প্রাকৃতিক বায়োলজিক্যাল উপায়ে যে সমস্ত স্বামী-স্ত্রী সন্তান এর জন্ম দিতে অপারগ আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি তাদের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ এক নতুন উদ্ভাবন বিশ্বের সামনে নিয়ে এসেছে। আইভিএফ বা ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন পদ্ধতি সেইসব মায়েদের কোল আলো করবে যারা স্বভাবিক ভাবে প্রসবে অক্ষম। এটি হলো একটি রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি যা প্রযুক্তিগত জনন ক্রিয়া সম্পন্ন করে।
আমেরিকা প্রেগনেন্সি এসোসিয়েশনের মতে, শিশু জন্মানোর হার ৩৫ বছরের নীচে মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪১-৪৩% হয়েছে। এই পদ্ধতিতে বিশেষ উপায়ে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে নিষিক্ত করে তাকে ভ্রূণজাত করা হয়। তারপর সেই ভ্রূণকে স্ত্রীর গর্ভের জরায়ুতে স্থানান্তরিত করা হয়।
কারা সাহায্য নিতে পারেন এই আইভিএফ এর?
- এই প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক আপনাদের মনে যে ঠিক কিরকম কাপেলরা এটির সুবিধে কাজে লাগাতে পারবেন।
- যেসব মহিলাদের ফ্যালোপিয়ান নালীবদ্ধ বা রুদ্ধ। শুক্রাণু ডিম্বাণুর কাছে পৌঁছাতে পারছে না এরকম অবস্থায় রয়েছে।
- চল্লিশোর্ধ মহিলারা যাদের প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।
- যেসব মহিলাদের দেহগাত্রে ফাইব্রয়েড এর সমস্যা আছে।
- পুরুষসঙ্গীর স্পার্ম কাউন্ট কমে গিয়ে বন্ধ্যাত্ব তৈরী হলে।
- মহিলারা জেনেটিক সমস্যার কারণে গর্ভধারণ না করতে পারলে বা দুর্ঘটনার কারণে ফ্যালোপিয়ান টিউব বাদ দিতে হলে।
ধাপসমূহ:
- যারা এই প্রক্রিয়ায় যোগদান করতে চান তারা ডোনার বা স্বামীর স্পার্ম ও নিজের বা ডোনার এর জোগাড় করা ডিম্বাণুর সাহায্য নিতে পারেন।
- ঋতুচক্রের প্রথমদিন থেকে চিকিৎসা শুরু হয়ে যায় ও ইনজেকশন নিতে হয়।
ওভারির রিজার্ভ টেস্ট:
- ডাক্তাররা ওভারির রিজার্ভ টেস্ট করেন। ব্লাডটেস্ট ও ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করা হয়।
- তারপর আল্ট্রা সাউন্ড ফ্রিকোয়েন্সি পাঠিয়ে জরায়ুর অবস্থা যাচাই করা হয়। পুরুষদের স্পার্ম নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
স্টিমুলেশন ফেজ:
- মহিলাদের ডিম্বাশয়ে প্রতি ঋতুচক্রে সাধারণত একটি ডিমই উৎপন্ন হয়। এইসময় রোগিনীকে দশ দিনের বেশি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
- যাতে ডিম্বাণুর সংখ্যা বাড়ানো যায়। ডিম্বাণুকে স্টিমুলেট করা হয় থাইরয়েড হরমোন ও লিউটেনাইজিং হরমোনের দ্বারা।
- ডিম্বাণুকে নিষেকের জন্য প্রস্তুত করার জন্য পরবর্তীকালে ট্রিগার ইনজেকশন দেয়া হয়। পুরো ব্যাপারটি ডাক্তারী নির্দেশনা ও মনিটরিং এর উপর নির্ভর করে হয়।
ডিম্বাণু সংগ্রহ ধাপ:
- এই পর্যায়ে ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয়। যেটা আগে থেকেই ঠিক করা থাকে কখন কিভাবে তা করা হবে।
- রোগীকে অজ্ঞান করে তার ডিম্বাশয় থেকে সূচের মাধ্যমে ডাক্তার জলীয় অংশ বার করে নেন যাতে ডিম্বাণু থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
- মোটামুটি পনেরোটি সর্বাধিক ডিম্বাণু একত্রে সংগ্রহ করা যায়। এক ঘন্টার মধ্যেই রোগী বাড়ি যাবার জন্য ফিট হয়ে যায়।
শুক্রাণু সংগ্রহের পর্যায়:
- পুরুষ সঙ্গীর কাছ থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয় এই ধাপে। একটা ডিস্কে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর নমুনা রাখা হয়।
- পরীক্ষা করা হয় কোনগুলির গুণমান ও সতেজতা বেশি। সেগুলোই নির্বাচন করা হয় ফার্টিলাইজেশন এর জন্য।
এমব্রায়ো পর্যায়:
- এই ধাপে ল্যাবে বিশেষজ্ঞরা শুক্রাণু ও ডিম্বাণু মিক্স করে মিলন ঘটায়। ভ্রূণ সৃষ্টি হলে পর্যবেক্ষণে রাখা হয় একটি গরম ইনকিউবেটর এ যাতে ভ্রূণ সুস্থ থাকে।
- জেনেটিক নানা পরীক্ষা করা হয়। মাতৃগর্ভের মতোই পরিবেশ ওখানে সৃষ্টি করা হয়ে থাকে। ৬-৭দিন মতো সময় দেয়া হয়।
ট্রান্সফার পর্যায়:
- যদি ভ্রূণের বৃদ্ধি স্বাভাবিক হয় তবে তা মায়ের জরায়ুতে স্থাপন করা হয়। কয়েক মিনিটের মাথায় এই প্রক্রিয়া ক্যাথেটার দিয়ে টিউবের মাধ্যমে জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়।
- ৩-৫দিনের মধ্যেই নিষেক ঘটে যায়।
- মহিলা গর্ভবতী হয়েছেন কিনা তা জানার জন্য রক্তপরীক্ষা ও হরমোনের পরীক্ষা করা হয়। যদি সব রিপোর্ট নর্মাল আসে তবে প্রক্রিয়া সফল হয়েছে বলে গণ্য করা হয়।
সতর্কতা:
- এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত নয় তাই যারা ইচ্ছুক সব দিক ভেবেই এই দিকে অগ্রসর হবেন।
- একাধিক ডিম্বাণু শরীরে এলে যমজ বা তার বেশি বাচ্চা জন্ম নিতে পারে ফলে মায়ের জীবন সঙ্কট হতে পারে।
- মিস্ক্যারেজের বা বাচ্চা অকালজাত হবার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়।
- ডিমের অবস্থান জরায়ুর বাইরে হতে পারে প্রতিস্থাপনের সমস্যা দেখা দিলে।
- হরমোনাল সমস্যা, সংক্রমণ, ব্লাড লস বা ব্লাডার ড্যামেজ এর সম্ভাবনা ও পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায়না এই প্রক্রিয়াতে।