Health

রক্তশূন্যতা বা অ্যানিমিয়ার কারন লক্ষণ ও কি কি করনীয়

অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা খুবই সাধারণ বা কমন একটি সমস্যা। কিন্তু কমন সমস্যা হলেই যে গুরুত্বহীন হবে তার কিন্তু কোনও মানে নেই। আমাদের শরীরের একটি অংশের থেকে আরেক অংশের যোগসূত্র রক্ষা করে এই রক্ত। শরীরের যাবতীয় উপকারী কণা অর্থাৎ ভিটামিন, প্রোটিন বা অন্য যা কিছু হোক না কেন, তা কিন্তু প্রবাহিত হয় এই রক্তার মাধ্যমেই। তাই রক্তের কোনও রকম ঘাটতি কিন্তু আমাদের শরীরের অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে। তাই এখনই জেনে নিন রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়ার কী কী কারণ, অ্যানিমিয়া হলে তাঁর লক্ষণই বা কী কী। এর সঙ্গেই আজকের আর্টিকেলে রইল অ্যানিমিয়া হলে ঠিক কী কী করণীয় সেই নিয়েও কিছু কথা।

অ্যানিমিয়া কেন হয়

আমাদের রক্তের প্রধান উপাদান হল লোহিত রক্ত কণিকা। এই লোহিত রক্ত কণিকা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য খুবই দরকারি। 

লোহিত রক্ত কণিকায় আছে হিমোগ্লোবিন, প্রোটিন এবং আয়রন। এই সবের সাহায্যেই রক্ত পুষ্টিগুণ শরীরের এক অংশ থেকে আরেক অংশে নিয়ে যায়, বিশেষত ফুসফুস থেকে অক্সিজেন।

কিন্তু অ্যানিমিয়া হলেই এই লোহিত রক্ত কণিকা কমতে শুরু করে। আর লোহিত রক্ত কণিকা কমা মানেই হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া, যা একদমই ভালো নয়। মূলত ৪০০ রকমের অ্যানিমিয়া না কি হয়।

তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয় ভিটামিন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া, আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া, ব্লাড লস অ্যানিমিয়া, পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া আরও অনেক।

অ্যানিমিয়া হওয়ার কারণকে মূলত এই তিন বড় ভাগে দেখা যেতে পারে,

১. রক্ত কমার ফলে অ্যানিমিয়া

আয়রন ডেফিসিয়েন্সি অ্যানিমিয়া এই ভাগে পড়তে পারে। যখন শরীর থেকে রক্ত কমতে থাকে, তখন শরীরের টিস্যুর রক্তের চাহিদা মেটানোর জন্য জলের প্রয়োজন হয়। আর তখনই এই জল বাকি রক্তকে বেশি তরল করে দেয় বা লোহিত রক্ত কণিকাকে তরল করে দেয়। নানা কারণেই কিন্তু এই রক্তক্ষরণ হতে পারে। যদি আপনার আলসার বা ক্যানসার থাকে, অথবা অ্যাসপিরিন বা এই জাতীয় ড্রাগ নিয়মিত খেতে থাকেন তাহলে যেমন অ্যানিমিয়া হয়, তেমনই মেয়েদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময়ে অনেকটা রক্ত শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

২. রক্ত কণিকার উৎপাদন কমে যাওয়ার ফলে

আমাদের হাড়ের মধ্যে একটি নরম টিস্যু আছে, যার নাম বোন ম্যারো। এই বোন ম্যারো স্টেম সেল তৈরি করে, যা পরে লোহিত রক্ত কণিকা, শ্বেত রক্ত কণিকায় পরিণত হয়। এই বোন ম্যারো নষ্ট হয়ে যায় অনেক রকম রোগের জন্য, যার মধ্যে একটি হল লিউকোমিয়া। এছাড়া বারে বারে রক্ত দিলে আয়রন কমে যায় আর লোহিত রক্ত কণিকা তৈরি হতে পারে না। তেমনই থ্যালাসেমিয়া হলেও রক্ত কণিকা ভালো করে তৈরি হয় না। আর রক্ত কণিকা তৈরি হয় না ভিটামিন কমে গেলে। ভিটামিন বি-১২ আর ফোলেট খুবই দরকারি রক্ত কণিকা তৈরির জন্য। এর অভাবেও অ্যানিমিয়া হয়।

৩. লোহিত কণিকার ধ্বংস

লোহিত কণিকার আয়ু মূলত ১২০ দিন। কিন্তু তার আগেও অনেক সময়ে লোহিত রক্ত কণিকা ভেঙে যেতে পারে। নির্দিষ্ট কিছু কারণে যেমন সাপে কামড়ালে, ইনফেকশন হলে, নির্দিষ্ট কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দিনের পর দিন নিলে অটোইমিউন হেমালিটিক অ্যানিমিয়া হয় আর তার ফলে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লোহিত রক্ত কণিকাকেই শত্রু মনে করে ধ্বংস করতে যায়।

কী কী উপসর্গ অ্যানিমিয়ার

অ্যানিমিয়ার নানা রকমের উপসর্গ আছে। তার মধ্যে কয়েকটি খুবই কমন। এগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে এনার্জি কমে যাওয়া। এর পাশাপাশি আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, একেবারে ভালো করে শ্বাস নিতে না পারা, বুকে ব্যাথা, মাথা যন্ত্রণা এই সব হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে জ্বর, ডায়েরিয়া বা জন্ডিসের মতো সমস্যাও দেখা দেয়।

কীভাবে অ্যানিমিয়ার সমস্যা দূর করবেন

দেখুন প্রথমেই আপনাকে এটা বলার যে অ্যানিমিয়া হলে শুরু থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া খুব দরকার। তিনি যা যা বলবেন সে সব মানতে হবে। কিছু আয়রন সাপ্লিমেন্ট, কিছু ভিটামিন তিনি হয়তো নিতে বলবেন। আপনাকে সেগুলো অবশ্যই মানতে হবে। কিন্তু এর পাশাপাশি দৈনন্দিন ক্ষেত্রে আপনাকে কিছু জিনিস মেনে চলতে হবে, যা আপনার অ্যানিমিয়ার সমস্যা দূর করবে।

১. আগেই জেনেছি যে ভিটামিনের ঘাটতির জন্য অ্যানিমিয়া হয়। তাই ভিটামিন সি-র ব্যাল্যান্স ঠিক রাখতে আপনি কমলালেবু বা পাতিলেবুর রসও আপনার ডায়েটে যোগ করুন।

২. আপনি যদি দিনে এক বার হলেও টক দই খেতে পারেন আর তাও হলুদের সঙ্গে মিশিয়ে তাহলেও কিন্তু অ্যানিমিয়ার সমস্যা অনেকটা দূর হয়।

৩. সবুজ সবজি খাওয়া খুব দরকার। বিশেষ করে পালং শাক, ব্রকোলি এই সবই আয়রনের খুব ভালো উৎস। তবে এগুলো খুব রান্না করে খেলে কিন্তু তেমন উপকার পাবেন না।

৪. আপনাকে কিছু রস খেতে হবে। তার মধ্যে প্রথমেই আসবে বিটের রসের কথা। এটি রক্ত তৈরি করতে ও পরিষ্কার করতে খুবই কার্যকরী। এর পাশে আপনি খান আপেল আর গাজরের রস। এগুলিও কিন্তু খুব ভালো আয়রন, কপার, পটাসিয়ামের মতো মিনারেলের উৎস।

৫. আপনার বাড়িতে তামার যদি পাত্র থাকে জল রাখার মতো, তাহলে সেটি বের করুন। এর মধ্যে সারা রাত জল রেখে দিন আর তা পরের দিন খান। আয়ুর্বেদ মতে আমাদের শরীরে মিনারেলের জোগান কিন্তু এভাবেও অনেকটা হয়ে যায়।

৬. ভিটামিনের আরেক উৎস হল খেজুর। আপনি রোজ সকালে বা বিকেলের দিকে নিয়ম করে খেজুর খেতে পারেন। এটি যেমন ভিটামিনের জোগান দেবে, তেমনই সঙ্গে সঙ্গে এনার্জি আনবে।

অভীক সরকার

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago