আজ সারা বিশ্বকে কবজা করে নিয়েছে মারণ করোনা ভাইরাস। আজ ভারতবর্ষও এর কবলে পড়েছে। এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিশেষজ্ঞরা ভালো করে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেন। তবে অনেকে হাত ধোয়ার সঠিক পদ্ধতি জানেন না।
সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর তরফে বলা হয় হাত ধোয়ার অর্থ হল কমপক্ষে ২০ সেকেন্ডের জন্য সাবান এবং জলের সাহায্যে ভালো করে হাত রগড়ে ধোয়া।
২০১৩ সালে, জার্নাল অব এনভারনমেন্ট হেল্থ-এ প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায় একটি কলেজের ৩,৭৪৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে শুধুমাত্র ৫% লোক টয়লেট ব্যবহারের পরে ১৫ সেকেন্ডের জন্য হাত ধোয়। একই সঙ্গে ১০% মানুষ হাতই ধোয় না।
কীভাবে হাত ধোবেন
প্রথমে ভাল করে হাতের তালু ঘষুন।
এবার হাতের উপরের অংশ ঘষুন।
এরপর আঙুলের ভিতরের অংশ এবং নখের ভিতর ভাল করে পরিষ্কার করুন।
সর্বশেষে, আঙুলের মাঝখানের অংশ ভাল করে ঘষে পরিষ্কার করুন।
আসলে, আপনার হাতই কিন্তু লক্ষ লক্ষ জীবাণুর আশ্রয়স্থল। যার মধ্যে রয়েছে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসও। আর কোভিড-১৯-এর মতো ভাইরাস হাঁচি, কাশি, দরজার হাতল, ফোন এমনকি বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশার ফলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।
কলম্বিয়া স্কুল অফ নার্সিংয়ের এমেরিতা নার্সিং রিসার্চের প্রফেসর এলেন কলম্বিয়া স্কুল অফ নার্সিংয়ের এমেরিতা নার্সিং রিসার্চের প্রফেসর এলেন লারসন বলেছেন যে এই মুহূর্তে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও দরকার নেই। বলেছেন যে এই মুহূর্তে আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। বদলে আমাদের শুধু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত।
সাবানের ব্যবহার
কী করবেন
হাতে সাবান দেওয়ার আগে হাতে জল লাগান। এরপর হাতে সাবান নিয়ে ভালো করে ঘষে নিয়ে তারপর হাতে জমে থাকা জীবাণু জলের ধারা দিয়ে সাফ করুন। ড. লারসন বলেন হাতে পরে থাকা গয়নাও ভালো করে ধুয়ে নিন।
সাবান সারফ্যাকট্যান্ট হিসাবে কাজ করে। সাবানের মধ্যে রয়েছে এক বিশেষ উপাদান,যা জলের সঙ্গে মিশে জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে সাহায্য করে। তবে কলেজের ছাত্রদের ওপর একটি পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন কিন্তু সাবান ব্যবহার করে না, শুধু জল দিয়েই হাত ধোয়।
ড. লারসেন পরামর্শ দেন হাত ধোয়ার জন্য আধ চা-চামচ লিকুইড সাবান ব্যবহারের পরামর্শ দেয়। তবে বড় হাতের জন্য আর একটু বেশি পরিমাণে সাবান নিতে হবে। মনে রাখবেন সব লিকুইড সাবানই কিন্তু করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করে পারে।
কী করবেন না
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, অতিরিক্ত পরিমাণে সাবান ব্যবহারের ফলে ত্বকের স্বাভাবিক তৈলাক্তভাব কিন্তু নষ্ট হতে পারে। তাই সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিমাণটি নিশ্চিত করতে হবে।
হ্যান্ড ওয়াশ
কী করবেন
গবেষণায় দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ মানুষ মাত্র ৬ সেকেন্ডের জন্য হাত ধোয়। তবে হাত কিন্তু ২০ সেকেন্ড ধরে ধোয়া উচিত। এরজন্য ‘হ্যাপি বার্থডে’ গানটি দুবার গাইতে গাইতে হাত ধুন। ড. লারসান আবার কিন্তু বলেন, ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়াটা বড় কথা নয়, আসল হল ভালো করে হাত ধোয়া।
হাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল আঙুলের ওপরের অংশ, মাঝের অংশ এবং হাতের ওপরিভাগ এবং নখের ভেতরের অংশ। যাদের নখ বড় তাদের হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত।
কী করবেন না
হাত ধোয়ার সময় অতিরিক্ত চাপ দেবেন না বা ঘন ঘন ঘষবেন না। এর ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে গিয়ে ফেটে যেতে পারে এবং ত্বকের ফাটলে জীবাণু বাসা বাধে। এজন্য ড.লারসন হাত ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করার পরামর্শ দেন।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, জীবাণু দূর করার ক্ষেত্রে জলের তাপমাত্রা কোনও প্রভাব ফেলে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঠান্ডা জল বা ঈষদুষ্ণ জলে হাত ধোয়া ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত গরম জলে হাত ধুলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। হাত সর্বদা রানিং জলে ভালো করে ধুয়ে নিন এবং ত্বকে সাবান লেগে যে না থাকে, এজন্য হাত ভালো করে শুকিয়ে নেওয়া দরকার।
হাত পুরোপুরি শুকিয়ে নিন
কী করবেন
এবার হাত ভালো করে ধুয়ে নেওয়ার পালা। যদি হাত ভালো করে শুকনো না হয়, তবে অবশিষ্ট আর্দ্রতা ব্যকটেরিয়ার জন্ম দিতে পারে!
অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়।হাত ধোয়ার পর অটোমেটিক ব্লোয়ার এবং পেপার টাওয়েল দিয়ে শুকিয়ে নেওয়া য়েতে পারে।
কী করবেন না
তবে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয় হাত ধোয়ার পর কলের নব ছুঁলে তা থেকে সংক্রমণ হতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, জলের নব বন্ধ করার ক্ষেত্রে টিস্যু ব্যবহার করা উচিত।
অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার ব্যবহার
কী করবেন
জল ব্যবহার না করে হাত ধোয়ার সহজ উপায় হল স্যানিটাইজার ব্যবহার।স্যানিটাইজার অবশ্য সব ভাইরাস-জীবাণু তাড়াতে পারে না। তবে ৬০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজার কিন্তু করোনাভাইরাস দূর করতে পারে।
ভাইরাস দূর করার পাশাপাশি হ্যান্ড স্যানিটাইজার ত্বককে সুস্থ এবং ময়েশ্চারাইজড রাখতে সাহায্য করে। ড. লারসান বলেন, ভালো করে হাত পরিষ্কার করতে আধ চা-চামচ স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। হাতে স্যানিটাইজার লাগিয়ে ১০ সেকেন্ড ধরে হাতে শুকিয়ে নিন।
কী করবেন না
হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার সময়ে কখনওই তাড়াহুড়ো করবে না। আর আধ চা-চামচের কম স্যানিটাইজার ব্যবহার করবেন না।