ডায়েটিং কথাটা আজকাল আমাদের আধুনিক জীবনযাত্রার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেছে। কিন্তু ডায়েটিং করা মানেই খাবার দাবার ছেড়ে থাকা নয়। নিজের শরীরের পরিমাণ মতো খাবারকে কমপক্ষে ৬ বার ভাগ করে খাওয়ার নামই ডায়েট।
প্রতিদিন শরীরের চাহিদার অতিরিক্ত ৫০ কিলো ক্যালোরি খাবার শরীরে গেলেও সপ্তাহে তা বাড়িয়ে দেয় ৪৫০গ্রাম ওজন। এতে করে ওভারওয়েট বা ওবেসিটির মাত্রা বেড়ে গেছে অনেকাংশে। বিশেষত স্কুলগামী শিশু, কিশোর কিশোরীদের মধ্যেও এই সমস্যা প্রবল আকার নিয়েছে।
বাবা মায়ের অতিরিক্ত চিন্তার পরিনাম হয় বিপরীত
- বাবা-মা রা স্বভাবতই ওবিসিটি রিস্ক নিয়ে চিন্তাগ্রস্ত থাকেন।
- তারা বাচ্চাদের বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে ওজনের সঠিক অনুপাত বজায় রাখতে হিমশিম খান।
- ওবেসিটির জন্য পেরেন্টসরা ওয়েট রিডিউসিং চার্ট ব্যবহার করেন যার পরিণাম হয় বিপরীত।
- এতে করে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, চিন্তাশক্তি, মনোযোগ, কর্মক্ষমতা প্রভৃতি হ্রাস পায়।
- তবে বডি মাস ইনডেক্স এর উপর নির্ভর করে ওবেসিটি যা হলো শরীরের উচ্চতা ও ওজনের আনুপাতিক হার। এর স্বাভাবিক মাত্রা হলো ২০-২৫।
- ৩০ এর বেশি হলে তা ওবেসিটির পর্যায়ে চলে যায়।
ওবিসিটি রিস্ক বা অতিরিক্ত ওজনের নানা কারন ও সমস্যা
- চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণাকারীরা জানাচ্ছেন যে গর্ভাবস্থাকালীন মা এর ড্রিংকিং, স্মোকিং বা ড্রাগ ইত্যাদি নেয়ার ফলে ফেটাস বা ভ্রূণ অবস্থায় শিশুর বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হয়।
- ওইসময় রক্তে অক্সিজেন ও অন্যান্য পুষ্টি পদার্থের ঠিকমতো যোগান না পৌঁছানোয় মেটাবলিক রেট এর তারতম্য হয়। ফলে শৈশবে ওবেসিটির ঝুঁকি খুব বেড়ে যেতে পারে।
- এছাড়াও শিশুবেলায় বাচ্চার সাথে সময় না কাটানো বা আবেগজনিত মিথস্ক্রিয়ার অভাবে শিশু ওবেসিটিতে আক্রান্ত হয়।
- এছাড়াও শারীরিক পরিশ্রম এর অভাব, সফ্ট ড্রিঙ্কস পান, জাঙ্ক ফুড খাওয়া, খাবারে বেশি পরিমাণে চিনি, হরমোনজনিত সমস্যা প্রভৃতি কারণে শিশুর মধ্যে স্থূলতা আসে।
- ওবেসিটিতে আক্রান্ত শিশুদের প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর ও নানাধরনের রোগে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
- এরা পরে শিরা বা ধমনীর রোগ, থাইরয়েড, পিত্তশয়ে পাথর, লিভারের সমস্যা, হাঁপানি, মেয়েদের অনিয়মিত ঋতুচক্র ইত্যাদি রোগে ভোগে।
- এদের মেজাজটা ও চড়ে থাকে হামেশাই। কান্না-কাটি বেশি করে করে। অর্থাৎ আচরণগত সমস্যাও সৃষ্টি হয় এর থেকে।
ওবিসিটি রিস্ক কমাতে কয়েকটি বিষয়ের উপর নজর অবশ্যই দিন
শিশু ও মা বাবার পারস্পরিক যোগাযোগ হলো এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সাফল্যের রসায়ন। দৈনিক খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এক্ষত্রে বড়ো ভূমিকা নিতে পারে। পেরেন্টসদেরও সচেতনভাবে শিশুদের খাবার ও তাদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বাচ্চাদের বকাবকি বেশি করবেন না। নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে উৎসাহ দান ও পুষ্টিকর খাবারের যোগান তাদের বিকাশে গতি ও ওবেসিটি কমাতে সাহায্য করবে।
- রোজকার ডায়েটে থাকুক শাক-সব্জি,ফলমূল ও শস্য জাতীয় খাবার। মাল্টিভিটামিন যুক্ত খাবার ও দিন আপনার শিশুকে।
- সরাসরি দুধ বা হাই প্রোটিন ইয়োগার্ট বর্জন করুন। বেশি ফ্যাট যুক্ত বড়ো মাছ, রেড মিট এবং কোলেস্টেরল জাতীয় ফ্যাট, চিজ এবং বাটার জাতীয় খাদ্যকে দূরে রাখুন ওর থেকে।
- শরীরে লিকুইড এর মাত্রা যাতে বেশি থাকে সেটা দেখুন। জল, সুপ বা জুস ইত্যাদি উপযুক্ত সাপ্লিমেন্ট হতে পারে।
- এনার্জি ড্রিংক বা অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট আর চিনি যুক্ত সফটড্রিংক্স পরিহার করুন।
- ট্রান্স ফ্যাট এবং ট্রাইগ্লিসারিয়েড যুক্ত খাবার জাঙ্কফুড পিজা, বার্গার, চিপস এগুলো দেবেন না।
- বেশি মশলা যুক্ত খাবার বা লবনাক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন।
- ওদের ঘরের মধ্যে টিভি, ল্যাপটপ বা পিএস ধরে বসে থাকতে দেবেন না। দৈহিক পরিশ্রম যুক্ত খেলাধুলায় উৎসাহী করে তুলুন। যেমন – নাচ, আউটডোর স্পোর্টস, সাঁতার ইত্যাদি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে বাচ্চাদের কমপক্ষে অবশ্যই ১ঘন্টা খেলতে দেয়া উচিত।