ম্যাগাজিন, ফেসবুক ও পত্র পত্রিকায় ফেস সিরাম কথাটা খুবই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে এবং ত্বকের যত্নেও তার ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সেটা ঠিক কি জিনিস সেটাই মাথায় ঢোকা দুস্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
তাই না? চিন্তা করবেন না এই বিভ্রান্তি কেবল আপনার একার নয়। অনেকেই হেয়ার সিরাম নিয়ে ধারণা রাখলেও ফেস সিরাম ও তার ব্যবহার নিয়ে কনফিউজড।
ফেস সিরাম কি?
- ফেস সিরাম হলো বেসিক্যালি একটি উচ্চ ঘনত্ববিশিষ্ট শক্তিশালী উপাদান যা খুব কম সময়ে ত্বকের গভীরে পৌঁছয়।
- এটির মলিকিউলস ফর্মুলা ত্বকের বিশেষ বিশেষ সমস্যা গুলিকে চিহ্নিত করে তার কার্যকরী সুরাহা প্রদান করে।
- ত্বকের বলিরেখা, দাগ ছোপ, স্কিন টোন ও টেক্সচার এর মত দিকগুলিকে টার্গেট করে সমাধান করে।
ক্রিম আর সিরাম কি আলাদা?
- দেখুন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে এইসব স্কিনকেয়ার ট্রিটমেন্ট তো ক্রিম দিয়েও সম্ভব। তার জন্য সিরাম এর আলাদা করে প্রয়োজনীয়তা টা ঠিক কোথায়?
- কিন্তু সিরাম স্পেশালি বানানো হয় ভিন্ন ভিন্ন ত্বকের চাহিদার উপর ভিত্তি করে, তার স্পেসিফিক বিপর্যয় এর জায়গাগুলো নিশানা করে।
- একটা যেকোনো ক্রিমে ময়েশ্চারাইজিং উপাদান থাকেই থাকে যেটা ত্বকের উপরে জলীয় আবরণ সৃষ্টি করে তার ময়েশ্চার লক করে কিন্তু ড্রাই ও রাফ স্কিনের জন্য বানানো সিরাম স্কিনের কোষগুলিকে এমনভাবে উদ্দীপ্ত করে যে তারা নিজেরাই আর্দ্রতার ভারসাম্য রক্ষা করতে সমর্থ হয়।
- তাই এটা পরিষ্কার যে সিরামের বিকল্প ক্রিম হতে পারেনা।
সিরামের উপকারিতা:
- ফেস সিরাম ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে তোলে বহুগুণে।
- স্কিনের টোনে নিখার আনে এবং ঝকঝকে ভাব বৃদ্ধি করে।
- ত্বকের এপিডার্মিস লেভেলে গিয়ে পুষ্টি যোগায়।
- বয়সের ছাপ পড়তে দেয় না সহজে এবং তারুণ্য ফিরিয়ে আনে।
- স্কিনের কোচকানো ও কুঁকড়ে যাওয়া রোধ করে
- ডার্ক সার্কেল ও ছোপের দাগ নিমেষে দূর করে দেয়।
সিরাম এর বিভিন্ন প্রকার:
সিরামের নানা প্রকার রয়েছে স্কিনের রকমফের অনুযায়ী। শুষ্ক, অয়েলি, সেন্সিটিভ স্কিন অনুযায়ী আলাদা আলাদা সিরাম পাওয়া যায়। তাছাড়া ত্বকের নানা সমস্যা অনুযায়ীও সিরামের রকমফের দেখা যায়।
শুষ্ক ত্বকের জন্য বেস্ট সিরামের সন্ধান।
এডভান্স হোয়াইটেনিং সিরাম:
- এটির মূল উপাদান হলো – আলফা অর্বুটিন, আলোজয়েইক এসিড, ভিটামিন সি, টেট্রা পেপটাইড।
- এগুলো ত্বকের ব্রণ হবার সম্ভাবনা নির্মূল করে ও স্কিন রিপেয়ার এর দশার সময় নিয়ন্ত্রণ করে।
- আপনাকে জেল্লাদার ও মখমলে ত্বক উপহার দেয়।
ভিটামিন সি সিরাম:
- এটির মুখ্য উপাদান হলো – হ্যালুরণিক এসিড, ভিটামিন সি ও এলোভেরা।
- এই সিরাম এন্টিঅক্সিডেন্ট ভরপুর যা রোদ, ধুলোবালি ও দূষণের করাল ছায়া থেকে আপনার স্কিনকে বাঁচাবে।
- ত্বকের নর্মাল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে। ত্বকের সফ্টনেস ও মসৃণতা বাড়ায়।
- অসম স্কিন টেক্সচার ও সান ট্যানিং রিমুভ করে।
রেটিনল সিরাম:
- ভিটামিন ই, ইউরোপা ফ্রুট, পিউনিকা গ্র্যাটানাম ফ্রুট, এডানসোনিয়া ডিজিট্যাট ইত্যাদি থাকে এতে।
- এটি পিম্পল নাশক ও মুখের অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ আটকায়।
- কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে যাতে ত্বকের গঠন সামঞ্জস্য বেড়ে যায়।
- ত্বক থেকে ফ্রি রাডিক্যাল মুক্ত করে দেয় যাতে তার লাবণ্য বেড়ে যায়।
পেপটাইড স্মুথ সিরাম:
- এটির মূল উপাদান – পেপটাইড, হ্যালুরণিক এসিড ও লুমিনেসাইন।
- এটি অত্যন্ত এন্টি এজিং তাই একটু বয়স্ক মহিলারা বলিরেখা দূর করতে এটির ব্যবহার করতে পারেন।
- স্কিনের পোরস মিনিমাইজ করে ও ফাইন লাইন্স সরিয়ে দেয়।
- পাশাপাশি স্কিনের এক্সফোলিয়েশন ঘটিয়ে তার আর্দ্রতার দিকটিরও সযত্নে খেয়াল রাখে।
কিভাবে সিরাম লাগাবেন?
- সিরাম লাগানোর সময় সেরকম কিছু নেই কিন্তু লাগানোর আগে মুখটা ভালো করে ফেস ওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নেবেন।
- তারপর পছন্দের স্কিন টোনার লাগান মুখের উপর আলতো ভাবে।
- সেটা শুকলে সিরাম ২-৩ ফোঁটার মতো নিয়ে গোটা মুখে লাগিয়ে সেটা উবে যেতে দিন ওর মধ্যেই সিরাম ত্বকের গভীরে গিয়ে তার কাজ শুরু করে দেবে।
- অনেকে ক্রিমের মতো অনেকটা হাতে নিয়ে মাখেন কিন্তু তাতে লাভ বেশি নেই। এটি অল্পেই কাজ দেয় ভালো।
- ত্বকের সজীবতা নিশ্চিত করতে দিনে দুবার যোগ করুন নিজের বিউটি রুটিনে।
যে যে জিনিস দেখে নেবেন কেনার আগে:
- আপনার বয়সের দিকটা দেখে নেবেন। যাদের জেদি ডার্ক স্পট বা এজিং জাতীয় সমস্যা রয়েছে তারাই ভেবে দেখুন। টিনেজারদের এগুলো খুব একটা কার্যকর হবে না।
- এগুলো প্রিমিয়াম প্রোডাক্ট তাই দাম বেশি হয় তাই বাজেট এর খরচ মিলিয়ে করবেন।
- ডার্ক প্যাচ ও নাছোড় রিঙ্কেল এর ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে দেখতে পারেন।
- জেল না এমলসান কি জাতীয় ফর্মে আপনি কম্ফোর্টেবল সেটা বিচার করে নেবেন।
- প্যাকেজিং ও ভিটামিন এ সি ই, রিসভেরাট্রল, নিয়াসিনামাইড ও মেলাটোনিন এর মত আবশ্যকীয় উপাদানগুলোর সঠিক ব্যালেন্স ও পরিমাণ চেক করে কিনবেন।