শিব লিঙ্গের আরাধনায় দুধ ঢালা খুবই পবিত্র এবং এটি ছাড়া পুজো অসম্পূর্ণ বলে ধরা হয়। দুধ দ্বারা শিব লিঙ্গে স্নান করালে তাতে ভক্তির বিশেষভাব জাগ্রত করে শিব উপাসকদের মধ্যে। কিন্তু কেন? সেই প্রশ্ন জেগেছে কি আপনাদের মনে? আসুন জানি লিঙ্গে দুধ ঢালার নানা কারণ।
পৌরাণিক বিশ্বাস:
- সমুদ্র মন্থনের সময় দেবতা ও অসুরেরা মন্দার পর্বতের দ্বারা সমুদ্র মন্থন করার সময় একের পর এক ঐশ্বর্য উঠে আসার পর তা থেকে বিষ উৎপন্ন হয় যা সারা বিশ্বের জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন করার জন্য যথেষ্ট ছিল।
- এমন সময় ভগবান শিব আবির্ভুত হন বিশ্ব সংসারকে সেই সংকট থেকে উদ্ধার করতে। তিনি সমগ্র বিষ পান করে নিজের কণ্ঠে ধারণ করে নীলকন্ঠ নামে খ্যাত হন।
- কিন্তু এটি গ্রহণের পর শিবের শরীরের তাপমাত্রা ভীষণ বেড়ে যায় বিষক্রিয়ার জন্য। সেইসময় এই কুপ্রভাব থেকে শিবকে রক্ষা করতে দেবী তারা প্রকট হয়ে শিবকে স্তন্য পান করান তাতে শিব এর জ্বালা প্রশমিত হয়। সেই বিশ্বাস থেকে দুধ ঢালার রেওয়াজ রয়েছে।
- অন্য একটি মতে, দেবতারা এই সময় শিবের গঙ্গা অভিষেক করেন। যাতে শিব তুষ্ট হন। এই সময় সাপেরা এগিয়ে এসেছিল বিষের অংশ পান করে নিজেদের দাঁতে ধারণ করতে। তাই ডাবের জল বা দুধ ঢেলে শিবের অভিষেক করে তার আশীর্বাদ লাভ করার জন্য এটি ভক্তদের অনুরক্তির বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
বৈজ্ঞানিক কারণ:
- আমাদের সনাতন ধর্মীয় রীতিতে কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও রয়েছে যা অনেকেই জানি না বা জানার চেষ্টাও করি না। বর্ষাকালে দেখে থাকবেন অনেক অনেক দুধ দ্বারা শিবলিঙ্গ স্নান করানো হচ্ছে। মানুষ উন্নতির বাসনা নিয়েই শিবকে স্নান করান দুধে কিন্তু তার পেছনে যৌক্তিক কারণ রয়েছে সেটা জানি কজন?
- ধ্বংসের দেবতা রূপে প্রসিদ্ধ মহেশ্বর শিব হলাহল বা সমুদ্রো মন্থনের সময় উত্থিত গরলকে পান করেন যা বিষাক্ত দুধ গণ্য করা হয়ে থাকে।
- প্রাচীন সময়ে মানুষের বিশ্বাস ছিল বর্ষাকালে দুধের মধ্যে বিষক্রিয়া দেখা দেয়। তাই এইসময় তারা গরুর দুধ অব্দি পান করতো না।
- আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে নিষিদ্ধ রয়েছে দুগ্ধজাত সামগ্রী বর্ষাকালে গ্রহণের সময়। এইসময় বাত জাতীয় রোগের উপক্রম হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। আমাদের শরীরে বায়ু জাতীয় তত্ত্বের ভারসাম্য ঠিক থাকে না। তাই রোগের কোলে ঢলে পড়ার ঝুঁকি বেশি থাকে দুধ সেবন করলে।
- যখন গ্রীষ্ম পরবতী সময়ে বর্ষার আগমন ঘটে তখন গৃহপালিত জন্তুগুলি ঘাসের সাথে নানা ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু খেয়ে ফেলে যা তাদের দুধেও সংক্রমিত হয়। গরুর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। গরুর দুধও দূষিত হয়ে পড়ে। তাই নিজেদের রোগ থেকে ত্রাণ পেতে সেই দুধ শিব লিঙ্গে অর্পণ করে ভক্তি কামনা করা হয়।
আধ্যাত্মিক কারণ:
- সাধারণত শিব লিঙ্গ মন্দিরের গর্ভগৃহে স্থাপন করা হয়ে থাকে যাতে ভক্তরা সেই পবিত্র আবহে নিজেদের শুদ্ধ করতে পারে।
- এটাও বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে শিব লিঙ্গ পরিবেশে থাকা নেগেটিভ এনার্জি শোষণ করে চারপাশ বিশোধন করে। এই প্রক্রিয়ায় শিব লিঙ্গ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং তেজশক্তি বিকিরণ করে।
- তাই দুধ ও ডাবের জল দিয়ে সেই উষ্ণতা প্রশমিত করার চেষ্টা করা হয়ে থাকে।
- অনেকে বলেন শিব লিঙ্গে দুধ ঢালা খাদ্যের অপচয়। কিন্তু এই দুধের বেশ কিছুটা অংশ চরণামৃত ও প্রসাদ বিতরণের কাজে লাগানো হয়। তাই শিব লিঙ্গে দুধ ঢালা অত্যন্ত শুভ এবং তা পরম কৃপালাভের মাধ্যম।