স্বাস্থ্য

শরীরের কোন ক্ষতি না করে এক সপ্তাহে ওজন কমান ৫ কিলো

হুট করে শরীরের ওজন কখনোই বাড়ে না। বহুদিনের অনিয়মিত এবং ভুল খাদ্যাভ্যাস ওজন বাড়ার জন্য দায়ী। দ্রুত এবং সহজে ওজন কমানোর জন্য অনেকেই খাওয়াদাওয়া বন্ধ করে দেন। যা শরীরের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।

আসন্ন কোন অনুষ্ঠান বা দাওয়াত থাকলে ওজন কমানোর হিড়িক পড়ে যায়। কিন্তু অল্পদিনে মনের মতো শেইপ পাওয়াও মুশকিল। কিভাবে শরীরের কোন ক্ষতি না করে এক সপ্তাহে ওজন কমাবেন ৫ কিলো? জানতে চাইলে ঝটপট পড়ে ফেলুন এই লেখাটি।

প্রথম দিন

প্রথম দিনের খাদ্য তালিকায় শুধু ফল ছাড়া কিছু থাকবেনা। সারাদিন শুধু ফল খাবেন, সিদ্ধ সবজি বা অন্য কোন খাবার একদম খাবেন না৷ কলা বাদে যেকোন পছন্দসই ফল তালিকায় রাখুন। রসালো ফল যেমন তরমুজ, জামরুল, বাঙ্গি ইত্যাদি খেতে পারেন। এতে সারাদিন শরীর ঠান্ডা থাকবে, হাইড্রেটেড থাকবে, আবার পেটও ভরা থাকবে। ফলের পাশাপাশি সারাদিনে ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি খাবেন।

দ্বিতীয় দিন

দ্বিতীয় দিন শুধু সবজি খাওয়ার পালা। সবজি দিবসে যেকোন সবজি সিদ্ধ বা রান্না করে খাবেন। ডায়েট প্ল্যানে সিদ্ধ সবজি রান্না করা সবজির চাইতে বেশি উপকারী। রান্না করতে চাইলে হালকা তেলে রান্না করবেন। এইদিন আলু না খাওয়াই ভালো। যদি খেতেই হয় তাহলে সকালে সিদ্ধ আলু খাবেন। তাতে সারাদিনের জন্য কার্বোহাইড্রেটের যোগান হয়ে যাবে। আর অন্যান্য সবজির মধ্যে গাজর, ব্রোকলি, বাঁধাকপি, শসা সিদ্ধ এবং সাথে ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি।

তৃতীয় দিন

তৃতীয় দিনে ফল ও সবজি যৌথভাবে খেতে হবে। এবং অবশ্যই তালিকা থেকে আলু এবং কলা বাদ দিবেন। কলায় থাকা প্রচুর ক্যালরি আর আলুর শর্করা ওজন বাড়িয়ে দেয় বলে এই দুটো বাদ দিতে হবে। যেকোন ফল এবং সবজির সাথে পর্যাপ্ত পানি পানের মাধ্যমে সারাদিন কাটাবেন। সকালে শুধু ফল, দুপুরে শুধু সবজি, আবার বিকালে ফল, এবং রাতে ফল ও সবজি একসাথে খাবেন।

চতুর্থ দিন

তিনদিনে অনেকটা প্রোটিন আর ক্যালরি কমানোর পরে চতুর্থদিন কিছুটা পুষিয়ে নিবেন। এইদিন আপনার সারাদিনের তালিকায় থাকবে কলা ও দুধ। সকালে খাবেন ১টি কলা আর ১ গ্লাস দুধ। দুপুরে থাকবে ১ গ্লাস দুধের সাথে ২টি কলা। বিকালে শুধু কলা খাবেন ৩টি। রাতে ২টি কলার সাথে ১ গ্লাস দুধ খেয়ে নিবেন। আর সারাদিনে পানি খাবেন নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুযায়ী।

পঞ্চম দিন

পঞ্চম দিনে ভাত খেতে পারবেন তবে সামান্য। এই দিনের তালিকায় থাকবে ১ কাপ ভাত আর টমেটো। সকালে আর রাতে ভাত খাবেন না, শুধু দুপুরে খাবেন। আর সারাদিনে মোট ৬ থেকে ৭টা টমেটো খাবেন। তবে পঞ্চম দিনে পানির পরিমাণ বাড়বে। ৮-১২ গ্লাসের পরিবর্তে ১৩-১৫ গ্লাস পানি পান করবেন সারাদিনে।

ষষ্ঠ দিন

শুধু দুপুরে ১ কাপ ভাত আর সারাদিন সবজি খেতে হবে ষষ্ঠ দিনে। পানি খাবেন সারাদিনে ৮ থেকে ১০ গ্লাস। ষষ্ঠ দিনে শরীর বেশ অনেকটা হালকা মনে হবে। বিশ্বাস না হলে নিজেই মেপে দেখুন না!

সপ্তম দিন

আপনি সফলভাবে ডায়েট প্ল্যানের শেষ দিনে চলে এসেছেন। এইদিন সকালে ফলের রস ও সিদ্ধ সবজি, দুপুরে ১ কাপ ভাত, বিকালে ও রাতে সবজি খাবেন। চাইলে একটা ফলের অর্ধেকটা রাখতে পারেন রাতের খাবারে। সাথে পর্যাপ্ত পানি তো থাকছেই।
এক সপ্তাহের এই ক্র্যাশ ডায়েট কোর্সে শরীরের বাড়তি ওজন কমে যাবে অনেকটাই। কম করে হলেও ৫ কেজি তো কমবেই। শুধু ওজন ঝরবে না, খেয়াল করলে দেখবেন আপনার চেহারায় ও শরীরে জেল্লা ফিরে এসেছে। অধিক পরিমাণে ফল, সবজি, এবং পানি খাওয়ার কারণে এমনটা সম্ভব হয়েছে।

সহজে ওজন কমানোর জন্য আরো কিছু টিপস

  • চিনি, অতিরিক্ত ক্যালরীযুক্ত খাবার, হাই প্রোটিন, ফ্যাট শরীরের ওজন দ্রুত বাড়িয়ে ফেলে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা থেকে এই জাতীয় খাবার ৬০ শতাংশ কমিয়ে ফেলুন। ব্যালেন্স করে খেতে পারেন, যেমন একবেলায় ১টি প্রোটিনযুক্ত খাবার, আরেকবেলায় ১টি শর্করার আইটেম, পরেরবেলায় ফ্যাটের ১টি আইটেম এভাবে। এই পদ্ধতিতে চললে শরীর পুষ্টি পাবে আবার ওজনও বাড়বেনা।
  • রাতের খাবারে ভিটামিন ও মিনারেল জাতীয় খাবার বেশি করে খাবেন। সহজ করে বলতে গেলে, ফুলকপি, টমেটো, শসা, গাজর, বাঁধাকপি, লেটুসপাতা ইত্যাদি প্লেট ভর্তি করে খাবেন। এগুলো প্রচুর পরিমাণে খেলে ওজনও বাড়ে না খিদেও বেশি লাগে না। তাছাড়া এগুলো সহজে হজম হয় আর রাতের ঘুমটাও ভালো হয়।
  • ৩ বেলা পেট ঠেসে না খেয়ে সারাদিনে ৫-৬ বার খান। যখনই খিদে পাবে তখনই একটা ফল বা একটু সবজি খান। একটু একটু করে খেলে সারাদিনে পেট ভরা থাকবে, বেশি খাওয়ার তাগিদ কমবে।
  • শরীরের বাড়তি মেদ কমানোর জন্য পানি আর ব্যায়াম অপরিহার্য। প্রচুর পরিমাণে পানি পান জমে থাকা চর্বি এবং দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। সকালে হালকা গরম পানি খেতে পারেন ভালো ফলাফলের জন্য। আর প্রচুর ঘাম হয় এমন কাজগুলো করুন। যেমন দৌড়, সাইক্লিং, দড়িলাফ ইত্যাদি। হুট করে একদিনে অতিরিক্ত জিম বা ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন।
  • খাওয়ার সময় টিভি দেখবেন না, এতে নিজের অজান্তে বেশি খাওয়া বন্ধ হবে। সবসময় ছোট প্লেটে খাবেন। প্লেটে উঁচু করে খাবার ভরবেন না। ফোনে কথা বলার সময়ে হাঁটুন, এতেও কিছুটা এক্সারসাইজ হবে। আর বোতলজাত কোমল পানীয় পুরোদমে এড়িয়ে যান।
আফরোজ হেলাল

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago