আচ্ছা একটা কথা বলুন, আপনার অম্বল হলে হাঁটু ব্যথার ওষুধ খান কি? কিম্বা ধরুন জ্বর হলে প্রেশারের পিল? নিশ্চই নয়, তাহলে ত্বকের যত্নে এরকম উধোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর মতো মিসম্যাচ ব্যাপার করেন কেন?
আমাদের ত্বকের ক্ষতি করার কারণ গুলো যেমন- ইউভি রে, দূষণ, ধূলো ইত্যাদি একই থাকলেও ত্বকের ধরন বা স্কিন টাইপ অনুযায়ী তার ট্রিটমেন্ট ভিন্ন হয়। নিজের স্কিন টাইপ অয়েলি তার পরিচর্যা সেনসিটিভ স্কিন এর মত হবে না মোটেই বা বিপরীত ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সুতরাং, স্কিনের ব্যালেন্স ও চাহিদা জেনে এগোনোই বুদ্ধিমানের কাজ!
তাই, আজ আমরা আপনাদের ত্বকের ধরন অনুযায়ী ঘরোয়া যত্নের টিপস ও পার্লারে গেলে যাতে বেকায়দায় না পড়েন সেই সম্পর্কেও সমাধান বাতলে দেব।
শিরোনাম পড়ে অবাক হলেন? এইতো বলছিলাম স্পেসিফিক নিড এর কথা আবার যৌথ কেন? আসলে আমাদের স্কিন এর টাইপ যেমনই হোক না কেন কিছু নির্বাচিত জিনিস রয়েছে যা প্রাত্যহিক ভাবে মেনে চললে সেটা সবার পক্ষেই লাভদায়ী হয়। এটাকে প্যানাসিক ট্রিটমেন্ট ও বলে কারণ এটি সবার উপরে পরীক্ষিত আর কোনো ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে না।
যেকোনো স্কিন কেয়ার রুটিনে প্রথম পর্যায় বলা চলে ক্লিঞ্জিং কে। এটি ছাড়া আপনার রূপচর্চা অসম্পূর্ণ। ক্লিঞ্জিং হলো মুখ গলা পরিষ্কার করার পালা যার ফলে তেল, ময়লা যেগুলো মুখের রোমকূপে জমে থাকে সেগুলো পরিশ্রুত হয়ে বেরিয়ে যায়। তাই যেকোনো কোন আইটেম বা বিউটি প্রোডাক্ট ফেসে এপ্লাই করার আগে সফ্ট ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ক্লিঞ্জিং করে নিন। অনেকে মধু বা ভিনিগার দিয়েও অর্গানিক উপায়ে মুখ ধোয়। এটা করার ফলে আপনার ত্বকে ব্রণ হবেনা, প্রাণহীন ভাব থেকে ত্বক আড়মোড়া ভেঙে উঠবে এবং ভেতরের উজ্জ্বলতা ও সকলের সামনে ধরা দেবে। চেষ্টা করুন প্যারাবেন ফ্রি, ভিটামিন সি যুক্ত ক্লিনজার ইউজ করতে।
টোনিং তো ক্লিঞ্জিং এর পরের ধাপ। তাই এটি ও মিস করা যাবেনা কোনোভাবেই। ক্লিঞ্জার রোমকূপের ময়লা সরালে পর স্কিনের পোর অর্থাৎ এপিডার্মাল স্তরের বদ্ধদ্বার এর পরিচর্যায় অংশ নেয় টোনার। এছাড়াও ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স বা অম্ল-ক্ষার মাত্রা নির্ধারণ ও হাইড্রেশন দেয়ার মতো কাজ গুলি অনায়াসে করে থাকে। সর্বোপরি, ক্লিঞ্জিং এর পরে এটি আমাদের ত্বকে একটা প্রটেক্টিভ লেয়ার প্রদান করে ক্লিনজার এর পরিপূরক হিসেবে। চেষ্টা করবেন মেন্থল, এলকোহল কৃত্রিম সুবাস যুক্ত টোনার থেকে দূরে থাকতে।
ময়েশ্চারাইজিংঃ
এটি রূপচর্চার প্রাথমিক পর্যায়ের শেষ অধ্যায়। কথাতেই আছে সব ভালো যার শেষ ভালো তার। ময়েশ্চারাইজার এর কাজই হলো ময়েশ্চার বা আর্দ্রতা দেয়া ও শুকনোভাব মুখ থেকে দূর করা। এতে করে ত্বক পুষ্টি পায়, ধরে রাখতে পারে তারুণ্য। তবে যাদের অয়েলি স্কিন তারা জেলবেসড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন তাতে স্কিন টেক্সচার উন্নত হয়।
পর্যাপ্ত খাওয়া ও ঘুমঃ
স্কিনের যত্নে সব করার করার পর ও ফল মেলে না অনেকেই অভিযোগ করেন। তাদের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় তারা খাওয়া ঘুমে নিয়মিত সময় ও কেয়ার দেন নি। তাই ত্বকের যত্নে ভিটামিন সি,ই,বি,রেটিনল,ম্যাগনেশিয়াম,জিঙ্ক,আয়রণ, ক্যালসিয়াম, ওমেগা থ্রি ইত্যাদি যেসব খাবারে আছে সেগুলো খান এবং সেই সাথে নিশ্চিন্তে ঘুম দিন অন্তত ৮ঘন্টা দৈনিক। দেখবেন অনেকটাই পরিবর্তন চোখে পড়বে কারণ ঘুমোনোর সময় আমাদের ত্বকে হিলিং প্রসেস শুরু হয় এবং পরে সেটা হেলদি দেখতে লাগে।
অয়েলি ত্বক মানেই তেল জবজবে বদন নয় মোটেই, ঘরোয়া উপাদানের সঠিক মিশেলে নিজের স্কিনকে যদি রেগুলার মেন্টেন করা যায় তবে সেখানে আক্ষেপের জায়গা থাকেনা।
তৈলাক্ত ত্বকে এমনিতেই তেল বেশি থাকে তাই সেটার স্পেসিফিক ট্রিটমেন্ট করানো একান্ত দরকার। সেই জন্য ফ্রুট হচ্ছে বেস্ট উপায়। ১টা পাকা কলা, ১ টেবিলচামচ লেবুর রস ও ১ টেবিলচামচ মধু এক সাথে মিক্স করে মুখে চক্রাকারে ম্যাসাজ করে নিন। এর মধ্যে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রাকৃতিক ভাবে আপনার ত্বক কোমল করবে,জেল্লা বাড়াবে এছাড়াও অবাঞ্ছিত একনে থেকে বাঁচাবে।
মুখের তেলের পাল্টা হলো চা তেল। চা তেল এক টেবিলচামচ এর সাথে 1 টেবিলচামচ টম্যাটো এক্সট্রাক্ট মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে দেখুন। এরপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন মিনিট দশেক পর। এটি অয়েলি স্কিনে আশ্রয় করে থাকা ব্যাকটেরিয়া দের যম। পাশাপাশি এর এন্টিসেপটিক প্রপার্টিজ ব্লেমিশ ও ফাঙ্গাল সংক্রমণ রুখে দেয়।
পুদিনা পাতার রস বের করে সেটা দিয়ে আইস কিউব বানান। এবার মুখের চারপাশ ও গলার কাছে ঘষে নিন। দেখুন আপনাকে আগের চেয়ে পরিছন্ন লাগবে ও হাইজিন মেন্টেন হবে। ত্বকের জ্বালাপোড়া, ফুসকুড়ি ও লালছোপ ভুলে যাবেন।
একটা পাত্রে ডিমের সাদা অংশ ও ওটস মিশিয়ে নিন। ভালো করে ফেটিয়ে মুখে লাগান। ওটস এ থাকা স্যাপনিন যৌগ অতিরিক্ত তেল এবসর্ব করে ও ক্ষতিকারক রেডিকেল অপসারণ করে দেয়। ইনস্টেন্ট একটা রিফ্রেশিং অনুভূতি সঞ্চার করবে।
তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা হলো একটুতে কালচে ভাব ধরে যাওয়া। সেটার জন্য দরকার স্ক্রাবিং। চিনি, অরেঞ্জ জুস ও কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে পেস্ট বানান থিক করে। এবার ত্বকে এন্টি ক্লকওয়াইজ মালিশ করে কিছুক্ষন পর জলে ধোন।
মুলতানি মাটিকে অলকিউর প্রোডাক্ট বলা হয় যা লোমকূপের সমস্যায় ভালো কাজ দেয়। মুলতানি মাটি ত্বকে অতিরিক্ত তেল শোষণ করে ও এক্সফোলিয়েশন ঘটায়। এছাড়া ডার্ক সার্কেল ও সূর্যরশ্মির ক্ষতিকারক ইউভি থেকে রক্ষা করে। ২ টেবিলচামচ মুলতানি মাতু ও গোলাপজলের পেস্ট বানিয়ে ২০মিনিট মুখে রেখে শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন।
শুতে যাবার আগে নাইট ক্রিম এর ব্যবহার মাস্ট করতে হবে যাতে ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এতে করে আপনার ত্বকের পেলব ও টানটান সতেজ ভাব ও অপরিবর্তিত থাকে।
পার্লারে মুখে মেকআপ করে সাজার সময় তেলের ভারসাম্য ও সিবাম গ্রন্থির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ এ রাখবে এমন আইটেম প্রসাধনে ব্যবহার করুন। যার জন্য পোরস ফিক্স টোনার, গ্লিসারিন বেসড জিনিসপত্র ইউজ করুন।
ভিটামিন ই ও হ্যালুরণিক এসিড সমৃদ্ধ উপাদান ক্রিম ত্বক মসৃন ও তরতাজা রাখবে। যেহেতু ত্বকে তেল বেশি আসে তাই মেকআপ এর আগে মুখে স্ট্রিমিং করিয়ে নেবেন সাথে ক্যারি করবেন ওয়াইপার যদি ওকেশন বা পার্টিতে যাচ্ছেন। এছাড়াও ঠোঁটের বিশেষ যত্ন দরকার। প্রাইমার কোটিং ও হাইলাইটার ইউজ করবেনই করবেন।
সেনসিটিভ স্কিন হলো দানা, পোরস ,রাশ ও এলার্জির সমাহার। একটুতেই আক্রান্ত হবার প্রবণতা বেশি থাকে বলেই এই ধরনের স্কিনকে স্পর্শকাতর বলা হয়। স্বাভাবিক ভাবেই এটি তুলনামূলক বেশি পরিচর্যার প্রত্যাশী।
দেখুন প্যাক হলো এসেন্সিয়াল একটা কাঠামো সেন্সিটিভ স্কিনে। যে প্যাক এর কথা আপনাদের বলবো তার টোটকা ও আপনি বাড়ির অন্দরে নাগালের মধ্যেই পাবেন। সবচেয়ে বড় কথা এটি স্কিনে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। ১ টেবিলচামচ দই, ১ টেবিলচামচ মধু ও কয়েকফোঁটা এসেন্সিয়াল তেল মিশিয়ে নিন একসাথে ও স্কিনে দিন। এটা জেন্টলি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার এর কাজ করবে ও রুক্ষতা নির্মূল করবে।
এলভেরার গুণ আমরা কে না জানি! এলোভেরার পাতা কেটে নিয়ে তার জেল বের করে তার সাথে দুধের সর মিশিয়ে সন্ধ্যেবেলা স্কিনে এপ্লাই করুন। এটি এন্টিব্যাক্টেরিয়াল তাই ইচিং ও সংক্রমণ থেকে উপশম দেয়।
স্পর্শকাতর ত্বকে সানস্ক্রিন তো ব্যবহার করবেনই। কিন্তু যা তা সানস্ক্রিন নির্বাচন করলে চলবে না। সানস্ক্রিন এ এসপিএফ এর নিরাপদ মাত্রা যেন ৩০ এর বেশি হয় যেটা আউটডোরে অতিবেগুনি রশ্মি থেকে আপনার সুরক্ষাকবচ হবে।
না করোনার সময় কটন বা এন95 মাস্ক পর্যাপ্ত নয় মুখের জন্য। হলুদ ও দুধের মাস্ক দুজনের এন্টিসেপটিক গুণ ও আর্দ্রতা কাজে লাগিয়ে আপনি সুফল পাবেন। এছাড়াও চন্দন ও নিমের পাতার গুঁড়ো একসাথে মিশিয়েও মাস্ক বানাতে পারেন, যেটা খুবই কার্যকরী হবে।
সতর্কতা ও চোখ কান খোলা রাখা সেন্সিটিভ স্কিন ধরণের অন্যতম শর্ত। অবিবেচক এর মত যেকোন প্রোডাক্ট কিনেই হুড়মুড়িয়ে ত্বকে লাগাতে যাবেন না। সঠিক ভাবে পড়াশোনা ও রিভিউ দেখে তবেই সিদ্ধান্ত নিন। দরকারে অভিজ্ঞ পরামর্শ ও নিন। চেষ্টা করুন অর্গানিক জিনিসে আস্থা রাখার যেটা আপনার ত্বকের সংস্পর্শে এলে রাসায়নিক বিক্রিয়া না করে।
শরীরে ফ্রুকটজ এর ডোজ খুবই জরুরি। পাকা কলা একটা, মধু এক টেবিলচামচ ও কয়েকফোঁটা অলিভ তেল ভালো করে মেখে নিয়ে ত্বকে মালিশ করুন। ১০মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ ও ফুস্কুড়ির প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে দেখবেন এক ধাক্কায়।
সেনসিটিভ স্কিনে স্থিতিস্থাপকতা ও কমনীয় ভাব ধরে রাখা একান্তই আবশ্যক। এটার জন্য ইউজ করতে পারেন দারুচিনি পাউডার ও এভোকাডোর নির্যাস এর মিশ্রণ। এটা ত্বকের প্রদাহ দূর করে ও কোমলতা আনে।
স্কিনে শাইনি ভাব আনতে চান? সাথে এটাও চান যে বার্ধ্যকের ছাপ না পড়ুক? তবে নিয়মিত শসার রস মুখে লাগিয়ে ছেড়ে রেখে শুকনো করে ত্বকে শোষণ হতে দিন। এটা স্কিন স্মুথ করবে আর ত্বকের গর্ত ও পূরণ করবে।
পার্লারে গেলে প্ল্যাকিং করানো খুব একটা উচিত কাজ হবে না। চড়া মেকআপ ও নৈব নৈব চ। মাস্কারা বা শ্যাডো নিলে দেখবেন তাতে কৃত্রিম উপাদান এর আধিক্য যাতে না থাকে। মেকআপ রিমুভ করার সময় মাইল্ড জিনিস ইউজ করে দেখুন এবং গরম তোয়ালে দিয়ে ড্যাব করে নেবেন, বেশি রগড় মোটেই দেবেন না। এতে ইরিটেশন বেড়ে যেতে পারে। মিনারেল যুক্ত ফেস পাউডার, সিলিকন বেসড ফাউন্ডেশন, পেনসিল লাইনার ব্যবহার করা ভালো। ল্যাটেক্স এর তৈরি জিনিসপত্র সতত বর্জনীয়।
শুস্ক ত্বকের প্রধান সমস্যা খসখসে ভাব যা সৌন্দর্যের বারোটা বাজিয়ে দেয়। সবসময় একটা অনুজ্জ্বল চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়, সঙ্গী হয় অস্বস্তি। সুন্দর মেকআপ করলেও শুস্ক ত্বক তাতে গ্রহণ লাগায়। চট করে ফেটে যায় স্কিন, এজিং হয়েও বলি রেখা দেখা দেবার পথ প্রশস্ত করে।
ত্বকের খড়খড়ে ভাব থেকে যদি তুরন্ত মুক্তি পেতে চান তবে প্রাকৃতিক ব্লিচার আলুর রস এর থেকে বেটার কিছু সাজেস্ট করতে পারছিনা। নিয়মিত আলুর রস চোখ ও ঠোঁটের অংশ বাদ দিয়ে লাগান, চুলকানি থেকেও রেহাই পাবেন আর ত্বকের স্তরের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান ও হবে।
ডিমের সাদা অংশ ২ টেবিলচামচ মতো নিয়ে তার সাথে কাঠবাদামের তেল মিশিয়ে নিন ১টেবিলচামচ মতো। এই জম্পেশ মাস্ক ত্বককে রিল্যাক্স করাতে সাহায্য করবে। অফিস বা বাজারের ধুলো, ময়লা পরিবেশ থেকে আসার পর ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ দিয়ে এটা ট্রাই করুন। কোষ উদ্দীপিত করে।
স্নান করার আগে রুক্ষ ত্বকধারী দের একটা আপ্ত বাক্য মেনে চলতে হবে। ১ টেবিলচামচ অলিভ তেল, ৫ টেবিলচামচ লবণ ও ১ টেবিলচামচ লেবুরস যোগ করে একটা স্ক্রাব বানিয়ে নিন। এটা ইউজ করলে স্কিনের ফ্লেকিনেস ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দূর হবে। অলিভ তেলের ফ্ল্যাভেনয়েড ও লেবুর সাইট্রিক এসিড ত্বকের পুনর্গঠন এ সহায়তা করবে।
দই ও পেঁপের মিলিত যুগলবন্দি মেশানো পেস্ট একদিকে প্যাপাইন উৎসেচক ও অন্যদিকে ল্যাকটিক এসিড ফর্মূলা ত্বককে আর্দ্রতা, ও দৃঢ়তা দান করে। মরাকোষ ও সব ঝেড়ে ফেলে দেয় যার জন্য মলিন দেখায় না মুখ।
স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার সময় সেরামাইড, ডাইমেথিকন, গ্লিসারিন, হ্যালুরণিক এসিড, ল্যানোলিন ইত্যাদি যাতে থাকে সেগুলো ইনগ্রেডিয়েন্ট লিস্ট এ ভালো করে চোখ বুলিয়ে নেবেন।
হ্যাঁ! স্কিন কেয়ার রুটিনে ফেসিয়াল একটি সচেতন প্রক্রিয়া যেটা ত্বকে হাইড্রেশন দেয়া ও সার্বিক যত্নের একটা দিক।গাজর এর পেস্ট বানিয়ে তাতে কয়েকফোঁটা গোলাপজল মিশিয়ে স্মুথ পেস্ট বানিয়ে হাল্কা হাতে মালিশ করুন। এটা ব্লাড সার্কুলেশন ঠিক রাখে। এরপরের স্টেপে মুখ ধুয়ে ফুটন্ত জলে মাথা তোয়ালে দিয়ে ঢেঁকে স্টিম নিন পোরস খোলার জন্য। এবার এলোভেরা,ভিটামিন ই তেল,নিমপাতার গুঁড়ো ও মধু একসাথে মিশিয়ে লাগান। এটা প্রাকৃতিক ভাবে টোনিং এর কাজ করে। ব্ল্যাকহেডস হবেনা আর। ত্বকের গভীরে গিয়ে এর মধ্যে থাকা ১৮টি এন্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে নারিশমেন্ট দিয়ে সজীবতা এনে দেয় ফলে ত্বক ডাল দেখায় না।
স্লিপিং মাস্ক আপনাদের জন্য কেন দরকারি জানেন? এটা সারা রাত্রি আপনার ত্বককে ফ্রেম করে ফটো ফিনিশ লুক এর জন্য সেটাও ভেতর থেকে শেপিং করে। স্লিপিং মাস্ক বানানোর জন্য আপনার নর্মাল ক্রিম এর সাথে কোকোনাট অয়েল মিশিয়ে এপ্লাই করুন। রাতভর ট্রান্সপিরেডল ও প্রদাহ আটকায়। ট্যানিং হতে দেয় না। এর সাথে কোনোকোন দিন ওয়াটার মেলন জুস এর সাথে খানিকটা জোজোবা তেল দিয়েও দেখতে পারেন। এগুলো ত্বক থেকে টক্সিন বের করে দেবে আর রিংকেল জমতে দেবে না।
চা,কফি, ধূমপান এর অভ্যেস থাকলে ত্যাগ করুন। এলকোহল মোটেও গ্রহণ করবেন না। দিনে জুস ও লিকুইড জিনিস পর্যায়ক্রমে গ্রহণ করতে থাকুন।
মেকআপে এমন কোনো জিনিস রাখবেন না যা আপনার এলার্জি তৈরি করবে ত্বকে। টি-জোনের বিশেষ খেয়াল অবশ্যই রাখুন। মেকআপ বসানোর আগে গোটা মুখে বরফ কুচি ঘষে নিতে পারেন ত্বক রিফ্রেশ এর জন্য। এরপর টোনার, বিবিক্রিম ও ফাউন্ডেশন ট্রাই করুন। তবে সেটার বেস যাতে তরল হয় তার খেয়াল রাখুন। লিপগ্লস ইউজ এর আগে টুথপেস্ট ইউজ করে ডেডসেল গুলো তুলে নিতে পারেন। এবার ফিনিশ করতে সেটিং স্প্রে দিয়ে নেবেন। স্মোকি আইস ও শ্যাডো লাগালে সেটা ঘন করে বেশি লাগাবেন না। মেকআপ রিমুভার ইউজ না করে নারকেল তেল এর শরণাপন্ন হন।
মিশ্রত্বক হয় শুস্ক ও তৈলাক্ত ত্বকের মেলবন্ধন। এই ত্বকে কেন্দ্রীয় অংশ নাক,চোখ হয় অয়েলি, বাকি ত্বক হয় রুক্ষ। কিছুসময় চকচক করে আবার কখনো একদমই নিষ্প্রাণ হয়ে যায়।
কম্বিনেশন ত্বককে রেডিয়েন্ট করতে এক্সফোলিয়েশন দরকার হয়। এটি মৃতকোষ সরাতে সাহায্য করে। এর জন্য সপ্তাহে একদিন সময় ব্যয় করলেই যথেষ্ট। আখরোট পাউডার ও টকদই একত্রে মিশিয়ে স্ক্রাব করে চক্রাকারে মুখে মালিশ করুন। এরপর গরম জলে ধুয়ে নিন। ভিটামিন সি এর স্কিন লাইটনিং এজেন্ট প্রাকৃতিক ভাবে পিগমেন্টেশন ফিকে করে দেয়। সুচারুভাবে তারুণ্য ফেরায়, ক্লোজড পোরস খুলে দেয়।
কম্বিনেশন ত্বকে সানস্ক্রিন এর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। যা তা সানস্ক্রিন মোটেও বাজারচলতি জিনিস প্রয়োগ করা ঠিক নয়। ভুল প্রোডাক্ট ইউজ করলে ফাইনলাইন্স দেখা দেবে এবং ত্বকের সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে দেবে। তাই টাইটেনিয়াম ডাই অক্সাইড বা জিঙ্ক অক্সাইড যুক্ত সানস্ক্রিন বাছুন অথবা ম্যাটিফাই ইফেক্ট ওয়ালা সানস্ক্রিন ও চলতে পারে।
ফেস সিরাম স্পেশালি কম্বিনেশন ত্বকের চাহিদাকে টার্গেট করে।চেষ্টা করুন পেপটাইড বা রেটিনল সিরাম লাগাতে সপ্তাহে একদিন ছাড়া। এটি স্কিন টোন উন্নত করে, ত্বকের কোঁচকানো রোধ করে ও এপিডার্মিস লেভেল এ গিয়ে পুষ্টি প্রদান করে। ডার্ক সার্কেল ও ছোপের দাগ কয়েকদিনের মধ্যেই ভ্যানিশ হতে দেখবেন।
বেসন এর ব্যবহার কিন্তু নর্মাল ত্বকে বহুল প্রচলিত। তাই এটি আমাদের লিস্টে আছে। বেসনের সাথে ওটমিল মিশিয়ে নিয়ে ইউজ করুন। জেল্লা ও মখমলে ত্বকের গেরেন্টি আমরা দিচ্ছি।
শুনে চমকে যাবেন না! গাঁদা ফুল এ থাকে অনেক আমিনো এসিড ও এন্টি ইনফ্লেমেটোরি উপাদান যাতে ইনফেকশন ত্বকে হতে পারে না। ১০-১২টা গাঁদার পাঁপড়ি, ১ টেবিলচামচ মিল্ক ক্রিম, ১ টেবিলচামচ আমন্ড অয়েল ও ১টেবিলচামচ আমলা পাউডার মিশিয়ে ত্বকে এপ্লাই করুন। ত্বকের তামাটে ভাব,ফুসকুড়ি দূরীভূত হবে। ত্বকের সামগ্রিক ভারসাম্য বজায় থাকবে ও স্কিন টাইট হবে।
ত্বক পরিচর্যার শো স্টপার হিসেবে জোজোবা,ল্যাভেন্ডার ও এলভেরার মিলিত উপাদান ত্বকে লাগিয়ে দেখুন। এটা ত্বকের ক্লান্তি দূর করে, নিটোল করে ও বিবর্ণ ত্বক উজ্জ্বল করে।
কিছু অভ্যেস এর নিয়ন্ত্রণ আপনার ত্বক ভালো রাখতে গেলে আপনাকে অনুসরণ করতে হবে। যেমন বারবার মুখে হাত দিয়ে দেখবেন না যে মুখে তেল বেরোচ্ছে কিনা! ব্লটিং পেপার ক্যারি করুন।
ত্বকের বাড়তি যত্নের জন্য কিছু প্যাক ট্রাই করে দেখতে পারেন। ১ টেবিলচামচ চালের গুঁড়ো, ১/২ টেবিলচামচ ভিনিগার, ১ টেবিলচামচ ময়দা একসাথে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে লাগাতে পারেন। এছাড়াও মেথি গুঁড়ো ও টক দই এর মিশ্রনেও কাজ হবে। ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স ও কোলাজেন বুস্ট করতে সাহায্য করে। অপটিক্যাল নার্ভে সিলিকা সংশ্লেষ হয়।
পার্লারে সবচেয়ে সেফ আপনারা। যেকোনো কিছু ট্রাই করতে পারেন। ফিন্টেড টাচ আপ করে নিতে পারেন চটজলদি।তবে সেটা যেন মাইল্ড উপাদান সমৃদ্ধ হয়। ফাউন্ডেশন ব্যবহারের আগে প্রিমিয়ার কোটিং করিয়ে নেবেন। স্যালিসাইসিক এসিড এর ট্রিটমেন্ট ও স্পা আপনাদের জন্য খুবই উপকারী।
আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…
পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…
আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…
বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…
ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…
প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…
View Comments
কোন নাইট ক্রিম ব্যাবহার করবো Oil skin এ??