এই বিশ্বের প্রাচীন ধর্মগুলির মধ্যে অন্যতম হল হিন্দু ধর্ম। শতাব্দী প্রাচীন এই হিন্দু ধর্মের এমন অনেক বিশ্বাস রয়েছে যা কয়েকশো বছর পরেও একই রকমভাবে অটুট রয়ে গিয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল গঙ্গা জল।
গঙ্গা জলের মাহাত্য কেন এত?
- গঙ্গা জলের পবিত্রতা নিয়ে হিন্দুদের মনে এক বিশ্বাস রয়েছে যা হল গঙ্গা জলে স্নান করলে মনের সমস্ত কালিমা দূর হয়। শুধু তাই নয়, মনে করা হয়, মৃত ব্যক্তির মুখে যদি কয়েক ফোঁটা গঙ্গা জল দেওয়া যায় তাহলে তাদের আত্মা শান্তি পায়। মহালয়ার দিন পূর্ব পুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা উপলক্ষে যে তর্পণ অনুষ্ঠিত হয় তাও এই গঙ্গা জলে। শুধু কি তাই, হিন্দু ধর্মের প্রতিটি পুজো-পার্বণে গঙ্গা জল একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।
- কিন্তু জানেন কি হিন্দু ধর্মে গঙ্গা জল এতখানি গুরুত্বপূর্ণ কেন? –ভারতবর্ষের ওপর দিয়ে প্রবাহিত অসংখ্য নদীর মধ্যে গঙ্গা নদীকে কেন এতটা প্রাধান্য দেওয়া হয়, সেই নিয়ে বহু মানুষের মধ্যেই প্রশ্নের উদ্রেক ঘটেছে। তবে এর উত্তর ব্যাখ্যা করতে হলে গঙ্গা নদীর উৎসস্থল এবং এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা জানা প্রয়োজন।
গঙ্গার উৎসঃ
- পুরাণ মতে, গঙ্গাকে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নিয়ে আসার নেপথ্যে যিনি রয়েছেন, তিনি হলেন ভগীরথ।
- তিনি রাজা সাগরের ষাট হাজার ছেলেকে উদ্ধার করার জন্য গঙ্গাকে মর্ত্যে এসেছিলেন।
- পৃথিবীতে আসার পর এর গতিবেগ এতটাই বেশি ছিল যে, এর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল।
- এরপর গঙ্গাকে শান্ত করতে ভগবান শিব গঙ্গাকে নিজের জটায় ধারণ করেছিলেন। এরপর বিভিন্ন শাখায় ভেঙে প্রবাহিত হয়ে চলেছিল গঙ্গা।
- প্রসঙ্গত, স্বর্গ থেকে আসার সময়ে গঙ্গা ভগবান বিষ্ণুর পাদদেশ হয়ে প্রবাহিত হয়েছিল বলে এর আর এক নাম বিষ্ণুপদী।
গঙ্গার পবিত্র জলঃ
তবে শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাসের ভিত্তিতেই নয়, বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও দেখা যাবে যে, গঙ্গার জল খুবই উপকারী এবং এর কিছু অসাধারণ দিক রয়েছে। যেমন-
- গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উৎপন্ন হয়ে বঙ্গোপসাগরে মেশার আগে পর্যন্ত এর যাত্রাপথে প্রায় কয়েক কোটি মানুষের তৃষ্ণা নিবারণ করে এই গঙ্গাজল।
- হিমালয় থেকে এই সূত্রপাত ঘটার কারণে এর সঙ্গে বিভিন্ন ওষধি ও গুল্ম মিশেছে। যার ফলে বলা হয় গঙ্গা জল একজন রোগীর শরীরে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
- জানা যায়, গঙ্গার জলে ফোস নামে একধরণের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিত লক্ষ্য করা যায়। বলা হয় এই বিশেষ ব্যকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য হল এটি গঙ্গার জলে মিশে থাকা দূষণ গ্রাস করে ফেলে। যার ফলে প্রাকৃতিকভাবেই গঙ্গার দূষণ নিয়ন্ত্রণ হয়।
- বর্ষা ঋতু বাদ দিলে গঙ্গার জলে অন্যান্য নদীর থেকে পঁচিশ শতাংশ বেশি অক্সিজেন বিরাজ করে। যা গুণমানের দিকে থেকে অন্যান্য নদীর তুলনায় অনেক বেশি উন্নত।
- বিশেষজ্ঞরা বলেন, গঙ্গা জলে মিশে থাকা ঔষধি গুণ একাধিক রোগ নিরাময়ে বিশেষভাবে সাহায্য করে। হাঁপানি(অ্যাজমা), জ্বর, বদহজমের মতো একাধিক সমস্যার সমাধানসূত্র হতে পারে এই গঙ্গা জল। তাই এই জল সেবন করলে এইসব রোগ থেকে মুক্ত পাওয়া সম্ভব।
- শুধু তাই নয়, হিন্দু ধর্মে গঙ্গা জলে স্নান করার একটা আলাদাই মাহাত্ম্য রয়েছে। বলা হয় গঙ্গার জলে থাকা খনিজ লবণ, ঔষধি গুণ এবং শুদ্ধতার জন্য গঙ্গা স্নান খুবই ভাল। গঙ্গার এইসব গুণের জন্য একে জীবনদায়িনী গঙ্গা বলেও অভিহিত করা হয়।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ সত্যি কথা বলতে গঙ্গা আজ প্রায় বিপন্ন হতে বসেছে। মনুষ্যসৃষ্ট দূষণের জেরে গঙ্গার জল এখন ব্যবহার করতে ভয় পান সাধারণ মানুষ। কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত না করেই বলছি, বর্তমানে মা গঙ্গাকে বাঁচাতে এর আরাধনা করার পাশাপাশি গঙ্গাকে বাঁচানোও সাধারণ মানুষের কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। গঙ্গাকে দূষিত হওয়ার হাত থেকে আমরাই শুধুমাত্র বাঁচাতে পারি।