আপনাদের সবার হয়তো জি বাংলা চ্যানেলে আমার দুর্গা সিরিয়লের নাম মনে আছে। জি বাংলা বরাবরই এই ধরনের সিরিয়াল আমাদের উপহার দিয়েছে যেখানে সাধারণ মেলোড্রামার থেকেও আমাদের আশেপাশের নানা ঘটে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নকে তুলে আনা হয়, যেমন ধরুন রাশি। যেখানে এক ধরনের প্রতিবাদ থাকে। এই সিরিয়ালেও আমরা সেইরকমই বিষয়টা পাই। এখানে আমরা মূলত নারীর ক্ষমতায়নের প্রসঙ্গটা পাই এবং পাই খুবই যথোপযুক্ত সময়ে, কারণ বর্তমানে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও মহিলা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাদের রাজ্যের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। আচ্ছা, আমরা কী কোনোভাবে আমার দুর্গা সিরিয়ালের দুর্গা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে মিল পাই? আসুন দেখা যাক।
সিরিয়ালের মুখ্য চরিত্র দুর্গা গ্রামের সাধারণ মেয়ে। তার বাবা একজন লাইব্রেরিয়ান, মা সাধারণ গৃহবধু, আর আছে এক দিদি। বলতে হলে গ্রামের এক সাধারণ পরিবারের সাধারণ মেয়ে। কিন্তু, পরিস্থিতির চাপে এই মেয়েকেই হয়ে উঠতে হয় এক প্রতিবাদী চরিত্র, পরবর্তী কালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। আচ্ছা, আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও তো সাধারণ এক পরিবারেরই মেয়ে। ৩০বি, হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের টালির চালের যে বস্তি তার দু’টো ঘর ভাড়া নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা শ্রী প্রমিলেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। মেঝে মাটির। বৃষ্টি হলে ফুটো টালি দিয়ে জল ঝরত। ১৭ বছর বয়সে বাবা মারা যান। যাতে বাড়িতে খানিক সাহায্য হয় তাই সেই বয়সেই নিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রাস্তার ধারের দুধের ডিপোর সেলস গার্লের চাকরি। এই রকম অবস্থাই ছিল আমাদের আজকের মুখ্যমন্ত্রীর। আমাদের দেশের সাপেক্ষে কোন মহিলা ক্ষমতায় এসেছেন এরকম নাম আমাদের জিজ্ঞাসা করলেই আমাদের বোধহয় প্রথম মনে আসে ইন্দিরা গান্ধীর কথা। কিন্তু, ইন্দিরা গান্ধীর পারিবারিক, রাজনৈতিক অবস্থা, পৈতৃক উত্তরাধিকারের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন মিল নেই। এই যে সাধারণ ঘর থেকে উঠে এসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও তারপর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী – এই কষ্টের সফরটা কোথাও গিয়ে সিরিয়ালের দুর্গার লড়াইতে আমরা পাই। সাধারণ মেয়ের অসাধারণ হওয়ার লড়াই।
কিন্তু, পার্থ্যকও তো আছে। যেমন ধরুন, দুর্গা আসলে কলেজে পড়তে পড়তে কোন বিরাট রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলেজে এক বিরাট রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল। যুবনেত্রী হিসাবেই তাঁর উঠে আসা। তাছাড়া তাঁর বাড়িতে ছিল কংগ্রেসের অবাধ যাতায়াত। কংগ্রেসি নেতা রথীন তালুকদার, বিভা মিত্র, আবার আসতেন সিপিআই নেত্রী মণিকুন্তলা সেন। তাই রাজনৈতিক পরিবেশে তিনি অনেকটাই এক্ষেত্রে শিক্ষিত হয়েছিলেন যেটা ছিল না দুর্গার।
আবার দেখুন মন্ত্রী অভিরূপ মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেই তো দুর্গার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া। অনেক আঘাত সহ্য করেই দুর্গা আসলে এই জায়গায় এসেছে। আমাদের রাজ্যেও তো মুখ্যমন্ত্রী পুরুষ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। পুরুষ বললাম কারণ মহিলার মহিলার বিরুদ্ধে লড়াই আমরা দেখেছি বাংলাদেশেই। সিরিয়ালেও আমরা তাই দেখলাম। কিন্তু, এখানে পার্থক্য হল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন সম্পর্ক নেই, যেখানে দুর্গার সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বী যিনি তিনি আসলে তার শ্বশুর। আমাদের মনে থাকবে মুখ্যমন্ত্রী হবার আগে তাকে কীভাবে মহাকরণ থেকে চুলের মুঠি ধরে বার করে দেওয়া হয়। আর তখনই তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি মহাকরণে আবার আসবেন মাথা উঁচু করে। দিদির মৃত্যুর পর দুর্গার প্রতিজ্ঞার কথা আমাদের মনে আছে।
সবশেষে বলার মুখ্যমন্ত্রী হবার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে বড় কাজ ছিল মহাকরণ থেকে প্রশাসনিক ভবন নবান্নে নিয়ে যাওয়া। কারণ হিসাবে যদিও তিনি বলেছিলেন মহাকরণের মেরামতের জন্যই এই সিদ্ধান্ত, কিন্তু, আমাদের এটাও মনে হয় যে আসলে মহাকরণের অপমানের থেকে তিনি সরে নতুনভাবে নবান্ন থেকে শাসনকাজ চালাতে চান, ঠিক যেমন দুর্গা আর সূর্যতোরণে ফিরে যায়নি।
মেয়েদের বরাবরই ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে ধরে রাখার ব্যবস্থা করার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু, তার থেকে বেড়িয়ে এসে বৃহত্তর পরিসরে মেয়েদের নিজেদের প্রমাণ করাটাই সর্বকালের চ্যালেঞ্জের মতো। সেই চ্যালেঞ্জই আমরা রিয়েল লাইফে দেখি আমাদের মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে, আর রিল লাইফে দেখি দুর্গার মধ্যে। পুরোটাই আসলে ঘরের মেয়ের রাজনীতিতে পা দেওয়ার গল্প, রাজনীতি যে কোন পরিসরেই।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…