Health

ওজন কমানো নিয়ে প্রচলিত সাতটি মিথ এই ২০২০ সালেও অনেকে মেনে চলছেন!

শরীরে বাড়তি মেদ কিভাবে কমানো যায় এনিয়ে কমবেশি সকলেই চিন্তাগ্রস্ত হয়ে থাকি আমরা। এর জন্য নেটে ভিডিও দেখা থেকে শুরু করে নানা বিজ্ঞজনের উপদেশ ও পরামর্শ মেনেও চলি। কিন্তু এর থেকেই আমাদের মধ্যে বাসা বাঁধে কিছু বিভ্রান্তি ও ভুল ধারণা।

অন্ধভাবে যা অনুসরণ করে আমরা অকারণ ওজন কমানো নিয়ে নিজেদের হয়রান ও ভীতির শিকার বানাচ্ছি। অবৈজ্ঞানিক এই মিথ গুলির জন্যই আমাদের ওজন কমবার বদলে বেড়ে যায় সাথে উপরি পাওনা হয় আরও কিছু রোগ। চলুন দেখে নি কোনগুলো সেই মিথ!

১) খাদ্যবিহীন ডায়েট:

  • বর্তমানে লিকুইড বা তরল খাদ্যের উপর বেস করে ডায়েটের চল বাড়ছে যার পরিণাম ভয়াবহ।
  • কঠিন খাদ্য না খেলে বা ফাস্টিং করলে শরীরে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট ভঙ্গক এনজাইম এর ক্ষরণ কমে যায়। সাথে মেটাবলিক রেট ও স্লো হয়ে যায়। আপনার ভুঁড়ি বাড়ার সম্ভাবনা ও বেড়ে যায়।
  • তাই ফাস্টিং বা উপোস না দিয়ে তিনবেলা কমপক্ষে খাবার অল্প অল্প করে ভাগ করে খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • ব্রাউন রাইস বা স্যালাড এর পরিমাণ বাড়ান খাদ্যতালিকায় এবং অন্যান্য বস্তুর কম্বিনেশন ঠিক রেখে পুষ্টিমানের ভারসাম্য বজায় রাখুন। তবে ফাস্টফুড কদাচিৎ নয়।

২) ব্যায়ামকে বাদ দেওয়া:

  • সঠিকভাবে ওজন কমাতে ডায়েট ও এক্সারসাইজ এর আদর্শ ব্যালেন্স দরকার। শুধু ডায়েট ডায়েট বা শুধু এক্সারসাইজ এ কাজ হবে না।
  • মোটামুটি ৭০% ডায়েট ও ৩০% ব্যায়াম এর উপর নির্ভর করে আপনার ওজন হ্রাস এর রেজাল্ট।
  • ডায়েটে ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে ও ব্যায়ামে ঘাম ঝরিয়ে তরতাজা থাকতে হবে। তাহলে শরীর তার রক্তপ্রবাহ ঠিক রেখে রক্তচাপ মানসিক চাপ সহ আরো অনেক ব্যাধি সরিয়ে ফেলবে।
  • শুধু আসনেই জোর দেবেন না। মাঝে মাঝে স্ট্রেচিং করলে তাতেও কাজ দেয়।

৩) উচ্চমাত্রার প্রোটিনে ওজন কমে:

  • প্রতিদিনের ডায়েটে মাছ, মাংস, ডিম,পনির রেখে অনেকে মনে করেন যে উচ্চমাত্রার প্রোটিন তালিকাভুক্ত করলে তা উল্লেখযোগ্য ভাবে ওজন কমাবে।
  • কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। প্রোটিন অতিরিক্ত হারে শরীরে কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়। আমিনো এসিড এর আধিক্য বেড়ে যায় ও কোষতন্তুর গঠন বিগড়ে যায়। শরীরে সেলুলোজ এর ঘাটতি দেখা দেয়।
  • এর সাথে দুর্বলতা ও পেটের সমস্যা আসাও অদ্ভুত ব্যাপার নয়।

৪) সব ফ্যাটেই ওজন বাড়ে:

  • সব চর্বি যে আমাদের ওজন বাড়িয়ে দেয়, একথা ঠিক না। কিছু পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাট এর জন্য দায়ী থাকে।
  • ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা সিঙ্গারা খেলে আপনার ওজন বাড়বে একথা বলা বাহুল্য, কিন্তু আমাদের হৃদপিন্ড ও মস্তিষ্কের জন্য ফ্যাট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই তাকে অবহেলা করা শরীরে বিপদ আনতে পারে।
  • শারীরিক আবশ্যিক চাহিদা মেটাতে তাই ফ্যাটকে বাদ দিলে চলবেনা। অলিভ, মিষ্টি এভোকাডো, আমন্ড, কোকো বাটার ইত্যাদি ডায়েটে রাখতে পারেন, এগুলোতে ফ্যাট থাকলেও তাতে করে একদম ওজন বাড়বে না।

৫) সাপ্লিমেন্টে ওজন কমে:

  • আমাদের অনেকেই রোজকার ডায়েটে কাঁটছাঁট করে সাপ্লিমেন্ট ওপর বেশি ভরসা করি। কিন্তু তাতে করে নিজেরাই খাল কেটে কুমির ডেকে আনি।
  • ওয়ার্ক আউট এর সময় এনার্জি ড্রিংক অনেকেই খান। কিন্তু সেই ক্যান জাতীয় দ্রব্যে প্রিজারভেটিভ, আর্টিফিশিয়াল কালারিং ও নানা রাসায়নিক পদার্থ থাকে।
  • আমরা গোটা ফল বা সবজির বদলে তার বাজারজাত সংস্করণ কিনে খাই। এটাই ফ্যাটের সঞ্চয় বাড়ায়।
  • ডাক্তারী পরামর্শ ছাড়াই ওজন কমানোর পিল ও কিনে খান অনেকেই ।কিন্তু তাতে থাকে এমফিথেটামাইন যা সাময়িক ওজন কমলেও পরে ঠিক আবার বাড়িয়ে দেয়।আরও নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ও সন্মুখীন হতে হয়।

৬) লোভনীয় বিজ্ঞাপনের টোপে পড়া:

  • ওজন কমান মাত্র সাত দিনে কিংবা এই ডায়েট আপনার চেহারা ও দুনিয়া বদলে দেবে এইরকম লোক ঠকানো বিজ্ঞাপনের প্রলোভনে সহজেই পা দিয়ে ফেলি আমরা।
  • রাতারাতি পরিবর্তন ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়না। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া তাই এতে শর্টকার্ট নেই। আর ফাঁকি দিয়ে তো মহান কাজ হয়ই না।
  • তাই মাঝে মাঝে ডিটক্স ডায়েটিং করতে পারেন ও এলকোহল বা প্রসেসড ফুড থেকে দূরে থাকুন। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
  • অনেকসময় এইরকম বিজ্ঞাপনে আগের ও পরের পরিবর্তন এর ছবি দেখিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তা হয় ভুয়ো পুরোটাই ফটোশপ এর কারসাজি। তাই সঠিক উপায়ে ওজন কমাতে ধৈর্য্য জরুরি।
  • প্রাথমিক ওজন থেকে ৫-১০% কমাতে পারলেই স্থূলতা জনিত রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।

৭) অপর্যাপ্ত ঘুম:

  • বেশি ঘুম দিলে ওজন বাড়ে তরতরিয়ে এটার কোনো বাস্তবিক ভিত্তি কিন্তু নেই বরং লেট নাইটেই লুকিয়ে থাকে মোটা হয়ে যাবার প্রবণতা।
  • অনেকে মনে করেন বেশি রাত করে খেলে ওজন বেড়ে যায় একলাফে অনেকটাই কিন্তু এটিও ভ্রান্ত ধারণা। বেশি রাতে খাওয়া ও ঘুমের সাথে ওজন বাড়ার কোনো সম্পর্কই নেই।
  • বরং ঘুমের ২ঘন্টা আগে খাবার খেয়ে নিলে তা চর্বির সঞ্চয় কমাতে অনেকটাই হেল্প করে ঠিকমতো না ঘুমালে অক্সিটোসিন হরমোনের ক্ষরণ ঠিক করে হয়না ফলে মুড সুইং, মেজাজ চড়ে যাওয়া বা মানসিক চাপ সবই বাড়ে।
  • তাই রিলাক্স হয়ে বাঁচুন। চটজলদি কোনো চাপ নিয়ে ডায়েট বা ব্যায়াম করবেন না এতে শরীরের স্বাভাবিক যে প্রক্রিয়া তাতে মানাতে সমস্যা হবে।
Biswarup Parichha

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago