মাত্র্র ১ মাসে ভুঁড়ি কমাতে চান তো? কারণ ভুঁড়ি নামক শরীরের এই বাড়তি অংশটি যে আপনার আত্মবিশ্বাস এবং স্টাইলের বারোটা বাজিয়ে দেয়। তবে এই ভুঁড়ি কম করার জন্য খাওয়া কম করতে হবে না বা জিমও জয়েন করতে বলছি না।
নিজের ব্যস্ততা থেকে মোটে ২০-৩০ মিনিট মতো সময় বের করুন, তাহলেই হবে! কারণ আমি জানাবো এমন ৪টি যোগাসনের কথা যা কিন্তু মাত্র ৪ সপ্তাহের মধ্যেই আপনার ভুঁড়ি এক্কেবারে গায়েব করে দেবে।
ভুঁড়ি কমাতে যোগাসন
যোগাসন করার আগে কিন্তু ফ্রি-হ্যান্ড এক্সসারসাইজ করে নেওয়া প্রয়োজন। এতে শরীরের স্টিফনেস কমে আসে, শরীর হালকা হয়ে যায়। খাওয়ার অন্তত ৪ ঘন্টা পরে যোগাসন করা উচিত।
১. নৌকাসন
ভুঁড়ি কমানোর জন্য নৌকাসন কিন্তু মাস্ট। নিয়ম করে প্র্যাকটিস করলে কিন্তু আপনি খুব তাড়াতাড়ি নিজের শরীরের পরিবর্তন লক্ষ্য করতে পারবেন।
পদ্ধতি:
- প্রথমে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ু।| আপনার মাথা যেন ছাদের দিকে থাকে। হাত দুটি এবং পা দুটি যেন সোজা প্যারালাল লাইনে থাকে।
- প্রথমে প্রশ্বাস নেওয়ার সাথে আপনার পা দুটি একসাথে ওপরের দিকে তুলুন ৬০ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেল করে। ১০ অবধি গুনুন মনে মনে। এবার নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে পা দুটি নামিয়ে নিন।
- এবার প্রশ্বাস নিয়ে আপনার শরীরের কোমরের থেকে ওপরের অংশটি ওপরের দিকে তুলুন, আপনার হাতদুটি যেন সোজা পায়ের সাথে প্যারালাল লাইনেই ওঠানো হয়। এইভাবে ১০ অবধি গুনুন। একই ভাবে নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে শুয়ে পড়ুন। এরকম দু’বার করুন।
- এবার আপনার শরীরের ওপরের অংশ ও পা দুটি একসাথে ওপরের দিকে তুলুন যাতে নৌকোর মত দেখতে লাগে। ১০ অবধি গুনে শুয়ে পড়ুন। পুরো যোগাসন ২ বার করে রিপিট করুন।
- প্রথম সপ্তাহে ১০ পর্যন্ত গুনবেন, দ্বিতীয় সপ্তাহে ২০, তৃতীয় সপ্তাহে ৪০ এবং চতুর্থ সপ্তাহে ৬০ অবধি গুনলে ভালো।
২. উষ্ট্রাসন
এই আসন নৌকাসনের পর করলে ভালো। এতে আপনার বডি ফ্লেক্সিবল হয় এবং খুব তাড়াতাড়ি পেটের চর্বি কমে যা।
পদ্ধতি:
- প্রথমে বজ্রাসনে বসুন।
- এবার আপনার শরীর পুরো হাঁটুর ওপর ভর করে সামনের দিকে উঠুন। আপনার পায়ের পাতা এমন করে রাখতে হবে যাতে পায়ের গোড়ালি দুটি পরস্পরকে স্পর্শ করে থাকে এবং পায়ের পাতা দুটি দু’দিকে থাকে।
- এবার আপনার হাত দুটি সামনের দিকে সোজাসুজি রাখুন। প্রথমে ডান হাতটি পেছনের দিকে করে ডান গোড়ালি স্পর্শ করুন। তারপর বাঁ হাত পেছনের দিকে ঘুরিয়ে বা গোড়ালিটি স্পর্শ করুন।
- এবার আপনার কোমর ওপরের দিকে তুলুন। এই অবস্থায় ২০ সেকেন্ড অপেক্ষা করুন। এবং ধীরে ধীরে প্রথমে ডান হাত এবং পরে বা হাত সামনের দিকে এনে স্বাভাবিক অবস্থায় বসুন। এই আসন পরপর দুবার রিপিট করুন। প্রথম সপ্তাহে ২০, দ্বিতীয় সপ্তাহে ৩০ এবং তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহে যথাক্রমে ৪০ ও ৫০ অবধি অপেক্ষা করলে ভালো।
৩. পদহস্তাসন
অন্য দু’টি আসনের মত এই আসনও খুব কার্যকরী ভুঁড়ি কমানোর জন্য।
পদ্ধতি:
- প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান পা দুটি জোড়া করে এবং হাত দু’টি দু’পাশে রাখুন।
- দীর্ঘ প্রশ্বাস নিতে নিতে দু’টি হাত দু’পাশ দিয়ে ওপরের দিকে তুলুন পাতা দু’টি জোড়া করে পেছনের দিকে কিছুটা বেন্ড হয়ে যান। ১০ অবধি গুনে আবার দীর্ঘ প্রশ্বাস নিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকুন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে। আপনার হাতের পাতা দিয়ে নিচের মেঝে স্পর্শ করুন হাঁটু না ভেঙে এবং আপনার মাথা হাঁটুতে স্পর্শ করানোর চেষ্টা করুন। এই ভাবে ১০ অবধি গুনুন। এবার ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় আসুন।
- এই আসনটিও পরপর দু’বার করে করতে হবে। এবং একই ভাবে প্রথম সপ্তাহে ১০ পর্যন্ত গুনবেন, দ্বিতীয় সপ্তাহে ২০, তৃতীয় সপ্তাহে ৪০ এবং চতুর্থ সপ্তাহে ৬০ অবধি গুনলে মাত্র ১ মাসের মধ্যেই ভুঁড়ি কিন্তু কমবেই কমবে।
৪. পশ্চিমোত্থাসন
এই আসন পদহস্থাসনের পরে করা উচিত। এটিও কিন্তু খুব কার্যকর জলদি ভুঁড়ি কমানোর ক্ষেত্রে।
পদ্ধতি
- প্রথমে পদ্মাসনে বসুন। আপনার শিরদাঁড়া যেন সোজা থাকে। এবার একে একে দুটি পা সামনের দিকে সোজা করে ছড়িয়ে দিন। পায়ের পাতা দু’টি যেন পরস্পরের স্পর্শে থাকে।
- এবার আপনার হাত দু’টি দীর্ঘ প্রশ্বাসের সাথে দু’পাশ থেকে মাথার ওপরের দিকে সোজা করে তুলুন। শিরদাঁড়া যত সম্ভব সোজা স্ট্রেচ করে নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে সামনের দিকে ঝুঁকে হাতের পাতা দু’টি দিয়ে পায়ের গোড়ালি স্পর্শ করার চেষ্টা করুন এবং মাথা হাঁটুতে লাগানোর চেষ্টা করুন হাঁটু না ভেঙে। ১০ অবধি গুনুন। স্বাভাবিক অবস্থায় আসুন ধীরে ধীরে।
- এই আসনটিও পরপর দু’বার করে করতে হবে। এবং একই ভাবে প্রথম সপ্তাহে ১০ পর্যন্ত গুনবেন, দ্বিতীয় সপ্তাহে ২০, তৃতীয় সপ্তাহে ৪০ এবং চতুর্থ সপ্তাহে ৬০ অবধি গুনলে মাত্র ১ মাসের মধ্যেই আপনি আপনার দেহে পরিবর্তন বুঝতে পারবেন।
এই সমস্ত আসন করার পরেই কিন্তু শবাসন করা প্রয়োজন। যোগাসন শেষ করে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে তবেই জল খেতে পারেন। কারণ যদি হার্টের প্রবলেম বা হাই প্রেশার থাকে বা অন্য কোনো রকম শারীরিক কমপ্লিকেশন থেকে থাকে তাহলে কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই যোগাসন করবেন। গর্ভবতী মহিলারা কোনো অবস্থাতেই এই ধরনের যোগাসন করবেন না।
আর বাকি যাদের শরীরে ভুঁড়ি উঁকি মারছে বা বেশ ভালো রকম ভাবেই জানান দিয়েছে তাঁরা কিন্তু অবশ্যই ট্রাই করুন। কারণ তাহলে মাত্র ১ মাসের মধ্যেই আপনি হয়ে উঠবেন স্লিম এবং টোনড বেলির অধিকারী।