শরীরের কর্মক্ষমতা ধরে রাখতে সুষম খাদ্য একান্ত আবশ্যক। সুষম খাদ্যের মোট ছয়টি উপাদানের অন্যতম হলো ভিটামিন। শারীরবৃত্তীয় অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা ও ইমিউন তন্ত্র সচল রাখতে ও ইমিউনিটি বাড়াতে যে ভিটামিনটি আমাদের অপরিহার্য তার নাম হলো ভিটামিন-সি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ও দেহে লোহার ভারসাম্য ঠিক রাখতে এর জুড়ি নেই।যেটা মেয়েদের ভীষণ দরকারি। বিশেষ করে একজন পূর্ণ বয়স্ক মহিলার প্রতিদিন ৭৫মিলিগ্রাম ভিটামিন সি প্রয়োজন হয়। তাই আজ আপনাদের সামনে হাজির ভিটামিন সি ও তার রকমারী বিষয়ের তথ্য।
ভিটামিন সি’ এর নানান উৎস:
টক জাতীয় ফল:
যেকোন টকজাতীয় ফলে ভিটামিন সি এর আধিক্য থাকে। তাই আঙুর, কমলালেবু ইত্যাদি ফল গুলি খেলে তার থেকে ৭০মিলির বেশি ভিটামিন সি পাবার সম্ভাবনা থাকে।
ব্রকোলি:
ব্রকোলি এমনি তেই পুষ্টিকর একটি সব্জি। এটি খনিজ ও ভিটামিন এর ভান্ডার।১০০গ্রাম সেবনে ভিটামিন সি লাভ হয় ৩০মিলির ও বেশি।
টমেটো:
স্যালাড হোক বা চাটনি এই সব্জি থাকে সবার পছন্দের তালিকায়। এটি সুস্বাদু ও বটে। তাই টমেটো খান বেশি করে।
লঙ্কা:
সবুজ লঙ্কা হলো ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস। এটিতে ক্যাপমাইসিন থাকে যা প্রদাহ ও ব্যথা কমাতে সাহায্য করে ও ফ্যাট ও বার্ন করায়।
পেঁপে:
প্রতি ১০০গ্রাম পেঁপে তে ৮৭মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।
পেঁপের প্যাপাইন এ নানা ভালো উপাদান আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং স্ট্রেস ও এলঝাইমার্স এর মত রোগ এর প্রকোপ থেকে রক্ষা করে।
স্ট্রবেরী:
ফ্রুট কাস্টার্ড বা আইস্ক্রিম এ এবার থেকে বেশি করে স্ট্রবেরি খান। এটা খেলে ভাস্কুলার রোগ, ডেমনেশিয়া, ডায়বেটিস এর মত রোগ দূর হয়।
এতে থাকা ম্যাঙ্গানিজ ও ফোলেট মেটাবলিক রেট উন্নত করে।
মিষ্টি আলু:
মিষ্টি আলুর মধ্যেও ভিটামিন সি, বেটা ক্যারোটিন ও নানা স্বাস্থ্যকর মিনারেল থাকে।
অন্যান্য জিনিস:
কিউই ফল, বাঁধাকপি, লেটুস পাতা ও আনারস এর মধ্যেও ভিটামিন সি অফুরন্ত মেলে। এগুলি ফ্ল্যাভেনয়েড ও পটাশিয়াম এও সমৃদ্ধ।
ভিটামিন সি এর আনুষঙ্গিক কিছু গুন:
ভিটামিন সি এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো এস্কর্বিক এসিড।
এটি সামান্য তাপেই নষ্ট হয়। তাই এটি সেদ্ধ করে খেতে নেই।
সাইট্রিক ফল ও কাঁচা ফলে বেশি থাকে এই এসিড পাকা ফলের তুলনায়।
সাইনাইটিক সংক্রমণ প্রতিরোধ এ এই এসিড এর উপকারিতা অনন্য।
এটি এন্টি অক্সিডেন্ট এ ভরপুর।জলেও সহজে দ্রবণীয় তাই বেশি গ্রহণ করলেও অসুবিধে নেই।
শরীরে ইউরিক এসিড এর মাত্রা কম করতে সাহায্য করে এবং হার্ট এটাক বা স্ট্রোক এর সম্ভাবনা দূরীভূত করে।
রক্তলসিকা ও টিস্যুর সক্রিয়তা বাড়াতেও সমানভাবে ইফেক্টিভ।
ভিটামিন সি অভাবজনিত রোগ:
ভারতের বেশীভাগ মানুষ বিশেষ করে মহিলারাই ভোগেন এই ভিটামিন এর অভাবে এবং তারা এটি নিয়ে যথেষ্ট অসচেতন ও থাকেন।
ভিটামিন সি শরীরে সঞ্চিত করা যায়না তাই এটির অনবরত যোগান শরীরকে দিয়ে যেতে হয়।
ভিটামিন সি এর অভাবে ত্বকে কোলাজেন সংশ্লেষ বন্ধ হয়ে গিয়ে এপিডার্মিস ক্ষয় হতে শুরু করে।ত্বক হয়ে ওঠে অনুজ্জ্বল, শুস্ক।
দাঁতের ক্ষয় হয়।ক্যালসিয়াম এর অভাব দেখা দেয়।দাঁত সময়ের আগে পড়ে যায়।মাড়ি থেকে রক্তপাত ঘটে।
শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়না। বারবার ঠান্ডা লাগে ও সর্দি কাশি হয়।রক্তে শ্বেতকণিকা হ্রাস পায়।
হাড়ের গঠন সামঞ্জস্য হ্রাস পায়।অস্থি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং অস্টিওপোরোসিস এর মত রোগ দেখা দেয়।
ক্লান্তিবোধ,মাথাঘোরানো, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি উপসর্গ থাকলে আমি নিশ্চিত হোন যে আপনার ভিটামিন সি এর ঘাটতি রয়েছে।
সঠিক সময়ে ভিটামিন সি না যোগান দিলে তা পরবর্তীতে এনিমিয়ার দিকে অগ্রসর হতে পারে।