফিকশন। লেখালেখির হবি থাকলে মজার বা ভুতের গল্প ফেঁদে ফেলুন। ডায়রী ও লিখে রাখতে পারেন আপনার অভিজ্ঞতার কথা।
এছাড়াও গার্ডেনিং, নাচ,আঁকা যা কিছু আপনার মন চায় করতে পারেন।আসলে যে কাজ আমরা উপভোগ করে করি তাতে এমনিতেই ফোকাস বাড়ে আর অযৌক্তিক চিন্তা থাকে দূরে।
ইতিবাচক ভাবমূর্তি:
ক্রাইসিস এর সময়ে হতাশা আসা স্বাভাবিক। কি হবে এবার আর মৃত্যুভয় এই দুই উদ্বেগ আমাদের চেপে ধরে। কিন্তু মাথায় রাখবেন এসব সাময়িক।
নিজেকে ভরসা যোগান এই বলে যে এটাও ঠিক পার করে ফেলবেন আপনি জীবনে আর পাঁচটা প্রতিকূলতার মতো এবং সবকিছু স্বাভাবিক ও সুন্দর হয়ে উঠবে আপনার অজান্তেই।
লম্বা শ্বাস:
দুশ্চিন্তা প্রবল হয়ে উঠলে লম্বা শ্বাস নিন। বডি এর ফলে রিল্যাক্সড বোধ করে এবং ঘুম ভালো হয়।
গভীর শ্বাস ক্রিয়া বডিতে ফিল গুড হরমোনের ক্ষরণ বাড়ায় যার নাম – এন্দ্রোফিন। যেটা অর্গানিক পেন কিলারের কাজ করে ও সুখানুভূতি নিয়ে আসে।
লম্বা শ্বাস নিলে ও ছাড়লে তাৎক্ষণিক ভাবে শরীরের নমনীয়তা বাড়ে, শরীরে অক্সিজেন এর জোগান বেড়ে যায় ও রক্তসঞ্চালন ও ভালো হয়।
প্রাণায়াম:
দেখুন করনাতে সবচেয়ে বেশি যে অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলো ফুসফুস। সেই ফুসফুসকে সক্রিয় রাখা আমাদের প্রধান কর্তব্য।
তাই অনুলোম, বিলোম ও প্রাণায়াম ইত্যাদি বাড়িতে করতে পারেন। পাচন শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও এগুলো উপকারী।
এক্সারসাইজ:
বাড়িতে থেকে টিভি দেখে, গেম খেলে, পড়াশোনা করেও অনেকসময় সময় বেশি হয়ে যায়। সেই সময়ে কাজে লাগিয়ে এক্সারসাইজ করতে পারেন।
যখন মনের বিকার আসে তখন ভগবানের আশ্রয় আধ্যাত্মিক চেতনা ও মানসিক সংযম আনতে সাহায্য করে। এইসময় রামায়ণ পাঠ, আরতি মন্ত্র বা ভজন শোনা হৃদয়ে স্বস্তি দিতে পারে।
পাঁচালি বা গীতা পাঠ করতে পারেন। মন একটু অন্য স্বাদ পাবে এবং এইসমস্ত দুর্যোগ থেকে আলাদা হয়ে ভুলে থাকতে হেল্প করবে।
দিল্লির সাইকোলজিস্ট সীমা শর্মা জানাচ্ছেন, যদি আপনি প্রচন্ড হোপলেস ফিল করেন তবে শপথ নেওয়া কিন্তু মানসিক উৎপীড়ন কাটানোর মোক্ষম উপায়।নেগেটিভ ও আত্মবিরোধী সমস্ত চিন্তাভাবনার নাশ করবে এটা যদি আপনি মনেমনে পুনরাবৃত্তি করতে পারেন। তাই সেই পরিস্থিতির মুখোমুখি হলে নীচের শপথটি মনে মনে পাঠ করবেন।
“আমি সম্পূর্ণ সুস্থ। আমি মানসিক ও শারীরিকভাবে সবল। কোন রোগ আমাকে আক্রমণ করবে না।”
শোবার আগে এটি পাঠ করতে করতে মনে কল্পনা করুন – সব আগের মতো হয়ে গেছে। আমরা উৎসব পালন করছি সবাই একসাথে, বাচ্চারা স্কুলে যাচ্ছে, স্বামী অফিসে ও কাজের জায়গায়। পরিবারের সকলে হাসিখুশি রয়েছে। শহর ও নিজস্ব গতিতে চলছে। এটাতে আত্মবিশ্বাস ও ফিরে পাবেন ও নিজের একঘেয়ে জীবনে নতুনত্বের আভাস ও। মনে রাখুন, ভাইরাস এর মত ভালো চিন্তাভাবনা ও কিন্তু ছোঁয়াচে ও শুভ ফল দেয়।