Personal Care

ছেলেদের সাপ্তাহিক স্কিন কেয়ার রুটিন

সময়ের সাথে দ্রুত গতিতে বদলে যাচ্ছে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা। সেটা কিন্তু আর সেকেলে ধারনামতো নারী কেন্দ্রিক নেই। ছেলেদের বিউটি চর্চা আবার লাগে নাকি এই বলেই অধিকাংশ যদিও দায় সারেন। তাদের বলা ভালো, সৌন্দর্য সুস্বাস্থ্যবিধির একটা অংশ তো বটেই পাশাপাশি নিজের মুখশ্রী, হাইজিন ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর একটা মাধ্যমও।

অবহেলা ও ব্যস্ততা এই জোড়া ফলায় উপেক্ষিতই থেকে যায় ছেলেদের ত্বক। আমরা জানি সাফল্যের শর্টকার্ট হয়না, তাই প্রতিদিন অল্প অল্প করে নিয়ম মেনে রুটিন ফলো করলে ত্বকের পরিচর্যার পথ সুগম হয়ে ওঠে। আজকের প্রতিবেদনে থাকছে তারই হালহদিশ।

মেন স্পেশাল টিপস:

ছেলেদের স্কিন মেয়েদের মতো নয় মোটেই, তার চরিত্র অনুযায়ী যত্ন নেয়াটা তাই আবশ্যক হয়ে পড়ে। সেই প্রস্তুতিতে ফাঁক থেকে গেলে চলবে না। ছেলেদের স্কিন রোমশ হয় তাই দাড়ি কাটার সময় সজাগ থাকা একান্তই দরকার। নতুন ব্লেড ও ক্লিন কাঁচির ব্যবহার যাতে হয় সেটা লক্ষ রাখুন।

দাড়ি কাটার আগে ঠান্ডা জলে বেশ কিছুক্ষণ মুখ ধুয়ে নিন,এতে দাড়ি নরম হবে ফলে কাটার সময় সুবিধে হবে। ব্রণের সমস্যা থাকলে শেভিং সতর্ক ভাবে করুন, কারণ না হলে ব্রণ এ আঘাত লাগে দাগ ছোপ হবার সম্ভাবনা প্রবল হয়।

দাড়ির উল্টোদিকে শেভ করবেন না, এতে ত্বক কেটে ছড়ে যাবার বিপুল শঙ্কা থাকে।
পুরুষদের ঘাম হয় বেশি, তাই চেষ্টা করুন ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরার। শরীরে লোমের পরিমান যেহেতু বেশি তাই শুকনো রাখা দরকার নাহলে ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাল আক্রমন হতে পারে।

চুলে বেশি তেল দেবেন না। হেয়ার ড্রেসিং এ জেল ইউজ করলেও সেটা যেন ব্র্যান্ডেড কোম্পানির হয় সেটা খেয়াল রাখবেন।

দিনশুরুর রোজনামচা:

দিনের শুরুতে কিভাবে নিজের ত্বকের যত্ন নেবেন এই নিয়ে অনেকের কনফিউজন রয়েছে। যদিও আদপে ব্যাপারটা খুবই সহজ। দিনের শুরুটাই নির্ধারণ করে দেয় আপনার ত্বক দিনজুড়ে কেমন আচরণ করবে।

যেহেতু ছেলেদের সারাদিন ধকলের মধ্যে কাটে তাই তাদের ঘাম দেবার সম্ভাবনা ও বেশি। সেই জন্য সকালে উঠে গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এতে করে আপনার মুখের পোরস বড় হবে উষ্ণতার জন্য।

এরপর মুখে ফেস ওয়াশ মেখে নিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।এতে করে ফেসওয়াশ ত্বকের গভীরে গিয়ে কাজ করতে পারবে।

কেটিএম বুস্টার:

কেটিএম শব্দটির সাথে হয়তো ছেলেরা পরিচিতই নন। তবে ক্লিঞ্জার, টোনার ও ময়েশ্চারাইজার যে যেকোনো ত্বকের সঞ্জীবনী সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
ক্লিঞ্জিং পুরুষ ত্বকের বড় পোরস, তৈলগ্রন্থি ইত্যাদি থেকে ধুলো,ময়লা ও বাড়তি তেল নিকেশ করে দেয়।

এরপর মেনসদের জন্য স্পেশালাইজড কোনো টোনার ব্যবহার করুন যেটা আস্ট্রিনজেন সমৃদ্ধ হবে। লাগানোর সময় তুলো ব্যবহার মাস্ট। গোলাপ জল টোনার হিসেবে বেস্ট। কোষ উজ্জীবিত করে,কুঁচকে যাওয়া রোধ করে।

এরপর শেষ পর্যায়ে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পালা। চেষ্টা করুন লোশন ফর্মে লাগানোর কারণ সেটা ত্বকে দ্রুত শোষিত হবে। চাইলে ভেষজ ময়েশ্চারাইজার হিসেবে মধু ও শসার রস লাগাতে পারেন ও ১৫মিনিট পর ধুয়ে ফেলবেন।হাইড্রেসন এর জন্য এটা দারুন অপশন।

সানস্ক্রিনের ঢাল:

মেয়েদের ত্বকের মতোই পুরুষদের ত্বক ও সূর্যরশ্মির ইউভি রে ও রোদে পোড়া দাগ থেকে সমানভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। তাই অফিসে বেরনোর আগে হোক বা বাজারে যাবার আগে সানস্ক্রিন এর ঢাল নিয়েই বেরোন।

জেলযুক্ত ম্যাট সানস্ক্রিন ছেলেদের জন্য উপযুক্ত। এসপিএফ এর মাত্রা যেন ৩০ এর বেশি থাকে সেটা দেখে কিনবেন ও জিঙ্কের পরিমাণ যেন থাকে পরিমিত।

শেষবেলার রুটিন:

রাতে কাজ শেষে ঘুমোতে যাওয়া যেমন আমাদের শরীরকে পরের দিনের জন্য এনার্জি দেয় স্কিনের ক্ষেত্রেও সেই ক্ষমতা খাটে। রাত হলো ত্বকের কর্মক্ষমতা ফিরে পাওয়ার সময় তাই এইসময় তাকে একলা ছাড়বেন না যেন।

ঘুমোতে যাবার আগে মুখে বিশেষত চোখের নিচে নাইট ক্রিম মাস্ট লাগিয়ে ঘুমোতে যাবেন। রেটিনল ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ক্রিম এর জন্য বেস্ট। এটা ত্বককে রিভাইভ করবে।

সবদিন একই ফর্মুলা ব্যবহার করবেন না। একটু বৈচিত্র্য রাখুন। শোবার আগে সপ্তাহে অন্তত ২দিন মুখে বরফ এর কিউব নিয়ে ঘষে নেবেন। এতে ত্বকে রক্তচলাচল বাড়বে আর ত্বক ও নিরাময়ের সুযোগ পাবে।

খুচরো নজরদারি:

মুখে জলের ঝাপটা বারবার দেবেন না মোটেই। পিগমেন্টেশন এর চান্স থাকে।
মুখে ব্ল্যাকহেডস হলে গরম জলে ভাপ নিতে পারেন। ক্ষারীয় সাবান দিয়ে মুখ ধোয়া চলবেনা।

এক্সফোলিয়েশন করালে সেটা যেন মাসে ২বার এর বেশি না হয়। স্ক্রাব ট্রাই করলে সেটা যেন ফ্রুট স্ক্রাব হয় বা গ্লিসারিন যুক্ত হয়। এটা ত্বকের কোমলতা,মসৃণতা ধরে রাখবে।দাড়ি রাখলে নিয়মিত শ্যাম্পু ও বিয়ার্ড অয়েল লাগান।

হাতে একদম সময় না থাকলে:

এমন অনেকেই আছেন যারা চটজলদি সমাধান খুঁজছেন তাদের বলি যদি একদমই সময় না পান তবে সপ্তাহে অন্তত একবার সানবার্ন ফেসিয়াল(ড্রাই স্কিন), এলোভেরা ও গোল্ড ফেসিয়াল(অয়েলি স্কিন) বা আয়ুর্বেদিক বা স্যান্ডেলউড ফেসিয়াল ট্রাই করতে পারেন স্কিন টোন অনুসারে।

সুষম খাদ্যের বিকল্প হয়না ভালো ত্বকের জন্য। তাই কার্ব, প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেলস এর ব্যালেন্স আনুন খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে। বাদাম, গ্রীন টি, ইসবগুল, স্যালাড, স্যুপ, অলিভ ইত্যাদি রাখুন। মশলা যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। আপনাদের তবে আর আলাদা করে ত্বক নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার পড়বেনা।

Biswarup Parichha

Recent Posts

মুখের রোমকূপ বা পোরস ঢাকার মেকাপ টিপস

আপনার মুখের রোমকূপ বা পোরসগুলি কি খুবই বড় বড়? আপনি টেকনিক্যালি এইসমস্ত পোর্স ছোট করতে…

2 বছর ago

থুঁতনির জেদি ব্ল্যাকহেডস তোলার ৬টি উপায়

পরিষ্কার নিটোল মুখ, অথচ থুঁতনিতে কালো কালো ব্ল্যাকহেডস! কেমন লাগে বলুন তো! সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে…

2 বছর ago

মেয়েরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জায় যে ১০টি জিনিস অজান্তেই করে

আগেকার দিনে বলা হত, লজ্জা নাকি নারীর ভূষণ। না, আজকের দিনে আমরা ওইসব কথা বলব…

2 বছর ago

ঘরের দেওয়ালে নোনা ধরছে? দূর করুন ঘরোয়া কৌশলে

বাড়ির দেয়ালে রকমারী রঙের ছ্বটা অনেকেরই সাধ ও শখের পরিচয় বহন করে। কিন্তু কিছু বছর…

2 বছর ago

ময়েশ্চারাইজার কেন এত উপকারি ত্বকের যত্ন নিতে? ব্যবহারের সঠিক নিয়ম।

ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত এই কথাটা আমরা সবাই জানি কম বেশি। কিন্তু কেন? কি উপকার…

2 বছর ago

নারকেল তেল দিয়ে ত্বকের যত্ন! উজ্জ্বল, চকচকে ত্বকের গোপন রহস্য!

প্রাচীনকালে যখন রূপচর্চার এত উপকরণ হাতের কাছে ছিল না, সেই সময় থেকেই রূপচর্চার অন্যতম উপকরণ…

2 বছর ago