Most-Popular

সফল বৈবাহিক জীবনের ক্ষেত্রে আদর্শ বয়েসের তফাৎ কত! গবেষণা কি বলছে?

একবছর আগে ঘটে যাওয়া প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও নিক জোনাস এর বিয়ে নিয়ে সবথেকে চর্চার কেন্দ্রে যা ছিল তাদের বয়সের পার্থক্য। যা প্রায় ১০ বছর। সমাজে এরকম বিয়ে যে উদাহরণ সেট করে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সে কোন প্রাগৈতিহাসিক যুগে দাদুর বয়সী পাত্রদের সাথে বাল্যবিবাহের চল ছিল।

সেখান থেকে বাবা-মা এর পছন্দ করা পাত্র থেকে আজকের জেন-ওয়াই এর লিভ ইন ও টিন্ডারে ডেটিং তারপর বিয়ের পিঁড়ি – আমরা সভ্যতার এক অভূতপূর্ব বিবর্তনের সাক্ষী থেকেছি। তো চলুন একটা সদুত্তর খোঁজার চেষ্টা করি যে বিয়ের জন্য উপযুক্ত বয়স ঠিক কিরকম হবে।

আন্তর্জাতিক স্তরে বিয়ের জন্য ন্যূনতম ১৮ বছর বয়সেই মান্যতা দেওয়া হয়ে থাকে।

যে প্রশ্নগুলো নিজেদের করবেনই করবেন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে

  • দেখুন বিয়ে ব্যাপারটা আর যাইহোক ছেলেখেলা তো নয় তাই নিজের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবার আগে বয়স অনুপাতে এই প্রশ্ন গুলো নিজেকে করে দেখুন হয়তো তাতে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারে।
  • বন্ধুদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে টপাটপ তাই কি এই ডিসিশন?
  • আত্মীয়স্বজন, পাড়া- প্রতিবেশী ও বাড়ির লোকজনের প্রশ্নবানে ঘায়েল হয়ে অসহায় বোধ করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন নাতো?
  • নিঃসঙ্গতা কাটানোর বিকল্প উপায় খুঁজছেন?
  • ছোট ভাইবোনের বিয়ের সময় হয়ে গেছে?
  • প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকাকে একটা মোক্ষম জবাব দিয়ে নিজে কতটা খুশি আছেন সেটা দেখিয়ে দেবার মরিয়া প্রচেষ্টা করছেন নাতো?
  • শেষ বয়সের ভরসার ঠিকানা পাবেন বলে?
  • বংশবৃদ্ধি ও উত্তরাধিকারী বেছে নেবার পথ বাতলাতে?
  • এগুলোর উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তবে আপনি মোটেই বিয়ের জন্য রেডি নন।

বিবাহ-বিচ্ছেদ কি বিয়ের বয়সের উপর নির্ভরশীল?

  • অপরিপূর্ণ মানসিক বোঝাপড়া ও মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনে বিবাহ বিচ্ছেদের সম্ভাবনা সমূহ বেড়ে যায় কিন্তু বেশি বয়সে বিয়ে করলেও সেই সম্ভাবনা বাড়ে সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে।
  • আমেরিকার গবেষণা বলছে ৩২ বছর বয়সের পর বিয়ে হলে প্রত্যেক বছর ৫% হারে বিয়ে ভেঙে যাবার ঝুঁকি বাড়ছে। মূলত ৩০ এর কোঠাকেই ডেঞ্জার এলার্ট বলছেন আমেরিকার উতাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা।
  • ভারতে যদি পরিসংখ্যান দেখা যায় তবে ২০১১ এর সেনসাসে ২০-২৫ বছরের মধ্যে বিবাহ এর মধ্যে ডিভোর্স এর সবচেয়ে কম হার থাকে। ২৬-৩৯ বছরের মধ্যে সেই হার সর্বোচ্চ হয়।

বিয়ের আদর্শ নিরাপদ গন্ডী:

  • বিয়ে নিয়ে প্রশ্ন হলে বেশিরভাগ জনেরই একটা এড়িয়ে যাবার প্রবণতা থাকে নাহলে একটু চারপাশটা গোছাই বা এখনো বয়স হয়নি বা মা-বাবার উপর ছেড়ে দিয়েছি টাইপের উত্তর দিয়ে পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা থাকে।
  • গবেষক উল্ফিঙ্গার এর মতে ২০ এর শেষকালে বিয়ে ভাঙার শঙ্কা কমতে থাকে কিন্তু সেই আতঙ্ক আবার ফিরে আসে ৪০ এর কাছাকাছি সময়ে। তাই ২৮-৩২ এর মধ্যেই জীবনে পরিনতিবোধ শিখরে থাকে।
  • সিদ্ধান্তগ্রহন ক্ষমতা বাড়ে ও কর্মজীবনেও আসে স্থিতিশীলতা। অভিভাবক হবার মাইন্ডসেট ও সন্তানপালনের দক্ষতা ও এই সময়ে অর্জিত হয়।
  • তবে বিয়ে করার আগে নিজেদের মধ্যে ম্যাচুরিটি, সংসারজীবনের কর্তব্যপালনে প্রস্তুত কিনা বা অর্থনৈতিক দিক এসব নিয়েও স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার।
  • বয়ঃসন্ধির পরই শরীর বিয়ের জন্য তৈরি হয়ে যায় কিন্তু বিয়ের জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে অনেকটা সময় লেগেই যায়।

বিয়ের জন্য বয়সের তুলনা:

২১-২৫বছর
সুবিধা: সুস্থ সন্তানধারণ ক্ষমতা, স্থিতিশীলতা, জীবনিশক্তিতে ভরপুর ও সন্তানদের সময় দেয়া যায়।
অসুবিধা: মানসিক অপটুতা, অর্থনৈতিক অস্থিরতা, সীমিত কেরিয়ার চয়েস, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হ্রাস।

২৬-৩০ বছর
সুবিধা: হেলদি সন্তান, নিজের লক্ষ্য পূরণের জন্য উপযুক্ত সময়ের সুযোগ, আর্থিক সক্ষমতা।
অসুবিধা: মানসিক বিকাশে সমস্যা, আগ্রহ কমে যাওয়া ইত্যাদি।

৩১-৩৫ বছর
সুবিধা: ফিনান্সিয়াল স্টেবিলিটি, ম্যাচুরিটি বোধ ইত্যাদি।
অসুবিধা: জেদি স্বভাব, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস, শ্বশুরবাড়ীর লোকজনের সাথে বনিবনার অভাব।

৩৬+ বছর
সুবিধা: রিলেশনশিপ গোল গুলো নির্দিষ্ট করে নেওয়া, ট্রাডিশনাল অভিব্যক্তি জীবন নিয়ে ও আর্থিক স্বচ্ছলতা।
অসুবিধা: বাচ্চা মানুষ করার সময় কম থাকে, একগুঁয়ে হতে পারেন সঙ্গী এবং মতামত নিয়ে অশান্তি তৈরি হবার সম্ভাবনা থাকে।

যে যে বিষয় নিয়ে বিবেচনা করবেন:

  • ভারতীয় আইন অনুযায়ী ১৮ বছর বয়স মেয়েদের ও ২১ বছর বয়স ছেলেদের হলেই তারা উপযুক্ত বিয়ের জন্য। কিন্তু তাতে মানসিক পরিপক্কতা আসে একথা বলা যায়না।
  • ডাক্তারদের মতে মেয়েদের পেলভিক অঞ্চল ১৮ এর আগে পরিণতি লাভ করে না। অর্থাৎ ওভারি, জরায়ু ইত্যাদি সঠিকভাবে গঠিত হয় না। ছেলেদের ক্ষেত্রেও তাই।
  • ভারতীয় সমাজে পারিবারিক ঐতিহ্য ও সনাতনপন্থী চিন্তাধারা পোষিত হয় বিয়ে নিয়ে। তাই দম্পতিদের সেটা আগে মাথায় রাখতে হবে।
  • পরিসংখ্যান বলছে ৪ বছর বা তার কম গ্যাপ থাকলে কাপলদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও স্ট্রাগল ইত্যাদি সামলানোর ক্ষমতা বেশি হয়।
  • বিয়ের আগে প্রি ম্যারেজ কাউন্সেলিং মাস্ট।

সবশেষে একটাই কথা বলার প্রয়োজন মনে হল, যে, বিয়ে সম্পূর্ণ নিজের ব্যাপার। তবে তা খেলা নয়! দুটি জীবন নির্ভর করে তাতে। তাই সব দিক দেখে শুনে নিজের মন মাথা খাটিয়ে তবেই তা করা শ্রেয়। তাতে বয়সের ডিফারেন্স হোক কি বুড়ো বয়েসে বিয়ের সিদ্ধান্ত কোনটাতেই তেমন বেশি তফাৎ নেই।

Biswarup Parichha

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

3 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

3 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

3 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

3 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

3 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

3 বছর ago